০৯:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

বিয়ানীবাজারের তিন নদী শুকিয়ে গেছে, জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান আরডিআরসির

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময়ঃ ০৯:০১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৫৮ বার পড়া হয়েছে।

বাংলাদেশের অনেক নদী এখন ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটের মুখে। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিয়ানীবাজার উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা-কুশিয়ারা-সোনাই নদীসহ দেশের ৮১টি নদী শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে।

‘বাংলাদেশের শুকিয়ে যাওয়া নদী’ শিরোনামে একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। সংস্থাটি দেশের পরিবেশ ও নদী নিয়ে গবেষণা করে আসছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, একসময় যেসব নদী কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণ ছিল, আজ সেগুলোর অনেকটাই শুকিয়ে গেছে বা তাদের তলদেশে প্রচণ্ড পলি জমে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

এই গবেষণা অনুযায়ী দূষণ, পলি জমা এবং দ্রুত নগরায়নের কারণে প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।

‘এই অবনতি কৃষি, জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। নদীগুলোর গুরুত্ব শুধু পরিবেশগত নয়, মানবিক জীবনধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত,’ গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

আরডিআরসি জানিয়েছে, শুকিয়ে যাওয়া ৮১টি নদীর তালিকায় রয়েছে সুরমা-কুশিয়ারা-সোনাই নদীসহ আলয়, আত্রাই, বাঘবতী, বাঙালী, বড়াল, বেতনা, ভৈরব, ভদ্রাবতী, ভোলা, ভুল্লী, বিলাস, বুড়িখোরা, চন্দনা, চন্দ্রাবতী, চিকনাই, চিত্রা, চুনা, ধলাই, ধলেশ্বরী, ধরলা, ঢেপা, দুধকুমার, ফটকি, গলঘেসিয়া, গাংনাই, ঘাঘট, গোমতী, গনেশ্বরী, গড়াই ও গুমানী।

এছাড়াও আছে হানু, হরিহর, হিশনা, হোজা, হুরা সাগর, ইছামতী, যমুনার কিছু শাখা, কাহুয়া, কাকসিয়ালি, কালিগঙ্গা, কালপানি, করতোয়া, কাটাখালী, খাকদোন, খোলপেটুয়া, কোহেলিয়া, কপোতাক্ষ, কুলিক, কুমার, মহানন্দা, মানস, মাথাভাঙ্গা, মহিষাবান, মরিচাপ, ময়ূর, মুহুরী ও মুরাদিয়া।

তালিকার বাকি নদীগুলো হলো, নবগঙ্গা, নাগর, নারদ, নরসুন্দা, পদ্মার কিছু শাখা, পাগলা, পুনর্ভবা, সন্ধ্যা, সেলোনিয়া, সাগরখালী, শালিখা, শিব, শোলমারি, শুক, সোমেশ্বরী, সুখদহ, সুরমা, টাঙ্গন, তিস্তা, তিতাস, তুলসীগঙ্গা ও লেঙ্গা।

গবেষণায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-মেঘনা (বিজিএম) অববাহিকার ওপরও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উজানে বাঁধ নির্মাণ ও পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে এসব নদীতে প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এসব নদীর ওপর নির্ভরশীল কোটি কোটি মানুষের জীবনধারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

‘জলস্তর অপ্রত্যাশিতভাবে ওঠানামা করছে, ফলে নদী নির্ভর মানুষগুলোর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। শুধু মানুষই নয়—বন্যপ্রাণী, জলজ বাসস্থান, পুরো প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে,’ বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এ অবস্থায় নদী দূষণ কমানো, ভাঙন রোধ এবং পানির প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের ওপর জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আরডিআরসি।

তবে গবেষণায় এটিও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, শুধু জাতীয় পর্যায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়।

 

বাংলাদেশে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নদী, খাল ও স্রোতধারা রয়েছে। বর্ষাকালে এর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার নৌচলাচলের উপযোগী থাকে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে এই সংখ্যা নেমে আসে মাত্র তিন হাজার ৮০০ কিলোমিটারে।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বিয়ানীবাজারের তিন নদী শুকিয়ে গেছে, জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান আরডিআরসির

আপডেট সময়ঃ ০৯:০১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের অনেক নদী এখন ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটের মুখে। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিয়ানীবাজার উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা-কুশিয়ারা-সোনাই নদীসহ দেশের ৮১টি নদী শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে।

‘বাংলাদেশের শুকিয়ে যাওয়া নদী’ শিরোনামে একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। সংস্থাটি দেশের পরিবেশ ও নদী নিয়ে গবেষণা করে আসছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, একসময় যেসব নদী কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণ ছিল, আজ সেগুলোর অনেকটাই শুকিয়ে গেছে বা তাদের তলদেশে প্রচণ্ড পলি জমে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

এই গবেষণা অনুযায়ী দূষণ, পলি জমা এবং দ্রুত নগরায়নের কারণে প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।

‘এই অবনতি কৃষি, জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। নদীগুলোর গুরুত্ব শুধু পরিবেশগত নয়, মানবিক জীবনধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত,’ গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

আরডিআরসি জানিয়েছে, শুকিয়ে যাওয়া ৮১টি নদীর তালিকায় রয়েছে সুরমা-কুশিয়ারা-সোনাই নদীসহ আলয়, আত্রাই, বাঘবতী, বাঙালী, বড়াল, বেতনা, ভৈরব, ভদ্রাবতী, ভোলা, ভুল্লী, বিলাস, বুড়িখোরা, চন্দনা, চন্দ্রাবতী, চিকনাই, চিত্রা, চুনা, ধলাই, ধলেশ্বরী, ধরলা, ঢেপা, দুধকুমার, ফটকি, গলঘেসিয়া, গাংনাই, ঘাঘট, গোমতী, গনেশ্বরী, গড়াই ও গুমানী।

এছাড়াও আছে হানু, হরিহর, হিশনা, হোজা, হুরা সাগর, ইছামতী, যমুনার কিছু শাখা, কাহুয়া, কাকসিয়ালি, কালিগঙ্গা, কালপানি, করতোয়া, কাটাখালী, খাকদোন, খোলপেটুয়া, কোহেলিয়া, কপোতাক্ষ, কুলিক, কুমার, মহানন্দা, মানস, মাথাভাঙ্গা, মহিষাবান, মরিচাপ, ময়ূর, মুহুরী ও মুরাদিয়া।

তালিকার বাকি নদীগুলো হলো, নবগঙ্গা, নাগর, নারদ, নরসুন্দা, পদ্মার কিছু শাখা, পাগলা, পুনর্ভবা, সন্ধ্যা, সেলোনিয়া, সাগরখালী, শালিখা, শিব, শোলমারি, শুক, সোমেশ্বরী, সুখদহ, সুরমা, টাঙ্গন, তিস্তা, তিতাস, তুলসীগঙ্গা ও লেঙ্গা।

গবেষণায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-মেঘনা (বিজিএম) অববাহিকার ওপরও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উজানে বাঁধ নির্মাণ ও পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে এসব নদীতে প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এসব নদীর ওপর নির্ভরশীল কোটি কোটি মানুষের জীবনধারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

‘জলস্তর অপ্রত্যাশিতভাবে ওঠানামা করছে, ফলে নদী নির্ভর মানুষগুলোর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। শুধু মানুষই নয়—বন্যপ্রাণী, জলজ বাসস্থান, পুরো প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে,’ বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এ অবস্থায় নদী দূষণ কমানো, ভাঙন রোধ এবং পানির প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের ওপর জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আরডিআরসি।

তবে গবেষণায় এটিও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, শুধু জাতীয় পর্যায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়।

 

বাংলাদেশে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নদী, খাল ও স্রোতধারা রয়েছে। বর্ষাকালে এর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার নৌচলাচলের উপযোগী থাকে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে এই সংখ্যা নেমে আসে মাত্র তিন হাজার ৮০০ কিলোমিটারে।

নিউজটি শেয়ার করুন