চাঁদাবাজি বন্ধে গরু পরিবহণে প্রযুক্তির সহায়তা

- আপডেট সময়ঃ ০৪:৫০:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
- / ২০ বার পড়া হয়েছে।

কোরবানির পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি রোধে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছে পুলিশ। গরুর ট্রাকে থাকছে জিপিএস ট্র্যাকার, ড্যাশ ক্যামেরা ও প্রতি ৮-১০টি ট্রাকের সঙ্গে একজন করে পুলিশ সদস্য। আবার এসব ট্র্যাকার ও ড্যাশ ক্যাম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে কেন্দ্রীয় হাইওয়ে পুলিশ। যেকোনো হাটে জোর করে পশুবাহী ট্রাক না ঢোকানো ও সম্ভাব্য ডাকাতির পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে সতর্ক অবস্থানেও থাকছে হাইওয়ে পুলিশ। এ ছাড়া মহাসড়কে মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচল, হাটের নিরাপত্তা ও পশু ব্যবস্থাপনায়ও নেওয়া হচ্ছে কার্যকর বেশ কিছু উদ্যোগ।
প্রতিবছরই ঈদুল আজহা উপলক্ষে পথে পথে পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। হাটে জোর করে পশুবাহী ট্রাক প্রবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটে সহিংসতা। মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টিসহ দুর্বৃত্তদের দ্বারা অর্থ লোপাটের ঘটনাও ঘটে অহরহ। পশু পরিবহন থেকে বিক্রি পর্যন্ত সার্বিক ব্যবস্থাপনা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে এবার সমন্বিতভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জিপিএস ট্র্যাকার, ফড়িয়াদের ডেটাবেজ, আধুনিক ওয়েবসাইটসহ প্রযুক্তি সম্পৃক্ত বেশ কিছু পদক্ষেপের সঙ্গে মহাসড়কে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, পশুবাহী ট্রাক ও বাসে জিপিএস সংযুক্ত ড্যাশ ক্যাম বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই ড্যাশ ক্যামেরা হাইওয়ে পুলিশের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সিস্টেমের (সার্ভার) সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। ফলে বাসে ডাকাতি কিংবা যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেমন হাইওয়ে পুলিশ পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নিতে পারবে। অন্যদিকে চালকরা মাদক গ্রহণ বা হেডফোন কানে দিয়ে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণভাবে যানবাহন চালাচ্ছেন কি না, তাও পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নিতে পারবে পুলিশ।
এ ছাড়া আসন্ন ঈদুল আজহায় মহাসড়কের নিরাপত্তা ও যানবাহনের নির্বিঘœ যাতায়াতের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে। গতানুগতিক নিরাপত্তাব্যবস্থার বাইরে এসে এবার সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার সঙ্গে প্রযুক্তির সংমিশ্রণে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় হাইওয়ে পুলিশপ্রধান।
জানা গেছে, দেশের যেসব জেলা থেকে ঢাকায় কোরবানির জন্য পশু আসে বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, নওগাঁর কিছু অংশ, বগুড়া, লালমনিরহাটসহ দেশের বড় বড় হাটকেন্দ্রিক জেলাগুলোর ফড়িয়াদের ডেটাবেজ করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে হাইওয়ে পুলিশ। স্থানীয় প্রশাসন ও হাট ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও বৈঠক করা হয়। সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওইসব এলাকা ও জেলাগুলোর হাট থেকে ট্রাকে গরু লোড করার পর একসঙ্গে বেশ কিছু ট্রাক নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে ছাড়া হবে। এতে মহাসড়কে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা চাঁদাবাজি রোধ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি রোধে প্রতি ৮-১০টি ট্রাকের বহরে একজন করে পুলিশ সদস্য দেওয়া হবে।
গত ১০ মে হাইওয়ে পুলিশের তথ্যসমৃদ্ধ ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ইন্টারেকটিভ ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়েছে। এই ইন্টারেকটিভ ওয়েবসাইট প্রযুক্তিনির্ভর ও তথ্যবহুল একটি প্ল্যাটফর্ম। মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য এটি অত্যন্ত সহায়ক হবে বলেও ধারণা পুলিশের। এই ওয়েবসাইটে হাইওয়ে থানাসহ সংশ্লিষ্ট থানা, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, রেস্টুরেন্ট, পেট্রোলপাম্প, ওয়ার্কশপ এবং গরুর হাটের জিও লোকেশন, যোগাযোগ নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য থাকবে। ব্যবহারকারীর বর্তমান অবস্থান থেকে দূরত্ব ও রুট নির্দেশনাও থাকবে ওয়েবসাইটটিতে।
কোরবানিকেন্দ্রিক হাইওয়ে পুলিশের যত আয়োজন : গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অস্থায়ীভাবে সাব-কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হবে, যাতে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের তথ্যগুলো সহজেই পাওয়া যায়। কুইক রেসপন্স টিম থাকবে, তারা মোটরসাইকেল ডিউটি করবে, মহাসড়কে যদি বেশি যানজট তৈরি হয়, তাহলে যেন সহজেই পৌঁছাতে পারে। রাতে চলাচলরত বাসে যাত্রীদের ভিডিও চিত্র ধারণ করা। মহাসড়কসংলগ্ন যেসব স্থানে পশুর হাট বসবে, সেসব স্থানে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা। মহাসড়কে অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য হাইওয়ে পুলিশের ইন্টেলিজেন্সের একাধিক টিম মহাসড়কে কাজ করবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে মহাসড়কে যাতে কোনোপ্রকার চাঁদাবাজি না হয়, সেজন্য হাইওয়ে পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি করা। মহাসড়কে অবৈধ থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। ঈদের আগে তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, লরি ও মালবাহী ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ঈদের আগে ও পরের সাত দিন মহাসড়কে সুনির্দিষ্ট পূর্ব তথ্য ছাড়া এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া যানবাহন না থামানো ও চেকিং না করা।
এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয়ে কমিউনিটি পুলিশিং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করা হবে। সরকারি রেকার ছাড়াও সমন্বয়ের মাধ্যমে বেসরকারি রেকার ও ক্রেনগুলো প্রস্তুত রাখা হবে। অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হবে। বাসস্ট্যান্ড ও বাজারে যেখানে লোকসমাগম বেশি থাকে, সেখানে স্পেশাল টিম মোতায়েন করা হবে। জেলা, মেট্রোপলিটন, নৌ, শিল্পপুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
কোরবানি ঈদের সময় মহাসড়কে চলাচলকারী পশুবোঝাই ট্রাক রাস্তায় থামানো যাবে না উল্লেখ করে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (এইচআর অ্যান্ড মিডিয়া) মো. শামসুল আলম জানান, এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাইওয়ে পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যে হাটের জন্য পশুবোঝাই ট্রাক যাবে, শুধু সেই হাটেই থামবে। এ ক্ষেত্রে ট্রাকের সামনে ব্যানারে হাটের নাম লিখে রাখতে হবে। আর এসব ট্রাকের নিরাপত্তা দিতে মহাসড়কের পথে পথে বিভিন্ন পয়েন্টে খোলা হবে কন্ট্রোল রুম। কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে হাইওয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। এসব কার্যকর করতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। পশু ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য হাইওয়ে পুলিশের লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। যেখানে প্রতিটি থানা ও কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর দেওয়া থাকবে। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে মহাসড়কের ওপর বা তার পাশে চিহ্নিত সম্ভাব্য ২১৭টি পশুর হাট ইজারা প্রদান না করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।