কোরবানির নিসাব কতটুকু, কার ওপর কখন ওয়াজিব

- আপডেট সময়ঃ ০৪:২০:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
- / ১৮ বার পড়া হয়েছে।

কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শর্তহীন আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে কোরবানিতে। পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার জন্য ত্যাগ ও বিসর্জনের শিক্ষাও আছে এতে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা : কাউসার, আয়াত : ২)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ আল্লাহ রাববুল আলামিনের জন্য উৎসর্গিত।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২)
কোরবানি কার ওপর ওয়াজিব
প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে, তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলংকার, বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না—এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যাবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাব কোরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
আর নিসাব হলো স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি, রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। যেমন কারো নিকট কিছু স্বর্ণ ও কিছু টাকা আছে, যা সর্বমোট সাড়ে বায়ান্ন তোলা চাঁদির মূল্যের সমান হয় তাহলে তার ওপরও কোরবানি ওয়াজিব।
একান্নভুক্ত পরিবারে নিসাবের হিসাব
একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাওয়া গেলে অর্থাৎ তাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের ওপর ভিন্ন ভিন্ন কোরবানি ওয়াজিব। পরিবারের যত সদস্যের ওপর কোরবানি ওয়াজিব তাদের প্রত্যেককেই একটি করে পশু কোরবানি করতে হবে কিংবা বড় পশুতে পৃথক পৃথক অংশ দিতে হবে। একটি কোরবানি সবার জন্য যথেষ্ট হবে না।
কোরবানির নিসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়, বরং কোরবানির তিন দিন থাকলে, এমনকি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের কিছু আগে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪র্থ খণ্ড, ১৯৬ পৃষ্ঠা, রদ্দুল মুহতার ষষ্ঠ খণ্ড, ৩১২ পৃষ্ঠা)
কোরবানির সময় কখন
জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত মোট তিন দিন কোরবানির সময়।তবে সবচেয়ে উত্তম হলো প্রথম দিন কোরবানি করা। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। বারা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘ঈদের দিন আমরা প্রথমে নামাজ আদায় করি। অতঃপর ফিরে এসে কোরবানি করি। যে ব্যক্তি এভাবে আদায় করবে সে আমাদের নিয়ম মতো করল। আর যে নামাজের আগেই পশু জবাই করল, সেটা তার পরিবারের জন্য গোশত হবে, এটা কোরবানি হবে না।’ (মুসলিম : ২/১৫৪)
কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারে এবং কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকে, তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে থাকে, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দিতে পারেনি, তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দেবে। (বাদায়েউস সানায়ে, ৪র্থ খণ্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা)