বাংলাদেশের পাসপোর্টের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের দরজা

- আপডেট সময়ঃ ১০:২৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
- / ১১ বার পড়া হয়েছে।

বাংলাদেশের পাসপোর্টের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের দরজা। বাংলাদেশিদের জন্য ছোট হয়ে আসছে বিশ্ব। ছোট ছোট দেশও এখন বাংলাদেশীদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশীদের ভিসা দিতে অনেক দেশ দীর্ঘসূত্রতায় ফেলছে। দিতে চায় না পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও ট্যুরিস্ট ভিসা আর ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাড়তি কড়াকড়ি চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশীদের ভিসা বন্ধ করে দেয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে অপরাধপ্রবণতা। ফলে কূটনৈতিকভাবে সম্পর্ক ভালো হওয়ার পরও বিভিন্ন কারণে বন্ধ হচ্ছে অনেক দেশের ভিসা। ইন্দোনেশিয়া গত তিন বছর বাংলাদেশীদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ রেখেছে। কারণ মানব পাচারকারীরা অস্ট্রেলিয়া যেতে ইন্দোনেশিয়াকে মানব পাচারের রুট হিসেবে ব্যাপক হারে ব্যবহার করছিল। তারপর দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অন অ্যারাইভাল ভিসা চালুর জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলেও কাজ হয়নি ইন্দোনেশিয়া। তবে এখন আবেদন করার পর যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হলে দুই-তিন মাসে ভিসা পাওয়া যায়। একইভাবে ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশিদের না ফেরার অভিযোগ রয়েছে। কারণ ট্যুরিস্ট ভিসায় ওই দেশে গিয়ে মেয়াদ শেষ হলেও অনেকেই ফেরেনি। বরং তাদের মধ্যে কেউ কেউ সেখানে কাজ করছে এবং কেউ অবৈধভাবে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে। বাংলাদেশীদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে সে কারণে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভিয়েতনাম।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের শীর্ষ শ্রমবাজার সৌদি আরবে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের জন্য ওয়ার্ক ভিসা, ওমরাহ, পারিবারিক ভিজিট এবং ব্যবসাসংক্রান্ত ভিসায় সাময়িক স্থগিতাদেশ চলছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতও (ইউএই) বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ রয়েছে। তৃতীয় শীর্ষে থাকা ওমানের বাজারও গত বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। আর গত বছরের জুন থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে আছে। তাছাড়া ইতালির কাজের ভিসা পেতেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও ইতালির কাজের ভিসা মিলছে না। আর জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় চাহিদামতো পাঠানো যাচ্ছে না কর্মী। আর ইউরোপের ক্ষেত্রেও মিল নেই প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির।
সূত্র আরো জানায়, পর্যটকের আকর্ষণীয় দেশ কম্বোডিয়ার। প্রায়ই কম্পোডিয়ার সিয়েম-রিপ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পর্যটক যাওয়ার তালিকায় থাকে। সব দেশের সহজ প্রবেশাধিকার থাকলেও দেশটি বাংলাদেশীদের বেলায় হাজার নিয়মকানুন জারি করে রেখেছে। কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশিদের প্রবেশ করতে হলে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হয়। তাছাড়া ভিয়েতনামেও অনেক বাংলাদেশী ঘুরতে যেতেন। কিন্তু গত জানুয়ারিতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশীদের ট্যুরিস্ট ভিসাই বন্ধ করে দিয়েছে। আর দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভারতের ভিসা বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশীদের ঘুরতে ও চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বেশি যাওয়া থাইল্যান্ডও ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর হয়েছে। থাইল্যান্ডে আগে তিন-চার দিনে ভিসা পাওয়া গেলেও এখন হরহামেশাই ভিসা আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সেনজেন দেশ ভ্রমণকারীদের আবেদনও রিজেক্ট হয়ে যাচ্ছে। ভিসা পেতেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আর বাংলাদেশিদের জন্য দুবাই বেশ কিছু দিন বন্ধ রাখার পর এখন সীমিত আকারে ভিসা চালু করেছে। আর সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জন্য আগ্রহের জায়গা উজবেকিস্তান হঠাৎ করেই ইলেকট্রনিক ভিসা ইস্যুর তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দিয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব)-এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে ভিসা না পাওয়ার জন্য ব্যাহত হচ্ছে বাংলাদেশের আউটব্রাউন্ড ট্যুরিজম। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরির পাশাপাশি এখন দুবাই, উজবেকিস্তান, ইজিপ্ট, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান এবং কাতারের ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। আর সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের ভিসা প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। তার বাইরে ভারতের ভিসা বন্ধ। তবে যেসব দেশ এখন বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা। যে দেশগুলোতে ভিসা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেসব দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিসা ইস্যুর বিষয়টি সুরাহা করতে পারে
অন্যদিকে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, ভিসা নিয়ে বিভিন্ন দেশ যে সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেয়,তার জন্য অনেকখানি আমরা দায়ী। এদেশের মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা দায়ী, বিশেষ করে যারা মানুষ পাঠান। যেভাবে নিয়ম মেনে-না মেনে লোকজন যাচ্ছে তাতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।