০১:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

‘আমি ব্যর্থ মা, ছেলে খুনের বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম: রায়হানের মা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ১১:৩২:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে।

সিলেটে ২০২০ সালে আলোচিত রায়হান আহমেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া পুলিশের এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গ্রেপ্তারের প্রায় ৫৭ মাস পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন মঞ্জুরের পর রোববার নিম্ন আদালত থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরে এ সংক্রান্ত নথি কারাগারে এলে ওইদিন বিকেলেই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মুক্তি পান তিনি। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রসান্ত কুমার বনিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে আকবর ঠিক কবে জামিন পেয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি।

আলোচিত এ মামলায় আকবরসহ চার্জশিটভুক্ত ৬ আসামির মধ্যে চার জনই এখন জামিনে মুক্ত। অপর দুই আসামির মধ্যে এএসআই আশেক এলাহী কারাগারে ও সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ আল নোমান ফ্রান্সে পলাতক রয়েছেন। মহানগর দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার কৃপা সিন্দু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জামিন পাওয়া আসামিদের মধ্যে এসআই হাসান আলী পলাতক রয়েছেন। তিনি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।

এদিকে মামলার প্রধান আসামিসহ ৪ জনের জামিনের খবরে ভেঙে পড়েছেন রায়হান আহমেদের মা সালমা বেগম। আকবরের মুক্তির খবর পেয়ে আজ সোমবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কাঁদতে কাঁদতেই তিনি বলেন, ‘আমি ব্যর্থ মা। কিছু করতে পারলাম না। অথচ ছেলে খুনের সুষ্ঠু একটি বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম।’

আসামিরা জামিনে বের হয়ে পালিয়ে যাবে আশঙ্কা করে সালমা বলেন, ‘শুনলাম প্রধান আসামি মুক্তি পেয়েছে। নিজেকে নিরাপাত্তাহীন মনে হচ্ছে। আমার মতো অনেক মা আছেন; যারা হয়তো এমন বিচারের অপেক্ষা করছেন।’

সিলেট নগরীর আখালিয়ার নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে (৩৪) ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর রাতে কাষ্টঘর এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে তাঁর উপর চালানো হয় নির্যাতন। পরদিন সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রায়হান মারা যান। প্রথমে পুলিশ দাবি করে, ছিনতাইকালে গণপিঠুনিতে রায়হান মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের অভিযোগে প্রেক্ষিতে, তদন্তে মূল ঘটনা বেরিয়ে আসে। রায়হানের মৃত্যু নিয়ে সে সময় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে তাঁর স্ত্রী তাহিমনা আক্তার তান্নি কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। পুলিশ ওই সময় ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ ৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। গায়েব করে ফেলা হয় ঘটনার পর ফাঁড়ির সামনের সিসিটিভি ফুটেজও। মামলাটি পরে তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা পুলিশি হেফাজত থেকে আকবর ছাড়া বাকি ৪ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার দেখায়। কিন্তু এর মধ্যেই প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর ভারতে পালিয়ে যান। তাকে ওই বছরের ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাটের দনা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রায় ৫৭ মাস তিনি কারাগারে ছিলেন। এর আগে বিভিন্ন সময় আরও চার আসামি মুক্তি লাভ করেন।

আলোচিত এ মামলার তদন্ত শেষে পিবিআই ২০২১ সালের ৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে এসআই আকবরসহ ওই সময়কার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, এসআই হাসান উদ্দিন ও কোম্পানীগঞ্জের গণমাধ্যম কর্মী আবদুল্লাহ আল নোমানকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। একই বছরের ১১ মে মামলায় প্রথম সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা। ইতোমধ্যে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

‘আমি ব্যর্থ মা, ছেলে খুনের বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম: রায়হানের মা

আপডেট সময়ঃ ১১:৩২:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

সিলেটে ২০২০ সালে আলোচিত রায়হান আহমেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া পুলিশের এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গ্রেপ্তারের প্রায় ৫৭ মাস পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন মঞ্জুরের পর রোববার নিম্ন আদালত থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরে এ সংক্রান্ত নথি কারাগারে এলে ওইদিন বিকেলেই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মুক্তি পান তিনি। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রসান্ত কুমার বনিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে আকবর ঠিক কবে জামিন পেয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি।

আলোচিত এ মামলায় আকবরসহ চার্জশিটভুক্ত ৬ আসামির মধ্যে চার জনই এখন জামিনে মুক্ত। অপর দুই আসামির মধ্যে এএসআই আশেক এলাহী কারাগারে ও সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ আল নোমান ফ্রান্সে পলাতক রয়েছেন। মহানগর দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার কৃপা সিন্দু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জামিন পাওয়া আসামিদের মধ্যে এসআই হাসান আলী পলাতক রয়েছেন। তিনি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।

এদিকে মামলার প্রধান আসামিসহ ৪ জনের জামিনের খবরে ভেঙে পড়েছেন রায়হান আহমেদের মা সালমা বেগম। আকবরের মুক্তির খবর পেয়ে আজ সোমবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কাঁদতে কাঁদতেই তিনি বলেন, ‘আমি ব্যর্থ মা। কিছু করতে পারলাম না। অথচ ছেলে খুনের সুষ্ঠু একটি বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম।’

আসামিরা জামিনে বের হয়ে পালিয়ে যাবে আশঙ্কা করে সালমা বলেন, ‘শুনলাম প্রধান আসামি মুক্তি পেয়েছে। নিজেকে নিরাপাত্তাহীন মনে হচ্ছে। আমার মতো অনেক মা আছেন; যারা হয়তো এমন বিচারের অপেক্ষা করছেন।’

সিলেট নগরীর আখালিয়ার নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে (৩৪) ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর রাতে কাষ্টঘর এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে তাঁর উপর চালানো হয় নির্যাতন। পরদিন সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রায়হান মারা যান। প্রথমে পুলিশ দাবি করে, ছিনতাইকালে গণপিঠুনিতে রায়হান মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের অভিযোগে প্রেক্ষিতে, তদন্তে মূল ঘটনা বেরিয়ে আসে। রায়হানের মৃত্যু নিয়ে সে সময় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে তাঁর স্ত্রী তাহিমনা আক্তার তান্নি কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। পুলিশ ওই সময় ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ ৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। গায়েব করে ফেলা হয় ঘটনার পর ফাঁড়ির সামনের সিসিটিভি ফুটেজও। মামলাটি পরে তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা পুলিশি হেফাজত থেকে আকবর ছাড়া বাকি ৪ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার দেখায়। কিন্তু এর মধ্যেই প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর ভারতে পালিয়ে যান। তাকে ওই বছরের ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাটের দনা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রায় ৫৭ মাস তিনি কারাগারে ছিলেন। এর আগে বিভিন্ন সময় আরও চার আসামি মুক্তি লাভ করেন।

আলোচিত এ মামলার তদন্ত শেষে পিবিআই ২০২১ সালের ৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে এসআই আকবরসহ ওই সময়কার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, এসআই হাসান উদ্দিন ও কোম্পানীগঞ্জের গণমাধ্যম কর্মী আবদুল্লাহ আল নোমানকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। একই বছরের ১১ মে মামলায় প্রথম সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা। ইতোমধ্যে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন