পরিযায়ী বেগুনিপিঠ শালিক
- আপডেট সময়ঃ ০২:৩৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
- / ২২ বার পড়া হয়েছে।

পাখিরা তাদের জীবনের প্রয়োজনে পরিযায়ী হয়। তাদের এই পরিযান গন্তব্য নানা দেশে। আমাদের দেশে শীত, গ্রীষ্ম, বসন্ত ও বর্ষার সময় পরিযায়ী পাখিরা আসে। শীতের সময় বিশেষ করে জলচর প্রজাতির পাখিরা আসে।
আবার অনেক প্রজাতির পাখি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার পথে মাঝখানে কোথাও যাত্রাবিরতি করে স্বল্প সময়ের জন্য। এটা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে।
পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে কোনো কোনো প্রজাতি নিয়মিতই আমাদের দেশে আসে। আবার কোনোটি আসে অনিয়মিতভাবে।
পাখিরা যাত্রাবিরতি দেয় সাধারণত খাবার ও বিশ্রামের জন্য। তবে বড় ধরনের ঝড়ের আশঙ্কা থাকলেও পাখিরা বিরতি দেয় নিরাপদ জায়গায়। যেসব পাখি কিছুদিনের জন্য আমাদের দেশে বিরতি দেয়, তাদের আমরা পান্থ পরিযায়ী পাখি বা ‘প্যাসেজ মাইগ্রেন্ট বার্ড’ বলে থাকি। বেগুনি পিঠ শালিক আমাদের দেশে অনিয়মিত বা বিরল পান্থ পরিযায়ী পাখি হতে পারে।
বাংলাদেশে এ পাখি এ পর্যন্ত কয়েকবার দেখা গেছে। বাংলাদেশের সুন্দরবনের হারবেরিয়ায় প্রথমবার একটি বেগুনি পিঠ শালিক দেখা গিয়েছিল। তারপর ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর মধুপুরের শালবনে। ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে প্রথম বেগুনি পিঠ শালিক দেখতে পাই। দুটি ঝাঁকে ৩৫টি পাখি গুনেছিলাম।
পাখিগুলো ওড়ার গতিপথের দিক লক্ষ করে প্রায় ১৫ মিনিট খোঁজ করার পর একটি বড় রেইনট্রি গাছের উঁচু ডালে ছোট ছোট পাঁচ-সাতটি দল খুঁজে পাই। পাখিগুলো তখন ডালে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। কিছু পাখি তাদের শরীরের পালক খুঁটছিল। কয়েকটি ডাকাডাকি করছিল নিচু গলায় সুরেলা স্বরে। কিছুক্ষণ পর কয়েকটি পাখি রেইনট্রি গাছের নিচে অপেক্ষাকৃত মাঝারি উঁচু শেওড়াগাছের পাকা ফল খেতে আসছিল।
কয়েক দিনের পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা গেল, এই পাখিরা গাছের ওপরে থাকতে ভালোবাসে। তবে খাওয়ার প্রয়োজনে ছোট গাছে আসে। নিজেদের একটু আড়াল করে রাখতে ভালোবাসে। ওড়ার সময় ছোট থেকে মাঝারি ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। খুব দ্রুতগতিতে ওড়ে। খাবারের জন্য এদের মাটিতে নামতে দেখা যায়নি। অন্য শালিক প্রজাতি, বিশেষ করে গোশালিক, ভাতশালিক, ঝুঁটিশালিক ও খয়রালেজ কাঠশালিকের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় না। তবে চালচলনের অনেক বৈশিষ্ট্যে খয়রালেজ কাঠশালিকের সঙ্গে মিল আছে। এরা সাধারণত গাছের পাকা ফল খেতে ভালোবাসে। পাকা ফলের গাছে প্রায়ই আসে। সাধারণত সকালের দিকে খাবার খায়। দুপুরে ভরা পাতার গাছের মগডালে বিশ্রাম নেয়।
পুরুষ পাখির ওপরে গাঢ় পালক থাকে, নিচে সাদা। ডানা বেগুনি, সবুজ ও কমলা রঙের। মেয়ে পাখির সাধারণ আকৃতি একই রকম, ওপরে বাদামি, নিচে ধূসর। বন এবং তৃণভূমির মধ্যে খোলা জায়গা পছন্দ করে। তবে খোলা কৃষিক্ষেতে খাবার খেতে যায়। প্রায়ই বিশাল ঝাঁকে জড়ো হয়। এরা বাসা বাঁধে মে-জুন মাসে। বাংলাদেশ বাদে এটি মঙ্গোলিয়া, চীন, কম্বোডিয়া, হংকং, ভারত, ইরান, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, লাওস, নরওয়ে, মায়ানমার, রাশিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশে পাওয়া যায়।




















