১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

অবসরে যাচ্ছেন বহুগুণে গুণান্বিত এক আলোর মানুষ

আব্দুদ দাইয়ান :
  • আপডেট সময়ঃ ১১:২১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে।

“শিক্ষক মোরা, শিক্ষক—

মানুষের মোরা পরমাত্মীয়,
ধরনীর মোরা দীক্ষক।”

দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী, একজন সজ্জন, সৃষ্টিশীল ও সমাজ-মনস্ক আলোকিত মানুষ। ২০২৫ সালের ৩০ জুন—এই দিনটি তাঁর দীর্ঘ ৩৭ বছরের বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা জীবনের শেষ কার্যদিবস। দিনটি নিঃসন্দেহে তাঁর জন্য আনন্দ ও গর্বের, আবার একইসাথে বেদনারও, কারণ বিদ্যালয়ের সাথে আত্মিক সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে; প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হওয়ার অভ্যাসে আজ হচ্ছে শেষ রেখাপাত।

সত্যিকার অর্থে “A teacher is an arcitect of a nation ” অর্থাৎ একজন জাত শিক্ষক সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য সম্পদ। সেই দৃষ্টিতে আতাউর রহমান স্যার কেবল একজন প্রধান শিক্ষক নন—তিনি একজন দার্শনিক, একজন জাত নির্মাতা। শিক্ষকের সংজ্ঞা যে পাঠ্যপুস্তক পাঠদানের গণ্ডির বহু বাইরের এক বৃহৎ পরিসর—তা তিনি নিজেই ছিলেন জীবন্ত প্রমাণ। নেতৃত্ব, সততা, নৈতিকতা ও সমাজ সচেতনতায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন সহকর্মীদের কাছে এক আদর্শ ও শিক্ষার্থীদের কাছে এক আদর্শবান অভিভাবক।

লেখক, কলামিস্ট, সমাজ-চিন্তক ও কবি—আতাউর রহমান স্যারের প্রতিভা কেবল বিদ্যালয়ের দেয়ালে আবদ্ধ ছিল না। তিনি নিজ হাতে গড়েছেন বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, অফিস, শিক্ষার পরিবেশ; প্রযুক্তির ছোঁয়ায় উন্নয়ন ঘটিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত অবয়ব। তাঁর নেতৃত্বে দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে উঠেছে বিয়ানীবাজারের অন্যতম অগ্রগণ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

তিনি বক্তা হিসেবে যেমন সাবলীল ও প্রাঞ্জল, তেমনি গভীরতাসম্পন্ন। যে কোনো সভা-সমাবেশে, সেমিনারে কিংবা বিদায় অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্য সবাইকে মুগ্ধ করত। তিনি ছিলেন কথা ও কলমের সম্মিলিত সাধক।

শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, সাহিত্যের ধারা, রাজনীতির প্রবাহ এবং মানবিক প্রশ্নগুলোর গভীরে গিয়ে চিন্তা করেছেন। তার বহুমাত্রিক জ্ঞান ও অনুভবশক্তি তাঁকে বানিয়েছে একজন ‘আলোকবর্তিকা’—যিনি নিজে জ্বলে আশেপাশে ছড়িয়ে দিয়েছেন আলোর দ্যুতি।

আতাউর রহমান স্যারের বিদায়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার শিক্ষাক্ষেত্রে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে, তা সহজে পূরণ হবার নয়। তবে তিনি যেহেতু একজন সক্রিয় লেখক, সাংবাদিক ও সামাজিক চিন্তক—তাঁর কর্ম ও অংশগ্রহণ নিশ্চয় অব্যাহত থাকবে এলাকার বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডে।

স্যার চলে যাচ্ছেন কর্মজীবনের এক পরিণত পর্যায়ে—অবসরে। তবে তিনি থেকে যাবেন আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও স্মৃতির মণিকোঠায়। তাঁর অনুসারীরা, শুভাকাঙ্ক্ষীরা ও সহকর্মীরা তাঁকে স্মরণ করবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

বিদায়, আলোর মানুষ আতাউর রহমান স্যার।

দোস্ত, স্যালুট আপনাকে।
আপনার অবসর হোক নতুন আলোর যাত্রা।
ভালো থাকুন পরিবার-পরিজন নিয়ে, শান্তি ও সুস্থতায়।
আপনার আলো জ্বালুক আরও বহুদূর।

 

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি,
বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখা।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

অবসরে যাচ্ছেন বহুগুণে গুণান্বিত এক আলোর মানুষ

আপডেট সময়ঃ ১১:২১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

“শিক্ষক মোরা, শিক্ষক—

মানুষের মোরা পরমাত্মীয়,
ধরনীর মোরা দীক্ষক।”

দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী, একজন সজ্জন, সৃষ্টিশীল ও সমাজ-মনস্ক আলোকিত মানুষ। ২০২৫ সালের ৩০ জুন—এই দিনটি তাঁর দীর্ঘ ৩৭ বছরের বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা জীবনের শেষ কার্যদিবস। দিনটি নিঃসন্দেহে তাঁর জন্য আনন্দ ও গর্বের, আবার একইসাথে বেদনারও, কারণ বিদ্যালয়ের সাথে আত্মিক সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে; প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হওয়ার অভ্যাসে আজ হচ্ছে শেষ রেখাপাত।

সত্যিকার অর্থে “A teacher is an arcitect of a nation ” অর্থাৎ একজন জাত শিক্ষক সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য সম্পদ। সেই দৃষ্টিতে আতাউর রহমান স্যার কেবল একজন প্রধান শিক্ষক নন—তিনি একজন দার্শনিক, একজন জাত নির্মাতা। শিক্ষকের সংজ্ঞা যে পাঠ্যপুস্তক পাঠদানের গণ্ডির বহু বাইরের এক বৃহৎ পরিসর—তা তিনি নিজেই ছিলেন জীবন্ত প্রমাণ। নেতৃত্ব, সততা, নৈতিকতা ও সমাজ সচেতনতায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন সহকর্মীদের কাছে এক আদর্শ ও শিক্ষার্থীদের কাছে এক আদর্শবান অভিভাবক।

লেখক, কলামিস্ট, সমাজ-চিন্তক ও কবি—আতাউর রহমান স্যারের প্রতিভা কেবল বিদ্যালয়ের দেয়ালে আবদ্ধ ছিল না। তিনি নিজ হাতে গড়েছেন বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, অফিস, শিক্ষার পরিবেশ; প্রযুক্তির ছোঁয়ায় উন্নয়ন ঘটিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত অবয়ব। তাঁর নেতৃত্বে দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে উঠেছে বিয়ানীবাজারের অন্যতম অগ্রগণ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

তিনি বক্তা হিসেবে যেমন সাবলীল ও প্রাঞ্জল, তেমনি গভীরতাসম্পন্ন। যে কোনো সভা-সমাবেশে, সেমিনারে কিংবা বিদায় অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্য সবাইকে মুগ্ধ করত। তিনি ছিলেন কথা ও কলমের সম্মিলিত সাধক।

শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, সাহিত্যের ধারা, রাজনীতির প্রবাহ এবং মানবিক প্রশ্নগুলোর গভীরে গিয়ে চিন্তা করেছেন। তার বহুমাত্রিক জ্ঞান ও অনুভবশক্তি তাঁকে বানিয়েছে একজন ‘আলোকবর্তিকা’—যিনি নিজে জ্বলে আশেপাশে ছড়িয়ে দিয়েছেন আলোর দ্যুতি।

আতাউর রহমান স্যারের বিদায়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার শিক্ষাক্ষেত্রে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে, তা সহজে পূরণ হবার নয়। তবে তিনি যেহেতু একজন সক্রিয় লেখক, সাংবাদিক ও সামাজিক চিন্তক—তাঁর কর্ম ও অংশগ্রহণ নিশ্চয় অব্যাহত থাকবে এলাকার বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডে।

স্যার চলে যাচ্ছেন কর্মজীবনের এক পরিণত পর্যায়ে—অবসরে। তবে তিনি থেকে যাবেন আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও স্মৃতির মণিকোঠায়। তাঁর অনুসারীরা, শুভাকাঙ্ক্ষীরা ও সহকর্মীরা তাঁকে স্মরণ করবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

বিদায়, আলোর মানুষ আতাউর রহমান স্যার।

দোস্ত, স্যালুট আপনাকে।
আপনার অবসর হোক নতুন আলোর যাত্রা।
ভালো থাকুন পরিবার-পরিজন নিয়ে, শান্তি ও সুস্থতায়।
আপনার আলো জ্বালুক আরও বহুদূর।

 

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি,
বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখা।

নিউজটি শেয়ার করুন