০৯:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ০২ জুন ২০২৫

বন্যায় বিপর্যস্ত বড়লেখা: ৫০০-এর বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময়ঃ ১০:১৭:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • / ১২ বার পড়া হয়েছে।

টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমা আসা ঢলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পৌরশহরের বাসা-বাড়ি ও দোকানপাট পানি ঢুকেছে। এতে অন্তত ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার (৩১ মে) দুপুর থেকে বড়লেখা পৌর এলাকার হাজীগঞ্জ বাজার, কলেজ রোড, থানা রোড, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা, দক্ষিণভাগ ও রতুলীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি উঠে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এদিকে বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০০ কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খামারিদের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমিও। টানা বৃষ্টিপাতে পানিদার এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব-স্টেশন-১-এ কোমরসমান পানি উঠায় শনিবার বিকেল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় ৮০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। রবিবার সকাল থেকে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও অধিকাংশ এলাকা এখনো অন্ধকারে। ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলা হয়েছে তবে রবিবার (১ জুন) বিকেল পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেননি। ইতোমধ্যে বড়লেখা পৌরসভা ও উজানের ৩টি ইউনিয়নের ১৪৪টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।
বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছায়েদুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘আমার এলাকায় ভারী বর্ষণে প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা বাড়ি, ১০০ বিঘার মতো ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢলে অনেক পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে মৎস্য চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।’ বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ রবিবার (০১ জুন) বিকেলে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের শাহবাজপুর বাজারে ভারী বর্ষণ ও ঢলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে অনেক দোকানে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের মালামাল নষ্ট হয়েছে। ইউনিয়নের পাতন এলাকায় টিলা ধ্বসে একটি পরিবারের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেননি।’ বড়লেখা উপজেলা হাজীগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সদস্য সচিব আব্দুল হাছিব বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও ঢলের পানি বড়লেখা পৌর শহরের দোকানে ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাৎক্ষণিভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বড়লেখা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর অফিসে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় বিতরণের জন্য ৩০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১৬০টি জারিক্যান, ৫০ কেজি ব্লিচিং পাউডার মজুদ রয়েছে। বন্যা আক্রান্ত এলাকায় এগুলোর বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হলে জেলা অফিসে সংরক্ষিত মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।’ বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও ঢলের কারণে দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দিতে ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও কেউ উঠেননি। আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ-সামগ্রী মজুত আছে। রবিবার তৎক্ষণিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমটির সভা হয়েছে। সর্ব সম্মতিক্রমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বড়লেখা পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়নের ১৪৪টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’ এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দুইদিন অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বন্যায় বিপর্যস্ত বড়লেখা: ৫০০-এর বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস

আপডেট সময়ঃ ১০:১৭:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমা আসা ঢলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পৌরশহরের বাসা-বাড়ি ও দোকানপাট পানি ঢুকেছে। এতে অন্তত ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার (৩১ মে) দুপুর থেকে বড়লেখা পৌর এলাকার হাজীগঞ্জ বাজার, কলেজ রোড, থানা রোড, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা, দক্ষিণভাগ ও রতুলীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি উঠে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এদিকে বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০০ কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খামারিদের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমিও। টানা বৃষ্টিপাতে পানিদার এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব-স্টেশন-১-এ কোমরসমান পানি উঠায় শনিবার বিকেল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় ৮০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। রবিবার সকাল থেকে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও অধিকাংশ এলাকা এখনো অন্ধকারে। ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলা হয়েছে তবে রবিবার (১ জুন) বিকেল পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেননি। ইতোমধ্যে বড়লেখা পৌরসভা ও উজানের ৩টি ইউনিয়নের ১৪৪টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।
বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছায়েদুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘আমার এলাকায় ভারী বর্ষণে প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা বাড়ি, ১০০ বিঘার মতো ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢলে অনেক পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে মৎস্য চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।’ বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ রবিবার (০১ জুন) বিকেলে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের শাহবাজপুর বাজারে ভারী বর্ষণ ও ঢলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে অনেক দোকানে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের মালামাল নষ্ট হয়েছে। ইউনিয়নের পাতন এলাকায় টিলা ধ্বসে একটি পরিবারের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেননি।’ বড়লেখা উপজেলা হাজীগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সদস্য সচিব আব্দুল হাছিব বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও ঢলের পানি বড়লেখা পৌর শহরের দোকানে ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাৎক্ষণিভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বড়লেখা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর অফিসে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় বিতরণের জন্য ৩০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১৬০টি জারিক্যান, ৫০ কেজি ব্লিচিং পাউডার মজুদ রয়েছে। বন্যা আক্রান্ত এলাকায় এগুলোর বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হলে জেলা অফিসে সংরক্ষিত মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।’ বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও ঢলের কারণে দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দিতে ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও কেউ উঠেননি। আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ-সামগ্রী মজুত আছে। রবিবার তৎক্ষণিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমটির সভা হয়েছে। সর্ব সম্মতিক্রমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বড়লেখা পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়নের ১৪৪টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’ এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দুইদিন অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা

নিউজটি শেয়ার করুন