বিয়ানীবাজারে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে তৎপরতা বেড়েছে, রহস্যে অস্ত্রধারীদের পরিচয়
- আপডেট সময়ঃ ০৩:০৯:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
- / ৪৩ বার পড়া হয়েছে।

বিয়ানীবাজারে পরিত্যক্ত অবস্থায় একের পর এক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করছে আইনশৃংখলা বাহিনী। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণ করা এবং নানা কারনে জনমনে সৃষ্ট ভীতি দূর করতে আইনশৃংখলা বাহিনী এই অভিযান আরোও জোরদার করবে বলে সূত্র জানায়। র্যাব এবং থানা পুলিশ এসব অভিযান পরিচালনা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃংখলা বাহিনীর এই গতির কারণে বিয়ানীবাজারের সাধারণ মানুষের মনে স্বস্থি ফিরছে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানায়।
জানা যায়, বিয়ানীবাজারে বর্তমানে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ১৬১টি। তবে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি এই উপজেলায় বরাবরই খুব বেশি। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে এসব বৈধ-অবৈধ অস্ত্র বেশি ব্যবহৃত হয়। উপজেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও অবৈধ উপায়ে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারীর সংখ্যা পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে বেড়েছে। সর্বশেষ দেশব্যাপী আলোচিত চারখাইয়ের চিনিকান্ডের ঘটনায়ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র এখনো উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন। গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিয়ানীবাজারে বেশকিছু অবৈধ অস্ত্র আছে বলে দাবি করে আসছে উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। তারা দফায়-দফায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর উপজেলার মাথিউরা পূর্বপার গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা সুমন আহমদের বসত ঘর থেকে ৭ রাউন্ড গুলিসহ দু’টি রিভলভার ও বিপুল সংখ্যক রামদা উদ্ধার উদ্ধার করে পুলিশ। ২০২১ সালে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানার কাটাবিল গ্রামের মৃত মদরিছ মিয়ার ছেলে ইসলাম মিয়া (২৮), বিয়ানীবাজার থানার বাঙ্গালহুদা গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে হোসেন আহমদ (৩০) ও একই থানার নয়াগ্রামের মালু হোসেনের ছেলে সাইরুল ইসলাম (৩৫)। গত ২৬ অক্টোবর র্যাবের একটি আভিযানিক দল বিয়ানীবাজার থানার বড়গ্রাম এলাকার জনৈক আলী হোসেনের পরিত্যক্ত পাথর ব্যবসার অফিসে অভিযান চালায়। সেখানে অফিস কক্ষের উত্তর-পূর্ব কোণে ছাপা কালো-খয়েরি কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় একটি পুরোনো মরিচাপড়া কাঠের বাটযুক্ত বিদেশি রূপান্তরিত শর্টগান উদ্ধার করা হয়। বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে লাউতা ইউনিয়নের জলঢুপ কালিবহর এলাকার একটি বাঁশঝাড় থেকে দেশীয় তৈরি ১২ বোরের শটগানটি উদ্ধার করে র্যাব। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিলেটের বিয়ানীবাজার থানা আক্রমণ করে লুটে নেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে একটি এসএমজি রাইফেলের ম্যাগজিন ও চায়না রাইফেলের ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় পরিত্যক্ত অবস্থায় উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বৈরাগীবাজার এলাকা থেকে এগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ছাড়াও বিগত দিনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলামের ছেলে নাবিল আশরাফকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। চলতি বছরের ১৭ আগস্ট রাত ১১টার দিকে র্যাব-৯ সদর কোম্পানির একটি দল টহল ডিউটির সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিয়ানীবাজার পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুপাতলা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালায়। অভিযানে উক্ত এলাকার একটি বাউন্ডারি ওয়ালের পাশে ময়লার স্তুপে রাখা পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় দেশীয় দোনালা বন্দুকটি উদ্ধার করা হয়। আলীনগরের কাঠ বাগান থেকে একটি এয়ারগান উদ্ধার করেছে র্যাব। বিদেশী এই এয়ারগানটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ২৪ নভেম্বর রাত ১টার দিকে এয়ারগানটি উদ্ধার করে র্যাবের একটি অভিযানকারি দল।
এদিকে মালিকবিহীন পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো সাধারণ ডায়রীর মাধ্যমে বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করা হচ্ছে। তবে কারা এসব অবৈধ অস্ত্র বহন করে, তার তদন্ত আর বেশীদূর এগোয়নি। অবৈধ অস্ত্র বহনকারীর অপরাধীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফ উজ্জামান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করা। পুলিশ-র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে চেষ্টা করছে। আমরা অবৈধ অস্ত্র মালিক সন্ধানে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃংখলা বাহিনীর ঝটিকা অভিযান শুরু হবে।



















