প্রেম করে বিয়ের শাস্তি, নবদম্পতিকে জোয়ালে বেঁধে হালচাষ

- আপডেট সময়ঃ ১২:৪৭:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
- / ১১ বার পড়া হয়েছে।

গরু নয়, এবার জোয়াল বেঁধে দেওয়া হলো মানুষের ঘাড়েই। করানো হলো হালচাষ। পেছনে লাঠি আর দড়ি হাতে দাঁড়িয়ে গ্রামবাসী। হালচাষের সময় গরুর বলদকে যেমন মারধর করা হয়ে থাকে, তেমনই করা হচ্ছে ওই দুজনের সঙ্গে। এ দৃশ্য দেখে কেউ হাসছেন, কেউ আবার হাততালি দিচ্ছেন। কোনো অপরাধ নয়, বরং ভালোবেসে বিয়ে করায় এভাবেই এক নবদম্পতিকে শাস্তি দিলেন গ্রামবাসী। ভারতের ওড়িশার রায়গড়া জেলায় এমনি এক অমানবিক ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। নবদম্পতিকে মাঠে নামিয়ে এভাবে লাঞ্ছনার ছবি সামনে আসতেই তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রায়গড়ার কাঞ্জামাঝিরা গ্রামের বাসিন্দা দুই যুবক-যুবতী অনেক দিন ধরে প্রেম করতেন। সম্প্রতি তারা বিয়ে করেন। তবে গ্রামবাসী তাদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিল। কারণ, ছেলেটি মেয়েটির ফুফাত ভাই। স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী এ ধরনের বিবাহকে ‘নিষিদ্ধ’ বলে মনে করা হয়। এই বিয়েকে ‘পাপ’ বলে নবদম্পতিকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসা হয় ধানের খেতে। তাদের ঘাড়ে জোয়াল তুলে দেওয়া হয়। মাঠজুড়ে সেটিকে টেনে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয় নবদম্পতিকে। কিন্তু এখানেই শাস্তি শেষ হয়নি। স্বামী-স্ত্রী যখন হাল টানছিলেন তখন পেছন থেকে তাদের ছড়ি দিয়ে মারতে দেখা যায় কয়েকজনকে। জনসমক্ষে এই হেনস্তার পর দম্পতিকে গ্রামের মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের কথিত ‘পাপমোচনের’ জন্য শুদ্ধীকরণ আচার পালন করানো হয়। পুরো ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে নেটিজেনরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই এই ঘটনাকে বর্বরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এই ঘটনার ভিডিও এবং খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুক্রবার রায়গড়ার জেলা পুলিশ সুপার এস স্বাতী কুমার জানিয়েছেন, পুলিশ ওই গ্রামে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একটি মামলাও করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কারা এই ঘটনা ঘটানোর নেপথ্যে রয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। একই ধরনের আরেকটি ঘটনা এ বছরের জানুয়ারিতে রায়গাদা জেলাতে ঘটেছিল। সেখানে এক নারী ভিন্ন বর্ণের এক পুরুষকে বিয়ে করায় একটি পরিবারের ৪০ জন সদস্যকে ‘শুদ্ধীকরণ’ আচারের অংশ হিসাবে মাথা ন্যাড়া করতে বাধ্য করা হয়েছিল।