টানা ভারী বর্ষণে ফেনীর জনজীবন একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা আর অবিরাম বৃষ্টির সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কা। এরই মধ্যে ফেনীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং শহরের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, গত বছরের মতো এবারও বড় ধরনের বন্যা দেখা দিতে পারে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ফেনী জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার (৭ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ২৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি বর্ষা মৌসুমে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে আরও একটি পর্যবেক্ষণে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের হিসাবও দেওয়া হয়, যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান। তিনি জানান, আগামী দুই থেকে তিন দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।অবিরাম বৃষ্টিতে ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর পাড় ভেঙে দুটি দোকান নদীতে তলিয়ে গেছে। মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। নদীর পানি বৃদ্ধি ও বাঁধ ভেঙে পড়ায় ফুলগাজী বাজার থেকে রাজেশপুর সড়কের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। নিলক্ষ্মী-গাবতলা সড়কেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফেনীর বিভিন্ন অঞ্চলে শহরের রামপুর, শাহীন একাডেমি রোড, পাঠানবাড়ি, নাজির রোড, মিজান রোড, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, পেট্রো বাংলা এলাকা, শান্তি কোম্পানি রোড, কদলগাজী রোডসহ অসংখ্য রাস্তা হাঁটু থেকে কোমরসমান পানির নিচে ডুবে গেছে। কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানি জমে আছে। নিচতলার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে গেছে। শহরের বড় অংশে ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা এবং অন্যান্য যানবাহন বিকল হয়ে সড়কের পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ফলে যানজট, যান চলাচল সীমিত হওয়া এবং দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং অফিসগামী মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে চরম দূর্ভোগের মুখে পড়েছেন। অনেকেই পলিথিনে বই মুড়িয়ে, জুতা হাতে নিয়ে কোমরসমান পানি পেরিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছেছেন। ফেনীর প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অন্তর্বর্তী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলার ইউএনও সুলতানা নাসরিন কান্তা। তবে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা বোর্ড থেকে এখনো কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।
ফুলগাজীর ইউএনও ফারিয়া ইসলাম জানিয়েছেন, টানা বর্ষণে মুহুরী নদীর পানি আরও বাড়তে শুরু করেছে। সকালে রাজেশপুর সড়কের মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে পড়ার খবরও জানান তিনি। এদিকে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। যদিও কহুয়া নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে, তবে উজানে ভারী বর্ষণ হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।অটোরিকশাচালক বেলায়েত হোসেন জানান, “গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এখনো মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এ বছরও যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে, আবারও বন্যা দেখা দিতে পারে।” তিনি আগেভাগেই আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাওয়ার চিন্তাও করছেন।
ফেনীর নাগরিক সমাজের নেতারা বলছেন, শুধু সাময়িক মেরামত নয়, শহর ও নদী ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত এবং টেকসই উদ্যোগ নিতে হবে। নাহলে প্রতি বছরই ফেনীবাসীকে এমন দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
প্রধান সম্পাদকঃ আবুবকর সিদ্দিক সুমন। নির্বাহী সম্পাদকঃ রুবেল হাসনাইন। বার্তা সম্পাদকঃ রুমি বরুয়া।
গুলশান, ঢাকা-১২১৬, বাংলাদেশ। ইমেইলঃ admin@sylhet21.com,sylhet21.com@gmail.com মোবাইলঃ +1586 665 4225
© 2024 Sylhet21 All Rights Reserved. | Developed Success Life IT