১০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুচক্রী মহলের ভুয়া মামলায় কারাগারে সাইদুল : হুমকীতে পরিবার

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:০৩:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৪৪ বার পড়া হয়েছে।

রাজনীতি না করেও বড়লেখার বিশিষ্ট শালিস ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবি সাইদুল ইসলামের উপর পর পর ১১ টি মামলা। একের পর এক মিথ্যা মামলায় তিনি এখন কারাগারে। এর আগে আওয়ামী লীগের শাসনামলেও পর পর মামলা হয়েছে তিনটি। মামলায় বাদ যায় নি সাইদুল ইসলামের অবুঝ শিশুরাও। কারাগারের থাকা অবস্থায় সাইদুলের অনুপস্থিতিতে পরিবার সদস্যদের প্রতি বাদী পক্ষের ভয়-ভীতি,হুমকী। সব মিলিয়ে জীবন জীবীকা এখন হুমকীর সম্মুখীন বলে দাবি করেছেন পরিবারের পক্ষ থেকে সাইদুল ইসলামের চাচাতো ভাই নুরুল ইসলাম রাফিন। তিনি বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সিলেটের একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মামলায় বাদীদের হুমকীতে তাদের পরিবার সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই অবস্থার সুষ্টু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত নিস্পত্তি করার আহবান পরিবারের।

তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী চক্রের পতন দাবিতে সারা বড়লেখা পৌরশহরে যখন ছাত্র জনতার মিছিলে উত্থাল ছিল, সেই সময় তিনি দাঁড়িয়েছিলেন ছাত্র জনতার পাশে। বিশেষ করে ৫ আগষ্টে যখন সারাদেশে ভাঙচুর,লুটপাট শুরু হয়, তখন বুক আগলে রেখে সাইদুল ইসলাম বড়লেখা থানাসহ সরকারি স্থাপনা রক্ষায় নিজের বুক আগলে ধরেন। সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির চিত্র এখনও ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অথচ, বৈষ্যম্য বিরোধী আন্দোলনের সেই মানুষটিকে ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে আসামী করা হয় সাইদুল ইসলামকে।

লিখিত বক্তব্যে নুরুল ইসলাম রাফিন একটি মামলার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, বড়লেখা থানার মামলা নং-১৭। তারিখ : ২৮/০৪/২০২৫ খ্রিঃ। বাদী আব্দুল কুদ্দুস। তিনি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার একাধিক প্রমাণ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অথচ চলতি বছরের ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে বড়লেখা উপজেলা বিএনপির কিছু কথিত নেতার ছত্রছায়ায়, ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে আব্দুল কুদ্দুস এ মিথ্যা ও সাজানো মামলাটি দায়ের করেছেন। এই মামলার কোনো বিশ্বাসযোগ্য বা সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই, ফলে মামলার স্বচ্ছতা নিয়ে জনমনে গুরুতর প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। একই সাথে বড়লেখা থানার মামলা নং-১২। তারিখ : ০৮/০৯/২০২৫ খ্রিঃ। বাদী আবু হাসান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংক্রান্ত উক্ত মামলায় জনাব সাইদুল ইসলামকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যদিও জনাব সাইদুল ইসলাম সরাসরি ছাত্র আন্দোলনের পক্ষের একজন সমর্থক ছিলেন এবং কোনো ধরনের সহিংসতা বা বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। মামলার বাদী পরবর্তীতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালতে স্বশরীরে হাজির হন এবং আদালতকে অবহিত করেন যে, জনাব সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং তাঁকে এ মামলায় অন্যায়ভাবে জড়ানো হয়েছে। বাদী স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, সাইদুল ইসলামের নাম এজাহারে উল্লেখ ছিল না এবং তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে পুলিশের একতরফা সিদ্ধান্তে। যা একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

নুরুল ইসলাম রাফিন বলেন, বড়লেখা পৌর এলাকাধীন গাজিটেকা (আইলাপুর) নিবাসী মৃত আবদুল খালিকের ছেলে জনাব সাইদুল ইসলাম। যিনি পৌর এলাকা ছাড়াও গোটা উপজেলায় একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক, সালিশ ব্যক্তিত্ব ও শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে সমধিক পরিচিত। একজন দানশীল মানুষ হিসেবেও তিনি সকলের কাছে সুপ্রতিষ্ঠিত। ফলে নিবেদিত প্রাণ এই সমাজসেবক এলাকার একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী নয় বলে তিনি ছিলেন সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহনীয় ও বরণীয়। অসহায়, দুঃস্থ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিঃস্বার্থভাবে তাঁর অবদান গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে রয়েছে।বিশেষ করে শিক্ষা, মানবসেবা, মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, যুব সমাজকে উদ্ধুব্ধকরণসহ জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে তার অবদান এলাকাবাসীর কাছে অতুলনীয়। একজন দৃঢ়চেতা ও ন্যায় বিচারক হিসেবে এলাকার যেকোন সালিশ বৈঠকে সবার আগে ডাক পড়ে সাইদুল ইসলামের উপর। এই বিষয়টি একটি পক্ষের গাত্রদাহের কারণ হয়ে উঠে। তারপর শুরু হয় পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র আরো প্রবল হয়ে উঠে গেল বছরের ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর। একটি চক্র হঠাৎ করে সুযোগ বোঝে রাজনৈতিক ব্যক্তি হয়ে উঠে। তাদের সেই ষড়যন্ত্রের বলি হন অরাজনৈতিক ব্যক্তি সাইদুল ইসলাম। একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করতে থাকেন আওয়ামী লীগ শাসনামলে সুবিধা নেওয়া কতিপয় কুচক্রী। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করা হচ্ছে, যার সংখ্যা ইতোমধ্যে ১১টিতে পৌঁছেছে।

রাফিন বলেন, দিবালোকের মতো স্পষ্ট একটি ঘটনা হলো- ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের দিন সাইদুল ইসলাম বড়লেখার আপামর জনসাধারণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে ওইদিন বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানল হতে সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বেই বড়লেখা থানা ভবনসহ বহু সরকারি স্থাপনা রক্ষা পায় এবং বড় ধরনের সহিংসতা এড়ানো সম্ভব হয়। অথচ আজ সেই ব্যক্তিকেই ষড়যন্ত্রের শিকার। এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা শুধু জনাব সাইদুল ইসলামের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক জীবনকেই বিপন্ন করছে না, বরং এটি দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীন মত প্রকাশ এবং একজন সমাজসেবকের প্রতি অবিচারও বটে। আমাদের বিশ্বাস-সাংবাদিক সমাজও এমন ব্যক্তির উপর পরিকল্পিত মামলায় আশাহত হবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জনাব সাইদুল ইসলাম ২০২০ সালে বড়লেখা পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোট জয়ী হলেও কৌশলে তাকে পরাজিত দেখানো হয়। তার ওই নির্বাচনে বিএনপির অনেক পদদারী নেতাকর্মীরা প্রচারণায় অংশ নেন। এর ধারাবাহিকতায় আগামী পৌরসভা নির্বাচনে সাইদুল ইসলাম মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারেন এই আশংকায় বড়লেখা বিএনপির কিছু অংশ বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করে যাচ্ছে। তারা সাইদুল ইসলামকে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করছে। অথচ সাইদুল ইসলাম বড়লেখা বিএনপিকে কখনো তার প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবেননি।

তিনি বলেন, সাইদুল ইসলাম একটি মামলায় জামিন নেওয়ার পর নতুন করে আরেকটি সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেল গেটে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একইসাথে উক্ত মামলার বাদীরা শুধু মামলা দিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং নানাভাবে আমাদের পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। পাশাপাশি, সাইদুল ইসলামের স্ত্রীর কাছে ৩০ লক্ষ টাকা চাঁদাও দাবি করা হয়েছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাইদুল ইসলামের সন্তানরা মানসিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিনি পরিবারের পক্ষ থেকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে সাইদুল ইসলাম ও তার পরিবার, বিশেষ করে স্ত্রী-সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন