০৪:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

ইসলামে ধর্ষকদের শাস্তি কী

ডেস্ক নিউজ:
  • আপডেট সময়ঃ ১০:২১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
  • / ১০৬ বার পড়া হয়েছে।

ইসলাম বিশ্বজনীন এক ‍চিরন্তন ও শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে রয়েছে নারীর সম্মান, মর্যাদা ও সকল অধিকারের স্বীকৃতি, রয়েছে তাদের সতীত্ব সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি। ইসলাম নারীর ব্যাপারে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার সংশোধন করে, নারীকে সম্মান ও সহানুভূতির স্থানে অধিষ্ঠিত করে। পুরুষের মনে আল্লাহর ভয় ও আখেরাতের জবাবদিহির কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়।
নারীর প্রতি যে কোনো ধরনের অন্যায় আচরণের ক্ষতি ও ভয়াবহতা তুলে ধরে পুরুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে। পুরুষের অন্তরে একথা বদ্ধমূল করে- নারীর সাথে আচরণ হতে হবে তার সম্মান ও মর্যাদা বিবেচনায় রেখেই। তার প্রতি মানসিকতা থাকবে সম্মান ও সহানুভূতির। আর এর অনুকূল সকল ব্যবস্থা-ই ইসলাম গ্রহণ করেছে।
যিনা (ব্যভিচার) একটা চরম অপরাধ। অনেক অপরাধের সমষ্টি। মানবসভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি। নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার চূড়ান্ত রূপ। এতে আত্মিক, মানসিক, শারীরিক, চারিত্রিক, সামাজিক বহু রকমের বিপর্যয় ঘটে। এর কুফল কখনো কখনো গোটা সমাজকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
ইসলাম যিনার কাছে যেতেও নিষেধ করে-তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা। (সূরা বনী ইসরাইল ১৭)
যিনা কত নিকৃষ্ট তা বোঝার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট। এখানে ‘যিনা করো না’ এ কথা বলা হয়নি; বরং এর কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, এটা কত জঘন্য অপরাধ।
ইসলামে শুধু অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের চূড়ান্ত রূপটাই যিনা নয়। বরং যেসব কাজ যিনার প্ররোচনা দেয় সেগুলোও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং তাও যিনা বলে গণ্য।
এক হাদীসে আছে-চোখের ব্যভিচার হল দেখা। কানের ব্যভিচার শোনা। জিহ্বার ব্যভিচার বলা। হাতের ব্যভিচার ধরা। পায়ের ব্যভিচার হাঁটা। মন কামনা করে আর লজ্জাস্থান  তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৫৭)
অর্থাৎ চোখ-কান-হাত-পা-জিহ্বা সবই যিনা করে- যিনার প্ররোচনা দেয়, যা পূর্ণতা পায় লজ্জাস্থানের মাধ্যমে। সুতরাং এসব অঙ্গের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণের নীতিমালা
ব্যভিচার প্রমাণের জন্য ইসলামে দু’টোর যে কোনোটি জরুরি। ক. ৪ জন সাক্ষী, খ. ধর্ষকের স্বীকারোক্তি। তবে সাক্ষী না পাওয়া গেলে আধুনিক ডিএনএ টেস্ট, সিসি ক্যামেরা, মোবাইল ভিডিও, ধর্ষিতার বক্তব্য ইত্যাদি অনুযায়ী ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করে স্বীকার করার জন্য চাপ দেওয়া হবে। স্বীকারোক্তি পেলে তার ওপর শাস্তি কার্যকর করা হবে।
ইসলামে ধর্ষণ ও ব্যভিচার, সম্মতি-অসম্মতি উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। তবে নারীর ক্ষেত্রে ধর্ষিতা হলে কোনো শাস্তি নেই, সম্মতিতে হলে শাস্তি আছে। যৌন অপরাধ নির্ণয়ে ইসলাম নির্ধারিত বিভাজনরেখা (বিবাহিত-অবিবাহিত) সর্বোৎকৃষ্ট।
ধর্ষণের শাস্তি
ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষে ব্যভিচার সংগঠিত হয়। আর অন্যপক্ষ হয় নির্যাতিত। তাই নির্যাতিতের কোনো শাস্তি নেই। কেবল অত্যাচারি ধর্ষকের শাস্তি হবে।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে দু’টো বিষয় সংঘঠিত হয়। ১. ব্যভিচার, ২. বলপ্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন। প্রথমটির জন্য পূর্বোক্ত ব্যভিচারের শাস্তি পাবে। পরেরটির জন্য ইসলামি আইনজ্ঞদের এক অংশ বলেন, মুহারাবার শাস্তি হবে।
মুহারাবা হলো, পথে কিংবা অন্যত্র অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়া ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি করা। এতে কেবল সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হতে পারে, আবার কেবল হত্যা করা হতে পারে। আবার দু’টোই হতে পারে।
মুহারাবার শাস্তি আল্লাহতায়ালা এভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলিতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হলো- তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্চনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। ’ (সূরা মায়িদা: ৩৩)
এখানে হত্যা করলে হত্যার শাস্তি, সম্পদ ছিনিয়ে নিলে বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেওয়া, সম্পদ ছিনিয়ে হত্যা করলে শূলিতে চড়িয়ে হত্যা করার ব্যাখ্যা আইনজ্ঞরা দিয়েছেন। আবার এর চেয়ে লঘু অপরাধ হলে দেশান্তরের শাস্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
ব্যভিচারের শাস্তি
ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশ’ ছড়ি মারা হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই শাস্তি।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ’ –সূরা নূর: ২
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশ’ বেত্রাঘাত ও রজম (পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড)। ’ (সহিহ মুসলিম)
এই হাদিসের আলোকে অন্য মাজহাবের ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, ব্যভিচারী অবিবাহিত হলে তার শাস্তি দুটো। ১. একশ’ বেত্রাঘাত, ২. এক বছরের জন্য দেশান্তর।
আর হানাফি মাজহাবের বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক্ষেত্রে হদ (শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি) হলো- একশ’ বেত্রাঘাত। আর দেশান্তরের বিষয়টি বিচারকের বিবেচনাধীন। তিনি ব্যক্তি বিশেষে তা প্রয়োগ করতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য