টাঙ্গুয়ার হাওরে নিষেধাজ্ঞা না মেনে চলছে হাউসবোট, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

- আপডেট সময়ঃ ১০:৪৫:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
- / ৯ বার পড়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা মানছেন না হাউসবোট মালিক ও পর্যটকরা। অনিয়ন্ত্রিত হাউসবোট চলাচলে হিজল-করচ গাছ নষ্ট হয়ে হুমকিতে পড়ছে হাওরের জীববৈচিত্র্য।
স্থানীয় ও পর্যটকরা জানান, স্বচ্ছ পানি, মেঘালয় পাহাড় আর নীল আকাশের ওপর সাদা মেঘের খেলা এমন সৌন্দর্যের দেখা মেলে টাঙ্গুয়ার হাওরে। ১০০ কিলোমিটারের অধিক জায়গাজুড়ে দেশের সর্ববৃহৎ জলাভূমিতে এখন ভরা যৌবন। বর্ষাকালে এ টাঙ্গুয়ার হাওর সাজে অপরূপ রূপে। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা বিলাসবহুল হাউসবোট ও ছোট-বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে হাওরে ঘুরতে আসেন। কেউ হিজল-করচের ভিতর দিয়ে নৌকা নিয়ে ঘুরাঘুরি করছেন। কেউবা আবার ওয়াচ টাওয়ারের ওপর থেকে লাফ দিয়ে পানিতে পড়ছেন। গলা ছেড়ে গান ধরেন কেউ কেউ।
এদিকে হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২১ জুন ১৩ নির্দেশনা জারি করে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে ৫ নম্বর নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, হাওরে পর্যটকরা ঘুরতে এসে গাছকাটা, গাছের ডাল ভাঙা বা বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যাবে না। অথচ পর্যটকরা হাওরে অবাধে হিজল-করচ গাছের ওপর উঠেন। গানের তালে হিজল-করচের ডাল ভেঙে হাওরের বিপর্যয় ডেকে আনছেন। অন্য নির্দেশনাও মানছেন না তারা।
পরদিন ২২ জুন রাতে হাওর এলাকার প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশের ক্ষতি রোধে ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের সংরক্ষিত এলাকায় পর্যটকবাহী হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। সে নিষেধাজ্ঞাও মানছে না হাউসবোট মালিক ও পর্যটকরা।
কুমিল্লা থেকে ঘুরতে আসা সায়মন হোসেন বলেন, অনেক কষ্ট করে হাওরে ঘুরতে এসেছি। এখন যদি বন্ধুরা মিলে হাওরের পানিতে আনন্দ করতে না পারি তাহলে আমাদের আসাটা সফল হবে না। তাই যেমন খুশি তেমন করে উল্লাসে মেতেছি।
ঢাকা থেকে আসা অনিক চৌধুরী বলেন, হিজল-করচ গাছ আর পানি একসঙ্গে আমি এ প্রথম দেখলাম। তাই গাছের ওপর থেকে ঝাপ দিয়ে টাঙ্গুয়ার শীতল পানিতে শরীর ভেজাচ্ছি।
সিলেট থেকে আসা ঝুমন আহমেদ বলেন, বন্ধুদের নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসছি। জেলা প্রশাসনের ১৩ নির্দেশনার বিষয়ে আমরা জানি না।
ঢাকা থেকে আসা মনির বলেন, যদি তারা এমন কোনো নির্দেশনা দিয়ে থাকে তাহলে এখানে তাদের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে সাইনবোর্ড দিতে পারেন। তাদের পক্ষ থেকে জনবল দিতে পারেন। সেই সঙ্গে প্রতিটি হাউসবোটে তাদের নির্দেশনার কথা উল্লেখ থাকলে আমরা সতর্ক থাকতে পারি।
তবে সুনামগঞ্জের হাওর বিশেষজ্ঞ ওয়াবায়দুল হক মিলন বলেন, হাওরের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে। হাওর রক্ষায় যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সেটা আরও আগে করা উচিত ছিল। তবে জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ শুধু কাগজে-কলমে না হয়ে বাস্তবে রূপ পায়।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, হাওর এলাকার প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের সংরক্ষিত এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।