০৫:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে তৎপর ইউরোপের দেশগুলো

ডেস্ক নিউজ:
  • আপডেট সময়ঃ ০৫:৪৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে।

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বা অন্য উপায়ে ইউরোপে প্রবেশ করা অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) অন্যান্য দেশ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখনো প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন পথে সেখানে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়েছেন।

তাদের ফেরত পাঠাতে ইইউ ২০১৭ সালে এবং ইতালি মঙ্গলবার (৬ মে) বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে।

উদ্দেশ্য অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠিয়ে বৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করা।

বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ নিয়ে অনেক আগে থেকেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছে ইতালি সরকার। এ নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি সইয়ের ব্যাপারেও বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে আসছিল। যদিও এ বিষয়ে বাংলাদেশ সব সময় ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছে এবং সহযোগিতা করে আসছে। গত কয়েক মাসে ইতালির বেশ কয়েকটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে এবং সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে তৎপরতা জোরদার করে। অবশেষে গতকাল ইতালির সঙ্গে অভিবাসন ও গতিশীলতা-সংক্রান্ত এই সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ। এতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সফররত ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি সই করেন।

এ ছাড়া ইউরোপের দেশগুলোতে যে চক্রটি মানব পাচারে জড়িত রয়েছে তাদের ব্যাপারেও যৌথ পদক্ষেপ নিতে তৎপর ইতালি সরকার। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে একটি যৌথ কমিটি গঠন করতে সম্মত হয় দুই দেশ।

এই সমঝোতা স্মারক বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, রেমিট্যান্স প্রবাহ নিশ্চিতকরণ এবং বৈধ অভিবাসনের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। অন্যদিকে ইতালির ক্ষেত্রে, এটি নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং নিয়মিত অভিবাসনকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি শ্রম ঘাটতির চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান দিয়েছে। এই সমঝোতা স্মারক ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে স্বাক্ষরিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির বিধানগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, মাল্টা, গ্রিস, অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছে। ইউরোপের সব দেশেই কমবেশি বাংলাদেশিরা কর্মরত আছেন, কিন্তু ওই সব দেশে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন। সূত্র জানায়, বৈধ ও অবৈধ মিলে শুধু ইটালিতে আছে আড়াই লাখ বাংলাদেশি, ফ্রান্সে আছে এক লাখ, স্পেনে ৬০ হাজার, গ্রিসে ৪০ হাজার, জার্মানিতে ২৫ হাজার এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। যুক্তরাজ্যে থাকা ৮ লাখ বাংলাদেশির মধ্যে যারা অবৈধ আছেন, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বারবার বাংলাদেশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশেষ করে, এসব দেশ থেকে যখন কোনো মন্ত্রী পর্যায়ের কেউ সফরে আসেন তখন তারা বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে চাপ দেন। এ ছাড়া ঢাকায় ওই সব দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।

ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি ৫ ও ৬ মে বাংলাদেশে সরকারি সফর করেন। সফরকালে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও কৃষিবিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সফরকালে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবস্থা পর্যালোচনা করে। পাশাপাশি নিরাপত্তা সহযোগিতা, অভিবাসন ব্যবস্থাপনা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহযোগিতা, ভিসা প্রক্রিয়া এবং ইতালিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কল্যাণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে তৎপর ইউরোপের দেশগুলো

আপডেট সময়ঃ ০৫:৪৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বা অন্য উপায়ে ইউরোপে প্রবেশ করা অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) অন্যান্য দেশ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখনো প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন পথে সেখানে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়েছেন।

তাদের ফেরত পাঠাতে ইইউ ২০১৭ সালে এবং ইতালি মঙ্গলবার (৬ মে) বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে।

উদ্দেশ্য অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠিয়ে বৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করা।

বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ নিয়ে অনেক আগে থেকেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছে ইতালি সরকার। এ নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি সইয়ের ব্যাপারেও বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে আসছিল। যদিও এ বিষয়ে বাংলাদেশ সব সময় ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছে এবং সহযোগিতা করে আসছে। গত কয়েক মাসে ইতালির বেশ কয়েকটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে এবং সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে তৎপরতা জোরদার করে। অবশেষে গতকাল ইতালির সঙ্গে অভিবাসন ও গতিশীলতা-সংক্রান্ত এই সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ। এতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সফররত ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি সই করেন।

এ ছাড়া ইউরোপের দেশগুলোতে যে চক্রটি মানব পাচারে জড়িত রয়েছে তাদের ব্যাপারেও যৌথ পদক্ষেপ নিতে তৎপর ইতালি সরকার। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে একটি যৌথ কমিটি গঠন করতে সম্মত হয় দুই দেশ।

এই সমঝোতা স্মারক বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, রেমিট্যান্স প্রবাহ নিশ্চিতকরণ এবং বৈধ অভিবাসনের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। অন্যদিকে ইতালির ক্ষেত্রে, এটি নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং নিয়মিত অভিবাসনকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি শ্রম ঘাটতির চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান দিয়েছে। এই সমঝোতা স্মারক ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে স্বাক্ষরিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির বিধানগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, মাল্টা, গ্রিস, অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছে। ইউরোপের সব দেশেই কমবেশি বাংলাদেশিরা কর্মরত আছেন, কিন্তু ওই সব দেশে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন। সূত্র জানায়, বৈধ ও অবৈধ মিলে শুধু ইটালিতে আছে আড়াই লাখ বাংলাদেশি, ফ্রান্সে আছে এক লাখ, স্পেনে ৬০ হাজার, গ্রিসে ৪০ হাজার, জার্মানিতে ২৫ হাজার এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। যুক্তরাজ্যে থাকা ৮ লাখ বাংলাদেশির মধ্যে যারা অবৈধ আছেন, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বারবার বাংলাদেশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশেষ করে, এসব দেশ থেকে যখন কোনো মন্ত্রী পর্যায়ের কেউ সফরে আসেন তখন তারা বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে চাপ দেন। এ ছাড়া ঢাকায় ওই সব দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।

ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি ৫ ও ৬ মে বাংলাদেশে সরকারি সফর করেন। সফরকালে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও কৃষিবিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সফরকালে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবস্থা পর্যালোচনা করে। পাশাপাশি নিরাপত্তা সহযোগিতা, অভিবাসন ব্যবস্থাপনা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহযোগিতা, ভিসা প্রক্রিয়া এবং ইতালিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কল্যাণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন