বিয়ানীবাজারে দ্রুত বাড়ছে সিজারিয়ান শিশুর জন্ম, গড় ব্যয় ২৩ হাজার টাকা
- আপডেট সময়ঃ ০৩:৩৪:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
- / ২৯ বার পড়া হয়েছে।

বিয়ানীবাজারে দ্রুত হারে বাড়ছে অস্ত্রোপচারে শিশুর জন্ম। গত ১০ বছরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম বেড়েছে ৮ গুণের বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগ সিজার হচ্ছে অপ্রয়োজনীয়। হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবে যা খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে চার গুণ বেশি খরচ হচ্ছে সিজারের ক্ষেত্রে। স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালের তৎপরতা এবং অর্থনীতির অবস্থা উন্নত হওয়াসহ নানা কারণে উপজেলায় বেড়েছে সিজারিয়ান অপারেশন । এখানে রোগী প্রতি সিজারের গড় ব্যয় ২৩ হাজার টাকার কিছু উপরে।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে গত দুই বছরে নরমাল ডেলিভারি চেয়ে সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছে কয়েগকগুণ বেশী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি রোগীদের ভর্তি না রাখায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশু জন্মদান পদ্ধতিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। এজন্য এর প্রবণতাও বাড়ছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। যে হারে সিজারিয়ান ডেলিভারি হচ্ছে, এটাকে উদ্বেগজনক বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে জরুরি প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসা করানো হয় না। গরিব অসহায় মানুষ ভর্তি করাতে চাইলেও অভিভাবকদের কাছে আগেই রিস্কবন্ড নেওয়া হয়। এ কারণে ভয়েই অনেকে হাসপাতাল ছাড়েন।
শেওলার ঢেউনগর গ্রামের নুর উদ্দিন বলেন, সরকারি হাসপাতালে ভালো করে দেখে না। সেবার মান ভালো নয়। এজন্য প্রাইভেট হাসপাতালে আমার মেয়ের প্রথম বাচ্চা সিজারে হয়েছে। গজারাই গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, সরকারি হাসপাতালে সেবার মান ভালো নয়। ভোগান্তি আর ভোগান্তি। এজন্য বেসরকারি হাসপাতালে স্ত্রীকে ভর্তি করিয়েছি। এখানে সিজার করাতে ডাক্তার ও রুম ভাড়ার জন্য গুনতে হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। বড়লেখার চান্দগ্রামের বাসিন্দা তাজির উদ্দিন বললেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর গাইনি বিভাগের স্টাফদের আচরণ ভালো নয়। এজন্য কেউ হাসপাতালে যেতে চায় না। অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক সময় ডেলিভারির রোগীরা শেষ সময়ে বাচ্চা খারাপ করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন তাদের ইমার্জেন্সি সিজার করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, মাতৃত্বকালীন নানা জটিলতায় সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিশুর জন্ম সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হতে পারে। এই সংখ্যা এর বেশি হওয়া উচিত নয়। ২০ বছরের নিচের বয়সী থেকে ৪৯ বছর বয়সী পর্যন্ত সব বয়সী নারীদের মধ্যে সিজারের হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের মধ্যে। সিজারে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এমন মায়েদের প্রায় ৬০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশি পড়াশোনা জানা। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ওজনের মায়েদের প্রায় ৫৯ শতাংশ সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন।
সিজারিয়ান অপারেশনে সন্তান জন্ম দেয়া ফাহিমা বেগম বলেন, বর্তমানে অনেক চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসব করতে চায় না। আমার ক্ষেত্রেই তা হয়েছে। তারা ভাবে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে অপারেশনে সময় কম লাগে এবং অনেকগুলো অপারেশন করা যায়। শিরিন হক নামের আরেক নারী বলেন, গ্রামে ধাত্রী প্রথা ছিল। সেটা হারিয়ে গেছে। অনেক সময় দেখা যায় চিকিৎসককে অগ্রিম টাকা দিতে হয়, না হলে তারা আসতে চান না। কিন্তু কোনো ধাত্রীর ক্ষেত্রে এমন অবস্থা তৈরি হয়নি যে, অর্থ না দিলে মাঝরাতে তিনি আসবেন না।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো: নাসির উদ্দিন বলেন, বিয়ানীবাজারের বেসরকারি হাসাপাতালে সিজার বা অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের পরিমাণ বেশি। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সংখ্যা বেশি। বেসরকারি হাসাপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা হওয়ার সঙ্গে ব্যবসায়ীক স্বার্থ জড়িত।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মনিরুল হক খান বলেন, আমার এলাকায় সিজারিয়ানের সংখ্যা বাড়ছে। কেন বাড়ছে, এটা নিয়ে ভাবতে হবে। সামাজিক প্রচারণা ও পলিসি লেভেল নিয়েও ভাবতে হবে। এখানকার প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান প্রসব বেশি হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।



















