‘নিজের নয়, জনগণের ইচ্ছায়ই সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছি’

- আপডেট সময়ঃ ১০:৩২:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
- / ৬৩ বার পড়া হয়েছে।

নিজের ইচ্ছায় নয়, দেশের জনগণের ইচ্ছায় সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বেরনামাকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটি জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটা (সরকারপ্রধানের পদে বসা) আমার নয়, এটা সেসব মানুষের চাওয়া, যারা পরিবর্তন চেয়েছিলেন। তারা যেভাবে চলতে চান, আমি শুধু তাদের সেই পথে সহায়তা করছি।
দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন অসুবিধার কথাও জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে অসুবিধা অনেক। অনেকেই এটাকে ব্যাহত করতে চায়। বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক উপাদানগুলো পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
গত দেড় দশকে প্রাপ্তবয়স্ক যারা ভোটার হয়েছেন, তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, কেউ ১০ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। কেউ ১৫ বছর ধরেও।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একবার ভাবুন, আপনার ১৮ বছর বয়স হয়েছে, আপনি ভোট দিতে আগ্রহী। কিন্তু আপনি সেই সুযোগ কখনো পাননি। কারণ, সত্যিকার অর্থে কখনো নির্বাচনই হয়নি। এখন তারা ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার ভোট দিতে পারবেন।
এদিকে দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে মালয়েশিয়ার প্রভাব, বিশেষ করে আসিয়ান সভাপতি হিসেবে দেশটির ভূমিকা কাজে লাগানোর কথা বলেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা ও আসিয়ানে নেতৃত্বপূর্ণ অবস্থান আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে দেশটিকে এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়া পুরো আলোচনায় (রোহিঙ্গা ইস্যুতে) তার প্রভাব কাজে লাগাবে যাতে আমরা এই সমস্যা সমাধান করতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তারা এরই মধ্যে দেশে থাকা ১২ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ফলে সমস্যা ক্রমেই আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্র তাদের (রোহিঙ্গা শরণার্থী) দেখভালের সব তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে।
ড. ইউনূস জানান, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজতে আগামী কয়েক মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমটি হবে চলতি মাসের শেষ দিকে কক্সবাজারে। উচ্চস্তরের দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এবং তৃতীয় সম্মেলনটি হবে বছরের শেষ দিকে কাতারের দোহায়।
গত কয়েক বছর ধরে আলোচনা হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উদ্যোগে খুব কমই অগ্রগতি হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের কারণে এটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। দীর্ঘস্থায়ী এই মানবিক সংকট শুধু বাংলাদেশকেই প্রভাবিত করছে না; বরং মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি আসিয়ান সদস্য দেশকেও প্রভাবিত করছে।
মালয়েশিয়া ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রোটোকলের স্বাক্ষরকারী না হলেও মানবিক কারণে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট বহু আগের হলেও ২০১৭ সালে তা চরম আকার ধারণ করে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। সেই অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে গত সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুর ২টায় ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে রওনা দেন ড. ইউনূস। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ড. ইউনূসকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। ওই সময় গান স্যালুট ও গার্ড অব অনারের মাধ্যমে তাকে সম্মান জানানো হয়। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানান।
তিন দিনের সফর চলাকালে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ উচ্চ পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে অংশ নেন ড. ইউনূস। সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি নোট বিনিময় করেছে।
শেষদিন বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টাকে মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হয়। ওই দিনই দেশে ফেরেন প্রধান উপদেষ্টা। রাত সোয়া ৯টায় প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।