০৪:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

নি ষি দ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এখন ভালুকা থানার ওসি

ডেস্ক নিউজ:
  • আপডেট সময়ঃ ০২:২৫:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • / ১৫৮ বার পড়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ প্রশাসনে ওসি পদে এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা মডেল থানার নবনিযুক্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবীরের অতীত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। একাধিক সূত্র দাবি করছে, তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক পদে ছিলেন। যদিও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি, আবার সরাসরি নিশ্চিত করাও হয়নি—ফলে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং ভেটিং রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হুমায়ুন কবীর ২০০২ সালে সিলেটের লালা বাজার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট সিএসবি ও স্থানীয় পুলিশের সাবেক দুই কর্মকর্তাও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে জানা গেছে। তবে পুলিশের আরেকটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তিনি কখনো রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। ভিন্নমুখী এসব তথ্য প্রমাণ করে, নিয়োগের ক্ষেত্রে ভেটিং প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ হয়নি বলেই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমি কোনো ছাত্রলীগ করিনি। যদি কেউ আমার নামে কিছু বলে থাকে, সেটা তাদের ভুল হতে পারে।” যদিও বিষয়টি স্পষ্ট ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার আখতার উল আলম বলেন, “নিয়োগের আগে ভেটিং রিপোর্টের ভিত্তিতেই পদায়ন করা হয়। আপনারা যেটা বলছেন, সেটা খতিয়ে দেখে সত্যতা মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে প্রশ্ন উঠছে—যদি তিনি সত্যিই নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ছিলেন, তবে এমন ব্যক্তি কীভাবে একটি থানার সর্বোচ্চ দায়িত্বে আসীন হন? বিষয়টি শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতাই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রেও গভীর উদ্বেগ তৈরি করে।

অন্যদিকে, গত কয়েক মাসে ময়মনসিংহে একাধিক থানার ওসি যাঁরা আওয়ামী আমলের নেতাদের গ্রেপ্তারে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের একযোগে বদলি করা হয়েছে। বদলির পর এসব থানায় আওয়ামীপন্থী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়া, জামিনে মুক্তি পাওয়া শতাধিক আওয়ামী নেতাকর্মীর ফের আত্মগোপনে যাওয়া, পুলিশের অভ্যন্তরীণ তথ্য ফাঁস হওয়া, এবং জেলগেটেই অর্থ লেনদেনের অভিযোগ নতুন করে প্রশাসনের দায়ভার বাড়িয়েছে। গোপন সূত্রগুলো বলছে, এসব প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব এবং আর্থিক লেনদেন বড় ভূমিকা রাখছে।

সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দাবি, নিয়োগে পেশাগত দক্ষতা ও পূর্বের অভিজ্ঞতাই মূল বিবেচ্য। তবে, অতীত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন একে স্পষ্ট করে দেয় যে, গোটা ভেটিং ব্যবস্থা নিয়েই পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের নিয়োগ শুধু আইনশৃঙ্খলার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না, বরং বর্তমান সরকার যে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার আশ্বাস দিয়ে দায়িত্ব নিয়েছে—তার বাস্তব প্রতিফলন নিয়েও সন্দেহ তৈরি করে।

জনগণের করের টাকায় পরিচালিত একটি সংস্থা হিসেবে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। অতীতে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকলে, সেই তথ্য আড়াল করে দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তি দীর্ঘমেয়াদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে—এমন শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন