০৫:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

অবৈধভাবে পাথর-বালি উত্তোলন বন্ধে সিলেটে মানববন্ধন

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৯:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে।

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র জাফলং, বিছানাকান্দি ও সাদাপাথরে অবৈধভাবে পাথর-বালি উত্তোলন বন্ধে জুলাই যোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলার উদ্যোগে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে নগরীর বন্দরবাজারে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জুলাই যোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলার আহ্বায়ক আব্দুর রহিম এর সভাপতিত্বে ও দ্বৈতভাবে সদস্য সচিব সাহেল আহমদ ও সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আহমেদ নীলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন জুলাই যোদ্ধা সিলেট জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো আব্দুল আহাদ,  আতিকুর রহমান নগরী, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামিল আহমদ, সেলিম আহমদ, সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পারভেজ আহমেদ, হেফাজতে ইসলাম সিলেট মহানগর প্রচার সম্পাদক হাফিজ ক্বারী এম মইনুল ইসলাম আশরাফী, সদস্য মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, জুলাই যোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা সদস্য সাব্বির আহমদ প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আজ আমরা এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি-প্রকৃতিকে হত্যা, মানুষের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস, আর রাষ্ট্রীয় সম্পদকে লুটপাটের এক ভয়াবহ চক্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। জাফলং, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি-যেখানে একসময় নদীর কলকল ধ্বনি, পাহাড়ের সবুজ, আর পাখির ডাক মিলেমিশে এক স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করত-আজ তা পরিণত হয়েছে অপরাধীদের রাজ্যে। দুদক রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে-এখানে কয়েক শত কোটি টাকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুট হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, এমনকি কিছু সরকারি মহলও এই অপরাধে জড়িত। নদী পাড় ধসে যাচ্ছে, আবাদি জমি ও বসতবাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে। এক্সক্যাভেটরের মাধ্যমে কোয়ারি খননে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গিয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়েছে। চা বাগান ধ্বংস, জীববৈচিত্র্য বিলীন, কৃষিজমি বিনষ্ট হচ্ছে। জুমপাড় বেরিবাঁধ দুর্বল হয়ে নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। জাফলং ব্রিজের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ব্রিজটি ঝুঁকির মুখে। বক্তারা আরো বলেন, উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন-“আগের চার বছর জাফলং-এ পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছিলাম, এখন আমি উপদেষ্টা হয়েও পারলাম না। পাথর উত্তোলনে সর্বদলীয় ঐক্য দেখছি। একটি সুন্দর জিনিস কী করে হাতে ধরে কেমন অসুন্দর করতে হয সেটা শিখতে হলে বাংলাদেশে আসতে হবে। চোখের সামনে অপূর্ব সুন্দর জায়গা জাফলং নষ্ট হতে দেখলাম। ধ্বংসলীলা দেখলাম। এই বক্তব্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে-এখানে শুধু অবৈধ ব্যবসায়ী নয়, বরং ক্ষমতার সব স্তরে থাকা স্বার্থান্বেষী মহল যুক্ত। রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয়ে নীরব-বরং অনেক ক্ষেত্রে তারা এই অপরাধের মুনাফাভোগী। অন্যদিকে, সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন-“সাদা পাথর রক্ষার্থে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু কোনোভাবেই লুট বন্ধ হচ্ছে না। এটি এক ধরনের প্রশাসনিক অসহায়ত্বের স্বীকারোক্তি। নিয়মিত অভিযান হচ্ছে, কিন্তু অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না- মানে এখানে শক্তিশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বলয়ের প্রভাব রয়েছে, যা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ব্যাহত করছে। এর মানে, অভিযান কেবল প্রতীকী পর্যায়ে সীমাবদ্ধ, কিন্তু মূল নেটওয়ার্ক অক্ষত রয়ে গেছে। আমি মনে করি, প্রশাসন চাইলে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই লুট বন্ধ করা সম্ভব। অতীতে আমরা জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছিলাম-এখন কেন পারছি না? এর কারণ খুব স্পষ্ট-এখন প্রশাসনের পেছনে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি নেই, বরং সর্বদলীয় স্বার্থরক্ষা চলছে। যদি জেলা প্রশাসক স্বীকার করেন যে তিনি লুট বন্ধ করতে পারছেন না, তাহলে তাঁর কর্তৃত্বের সীমাবদ্ধতা, প্রভাবশালী চক্রের চাপ এবং রাজনৈতিক বাধাগুলো প্রকাশ্যে বলা উচিত-যাতে জনগণ জানে আসল দায় কার।

দাবিসমূহ:
১. জাফলংসহ সব এলাকায় অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও দানবীয় যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে চাল হবে।
২. সিন্ডিকেট ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে।
৩. প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পর্যটনশিল্পের টেকসই উন্নয়নে সরকারিভাবে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে-যাতে পরিবেশ, পর্যটন ও মানুষের জীবিকা
একসাথে রক্ষা পায়।
৫. স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ ও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অবৈধ উত্তোলন নির্ভর জীবিকা থেকে সরিয়ে আনতে হবে। আজকের মানববন্ধন থেকে আমরা ঘোষণা দিচ্ছি আমরা ভয় পাব না, চুপ থাকব না, এবং আমাদের নদী-পাহাড়-প্রকৃতি বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত লড়ব।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

অবৈধভাবে পাথর-বালি উত্তোলন বন্ধে সিলেটে মানববন্ধন

আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৯:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র জাফলং, বিছানাকান্দি ও সাদাপাথরে অবৈধভাবে পাথর-বালি উত্তোলন বন্ধে জুলাই যোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলার উদ্যোগে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে নগরীর বন্দরবাজারে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জুলাই যোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলার আহ্বায়ক আব্দুর রহিম এর সভাপতিত্বে ও দ্বৈতভাবে সদস্য সচিব সাহেল আহমদ ও সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আহমেদ নীলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন জুলাই যোদ্ধা সিলেট জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো আব্দুল আহাদ,  আতিকুর রহমান নগরী, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামিল আহমদ, সেলিম আহমদ, সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পারভেজ আহমেদ, হেফাজতে ইসলাম সিলেট মহানগর প্রচার সম্পাদক হাফিজ ক্বারী এম মইনুল ইসলাম আশরাফী, সদস্য মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, জুলাই যোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা সদস্য সাব্বির আহমদ প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আজ আমরা এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি-প্রকৃতিকে হত্যা, মানুষের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস, আর রাষ্ট্রীয় সম্পদকে লুটপাটের এক ভয়াবহ চক্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। জাফলং, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি-যেখানে একসময় নদীর কলকল ধ্বনি, পাহাড়ের সবুজ, আর পাখির ডাক মিলেমিশে এক স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করত-আজ তা পরিণত হয়েছে অপরাধীদের রাজ্যে। দুদক রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে-এখানে কয়েক শত কোটি টাকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুট হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, এমনকি কিছু সরকারি মহলও এই অপরাধে জড়িত। নদী পাড় ধসে যাচ্ছে, আবাদি জমি ও বসতবাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে। এক্সক্যাভেটরের মাধ্যমে কোয়ারি খননে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গিয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়েছে। চা বাগান ধ্বংস, জীববৈচিত্র্য বিলীন, কৃষিজমি বিনষ্ট হচ্ছে। জুমপাড় বেরিবাঁধ দুর্বল হয়ে নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। জাফলং ব্রিজের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ব্রিজটি ঝুঁকির মুখে। বক্তারা আরো বলেন, উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন-“আগের চার বছর জাফলং-এ পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছিলাম, এখন আমি উপদেষ্টা হয়েও পারলাম না। পাথর উত্তোলনে সর্বদলীয় ঐক্য দেখছি। একটি সুন্দর জিনিস কী করে হাতে ধরে কেমন অসুন্দর করতে হয সেটা শিখতে হলে বাংলাদেশে আসতে হবে। চোখের সামনে অপূর্ব সুন্দর জায়গা জাফলং নষ্ট হতে দেখলাম। ধ্বংসলীলা দেখলাম। এই বক্তব্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে-এখানে শুধু অবৈধ ব্যবসায়ী নয়, বরং ক্ষমতার সব স্তরে থাকা স্বার্থান্বেষী মহল যুক্ত। রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয়ে নীরব-বরং অনেক ক্ষেত্রে তারা এই অপরাধের মুনাফাভোগী। অন্যদিকে, সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন-“সাদা পাথর রক্ষার্থে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু কোনোভাবেই লুট বন্ধ হচ্ছে না। এটি এক ধরনের প্রশাসনিক অসহায়ত্বের স্বীকারোক্তি। নিয়মিত অভিযান হচ্ছে, কিন্তু অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না- মানে এখানে শক্তিশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বলয়ের প্রভাব রয়েছে, যা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ব্যাহত করছে। এর মানে, অভিযান কেবল প্রতীকী পর্যায়ে সীমাবদ্ধ, কিন্তু মূল নেটওয়ার্ক অক্ষত রয়ে গেছে। আমি মনে করি, প্রশাসন চাইলে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই লুট বন্ধ করা সম্ভব। অতীতে আমরা জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছিলাম-এখন কেন পারছি না? এর কারণ খুব স্পষ্ট-এখন প্রশাসনের পেছনে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি নেই, বরং সর্বদলীয় স্বার্থরক্ষা চলছে। যদি জেলা প্রশাসক স্বীকার করেন যে তিনি লুট বন্ধ করতে পারছেন না, তাহলে তাঁর কর্তৃত্বের সীমাবদ্ধতা, প্রভাবশালী চক্রের চাপ এবং রাজনৈতিক বাধাগুলো প্রকাশ্যে বলা উচিত-যাতে জনগণ জানে আসল দায় কার।

দাবিসমূহ:
১. জাফলংসহ সব এলাকায় অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও দানবীয় যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে চাল হবে।
২. সিন্ডিকেট ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে।
৩. প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পর্যটনশিল্পের টেকসই উন্নয়নে সরকারিভাবে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে-যাতে পরিবেশ, পর্যটন ও মানুষের জীবিকা
একসাথে রক্ষা পায়।
৫. স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ ও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অবৈধ উত্তোলন নির্ভর জীবিকা থেকে সরিয়ে আনতে হবে। আজকের মানববন্ধন থেকে আমরা ঘোষণা দিচ্ছি আমরা ভয় পাব না, চুপ থাকব না, এবং আমাদের নদী-পাহাড়-প্রকৃতি বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত লড়ব।

নিউজটি শেয়ার করুন