০১:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদেরকে মেসির উদাহরণ দিলেন লারা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০১:৫১:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৫০ বার পড়া হয়েছে।

লিওনেল মেসির উদাহরণে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করলেন কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে দুঃসময়ের পালা চলছে অনেক বছর ধরেই। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। যে সংস্করণে একসময় তারা ছিল বিশ্বসেরা, বছরের পর বছর টেস্ট সিরিজ হারেনি তারা, সেই সংস্করণে অনেক দিন ধরেই তারা আছে তলানির দিকে।

চলতি ভারত সফরে প্রথম টেস্টে তারা সাড়ে তিন দিনেই হেরে গেছে ইনিংস ব্যবধানে। আগের সিরিজে দেশের মাঠেই হোয়াইটওয়াশড হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। শীর্ষ টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর কাছে নাস্তানাবুদ হওয়া তাদের নিত্য দিনের চিত্র।

ভারতের কাছে টেস্ট ম্যাচ হারার পর ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক রোস্টন চেইস বলেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতনের কারণ অবকাঠামোর সমস্যা ও অর্থের ভোগান্তি।তার সঙ্গে একমত ব্রায়ান লারাও।

ভারতে একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন বললেন, অর্থের পাশাপাশি জাতীয় দলে খেলার আবেগটুকুও জরুরি।কিছু করতে হলে অবশ্যই সেটির জন্য মূলধন লাগবে। অবশ্যই সেটি বড় একটি ব্যাপার। তবে রোস্টন চেইস ও অন্যদের প্রতি আমার তাগিদ, ক্রিকেট কি তারা হৃদয়ে ধারণ করে? তারা কি সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চায়? এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এসব থাকলেই কেবল পথ বের করা সম্ভব।’

নিজেদের সময়কার বা আরও আগের সময়টাতে ফিরে গিয়ে লারা বললেন, পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা তখনও একই ছিল। কিন্তু মানসিকতা ছিল ভিন্ন। আমি বোঝাতে চাচ্ছি, ৩০-৪০ বছর আগেও তো সুযোগ-সুবিধা তেমন কিছু ছিল না। ভিভ রিচার্ডস তো আরও ভালো কোনো অনুশীলন পিচে ব্যাট করেননি বা এমন কিছু। আমাদেরকে একই কাজ করতে হয়েছে, একই লড়াই করতে হয়েছে। তবে আমাদের তাড়না ছিল ভিন্ন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার আবেগ ভিন্ন ছিল। আমি তাই তরুণ ক্রিকেটারদের বলব, এই সুযোগটা (দেশের হয়ে খেলার) অসাধারণ। আমি প্রায় নিশ্চিত, প্রতিটি অভিভাবকের ভাবনায়ও এটি থাকত যে, তাদের ছেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ভালো করবে। কারণ, ওই সময় এসবের গর্ব ছিল অনেক।’

তিনি আরও বলেন, আমি অবশ্যই চেইসের সঙ্গে একমত (অর্থের ঘাটতি আছে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে)। তবে তার পরও আমি বিশ্বাস করি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার ভালোবাসা ও তাড়না তৈরি দায়িত্বটি প্রতিটি তরুণ ক্রিকেটারের।’ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের একটি বড় সমস্যা, জাতীয় দলের হয়ে একটু ভালো খেলে পরিচিতি পেয়েই বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলতে মুখিয়ে থাকেন ক্রিকেটাররা। সেই ১৫ বছর আগে ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারাইনরা যেমন বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সই না করে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট বেছে নিয়েছিলেন, পরবর্তীতে আরও অনেক ক্রিকেটারই সেই পথ ধরেই ছুটে চলেছেন এখনও।অর্থের হাতছানির কথা চিন্তা করে এটায় দোষের কিছু দেখেন না লারা। তবে জাতীয় দলকে গুরুত্ব দেওয়ার দিকটিও তুলে ধরলেন টেস্টে ৪০০ রানের ইনিংস খেলা একমাত্র ব্যাটসম্যান।

তিনি বলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার চেষ্টা করায় একজন ক্রিকেটারকেও দায় দিতে পারব না। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা আর পাঁচ-ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার যে অসমতা (আয়ের ক্ষেত্রে), এটা অন্যরকম। ক্রিকেটারদের প্রতি সেই দরদ থাকতে হবে। পাশাপাশি দেশে এটাও নিশ্চিত করতে হবে, ক্রিকেটাররা এবং ভবিষ্যতের ক্রিকেটাররা যেন উপলব্ধি করতে পারে যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্যারিয়ার ও জাতীয় দলের মধ্যে সমন্বয় গড়ার ক্ষেত্রেই লারা তুলে ধরলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মেসিকে।

লারা বলেন, আর্জেন্টিনার দিকে যদি তাকান, মেসি তো বেড়ে উঠেছে ইউরোপে। কিন্তু খেলে আর্জেন্টিনার হয়ে। (ক্লাব ফুটবলে) সে খেলেছে বার্সেলোনা, পিএসজিতে, তাকে খেলতে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার আরও অনেক ফুটবলারই ইউরো খেলে এবং দেশের হয়েও খেলে, সেটায় গর্ব খুঁজে নেয়।অস্ট্রেলিয়া তো কাজটা ঠিকঠাক করতে পারছে। ইংল্যান্ড পারছে। নিজেদের ক্রিকেটারদের দেশের প্রতি অনুগত রাখতে পারছে। আমাদেরকেও সেটির পথ খুঁজে বের করতে হবে। কারও দিকে আঙুল তোলার ব্যাপার নয় এটি। দল হিসেবে, প্রশাসক, কোচ, ক্রিকেটার, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সত্যিকার অর্থেই যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে হৃদয়ে ধারণ করা যায়, অবশ্যই সামনে এগোনোর পথ মিলবে।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন