ফিরেছে ১৯ জুলাই কেবল ফিরেননি সাংবাদিক তুরাব

- আপডেট সময়ঃ ০১:১৪:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
- / ৯ বার পড়া হয়েছে।

এক বছর পর ফিরেছে জুলাই, আজ ফিরেছে সেই ভয়াল ১৯ তারিখ। কেবল ফিরেনি তুরাব। আর ফিরবেন না কোনো দিন। শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের শাহাদতের ১ বছরপূর্ণ হলো আজ। এই ১ বছরে দেশে অনেক কিছুই হলো। কেবল শেষ হয়নি তুরাব হত্যার বিচার। এক বছরে অর্জন কেবল ২ জন আসামি গ্রেফতার আর তদন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম এলাকা কোর্টপয়েন্টে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের গুলিতে নিহত হন দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান আবু তাহের মো: তুরাব (এ টি এম তুরাব)। এরপর কেটে গেছে এক বছর। এই সময়ে এসএমপির কোতোয়ালি থানা, পিবিআই হয়ে মামলাটি এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-আইসিটিতে। অপেক্ষা বাড়ছে বিচারের। মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান শহীদ তুরাবের মা, স্বামী হত্যার বিচার দেখতে চান বিয়ের ৩ মাসের মাথায় প্রিয়জনকে হারানো স্ত্রী ও তুরাবের ভাই-বোনরা।
গত বছরের ১৯ জুলাই বাদ জুমা নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদে মিছিল বের করে ছিল বিএনপি। তখন ন্যূনতম কোনো উত্তেজনা ছিল না। নিত্যদিনের মতো সেদিনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন অনেক সাংবাদিক। পাশেই ছিল পুলিশের সশস্ত্র অবস্থান। হঠাৎই অতিউৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা এসএমপির তৎকালীন সহকারী কমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীরের মারমুখী আচরণে বদলে যায় পরিস্থিতি। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কোর্টপয়েন্ট এলাকা। ওই পুলিশের কিলিং মিশনের টার্গেটে পড়ে যান সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। পুলিশের ছোড়া ৯৮টি ছররা গুলি বিদ্ধ হয় তুরাবের শরীরে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে জরুরিভিত্তিতে সোবহানীঘাটস্থ ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই আইসিইউতে থাকা অবস্থায় সাংবাদিক তুরাব সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তুরাবের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা: শামসুল ইসলাম বলেন, তুরাবের শরীরে ৯৮টি ছররা গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলিতে তার লিভার ও ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মাথায়ও আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ কারণেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
মাত্র তিন মাস আগে লন্ডনি মেয়ে বিয়ে করেছিলেন সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। লন্ডন যাওয়ার সব প্রক্রিয়া এগিয়েও রেখেছিলেন। হয়তো কয়েক মাসের মধ্যে তার লন্ডন পাড়ি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয় তাকে। এমন ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ে তার পরিবার। লন্ডনে থাকা সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী তানিয়া ইসলাম বিয়ের তিন মাসের মধ্যে হয়ে যান বিধবা। এখনো কাঁদছেন তিনি। কারণ তখন দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় স্বামীর লাশ ও শেষ বিদায়ের দৃশ্য দেখতে পারেননি তিনি। সাংবাদিক তুরাব হত্যার এক বছর পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে তুরাব হত্যা মামলায় এসএমপির তৎকালীন এডিসি সাদেক কাউসার দস্তগীর ও পুলিশ কনস্টেবল উজ্জ্বল সিংহ কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু এসএমপির তৎকালীন ডিসি আজবাহার আলীসহ এজাহারভুক্ত অধিকাংশ আসামি এখনো বাইরে থাকায় ন্যায়বিচার নিয়ে পরিবার ও সহকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয়।
তবে আশার বাণী শুনিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা। তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে বলেও জানান তারা। এ ছাড়া আগামীকাল (২০ জুলাই) প্রথমবারের মতো তুরাব হত্যা মামলার দুই আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। চাওয়া হবে রিমান্ড। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব বলেও জানান তারা।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলম জানান, এই মামলার তদন্ত কাজ একটু জটিল। কারণ প্রতিটি আসামির ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি সম্পদের হিসেবও নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি আসামির পেশাগত কাজ জুলাই-আগস্টে তাদের কার্যক্রম তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তবে এইটুকু বলা যায়, সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার তদন্ত কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আগামীকাল মামলাটির ধার্য তারিখ রয়েছে। ওইদিন আদালতে গ্রেফতারকৃত পুলিশ কর্মকর্তা সাদেক কাউসার দস্তগীর ও উজ্জ্বল সিনহাকে হাজির করা হবে। সেদিন আমরা তাদের রিমান্ডের আবেদন করব। সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই আদালতে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা সম্ভব হবে।
মামলার বাদি সাংবাদিক তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মোহাম্মদ আজরফ (জাবুর) হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ভাইয়ের স্থান কিছুতে পূরণ হয় না। সরকার ও প্রশাসন আমাদের পাশে রয়েছে। কিন্তু মামলার অগ্রগতি নিয়ে আমরা হতাশ। এসএমপি থেকে পিবিআই, সেখান থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন তদন্তাধীন। এক বছরে অগ্রগতি কেবল তদন্ত। প্রকাশ্য দিবালোকে একজন পেশাদার সাংবাদিককে গুলি করে হত্যার মামলার বিচার নিয়ে এত ধীরগতিতে হতাশ হওয়ারই কথা।
মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চান শহীদ তুরাবের মা। তিনি বলেন, তুরাব ছিল আমার নাড়িছেঁড়া ধন। এক বছরে এক মুহূর্তের জন্যও আমি তুরাবকে ভুলতে পারিনি। ছেলের হত্যাকারীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হলে আমার তুরাবের আত্মা শান্তি পাবে।