পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের টানা ১৬ বছরে মুখে উ্ন্নয়নের গালগল্প শুনালেও কার্যত অবহেলিত ছিল বিয়ানীবাজার উপজেলা। কথিত উন্নয়নের বুলি প্রচার করে ফায়দা নেয়ারা পলাতক থাকায় এখন মুখ খুলছেন বঞ্চিত জনপদের মানুষ। নানাকারণে এতদিন তারা চুপ ছিলেন।
উন্নয়ন বঞ্চনার এক অনন্য উদাহরণ বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউপির পাতন-ফুলমলিক এলাকা। উপজেলার সবচেয়ে বড় লোকালয় ও প্রান্তিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে গত ৫৪ বছরেও একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ হয়নি। স্থানীয়রা বহু বছর ধরে খালের ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। নানা সময় আশ্বাস থাকলেও বাস্তব পদক্ষেপ এখনো দেখা যায়নি। ফলে এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে যোগাযোগের চরম সমস্যা নিয়েই বেঁচে আছেন।
স্থানীয়রা জানান, ফুলমলিক-ঘাঘুয়া গ্রামের একমাত্র সড়কটি খালের ওপর বিভক্ত। শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার সম্ভব হলেও বর্ষায় তীব্র স্রোত সাঁকো ভেঙে দেয়। এতে অসুস্থদের হাসপাতালে নেওয়া অসম্ভব হয়ে যায় এবং কৃষিপণ্য বাজারে পাঠানোও ব্যাহত হয়।
গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি আকমল আলী বলেন, ‘কিছু মাস আগে গ্রামের এক যুবকের মৃত্যু হলে মরদেহ বাড়ি আনার সময় চরম সংকটের মুখোমুখি হতে হয় স্বজনদের। বাধ্য হয়ে মরদেহ কাঁধে করে নিতে হয়েছিল।’ গ্রামের আব্দুল করিম যোগ করেন, ‘সরকার পরিবর্তন হয়, কিন্তু আমাদের ভাগ্যর পরিবর্তন হয় না।’ স্থানীয়রা আরও জানান, ২০১৯ সালে কয়েক গ্রামের উদ্যোগে ১.৫ লাখ টাকা খরচে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ ও ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় সাঁকো ভেঙে গেলে আবারও বিপাকে পড়তে হয়। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে একই সাঁকো ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলী দীপক কুমার দাস জানান, ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের প্রাথমিক প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত সেতু নির্মাণের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তিন বছর আগে অনূর্ধ্ব একশ মিটার প্রকল্পের আওতায় এ খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, অনুর্ধ্ব একশত মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হলে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুসহ আরও দু’একটি সেতু প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তি করতে আমরা কাজ করছি
গ্রামবাসীরা সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্রুত পাতন-ফুলমলিক খালের ওপর স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। এতে গ্রামের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন সহজ হবে এবং কৃষিপণ্যের সরবরাহ ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এদিকে তিলপাড়া ইউনিয়নের সুনাই নদীতেও একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তিনটি গ্রামের আরোও প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বিবিরাই, বিলবাড়ি ও কালাইম এই তিনটি গ্রামের সাধারণ মানুষ একটি সেতুর অভাবে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াত করতে চরম দূর্ভোগে রয়েছেন। সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করতে হচ্ছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকার মহিলা, স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। তারা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ সাকো পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুনাই নদীর ওই অংশে গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে যাতায়াতের জন্য বাঁশের সাকো তৈরী করেছেন। এ সাকো দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশত মানুষ পারাপার করেন। বিশেষ করে মহিলা ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েন। সাকো পারাপারে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। গ্রামবাসীর দাবি, দ্রুত সময়েরে মধ্যে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করার।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবিরাই গ্রামের এক দুবাই প্রবাসী বলেন, এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ অনেকটাই কমে যাবে। এখানকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, চাকুরীজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ সহ মুমূর্ষু রোগীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন।
তিলপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জানান, ‘এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সুনাই নদীতে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে বিগত দিনে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেও কোন ফল পাইনি। তবে এক্ষেত্রে আমি আবারো স্থানীয় এলাকাবাসী, মুরব্বিবৃন্দ ও স্থানীয় ইউপি সদস্যের সাথে আলাপ করে আবারোও নতুনভাবে আবেদন করার চেষ্টা করবো।’
প্রধান সম্পাদক ঃ আবুবকর সিদ্দিক সুমন , নির্বাহী সম্পাদকঃ রুবেল হাসনাইন , বার্তা সম্পাদক ঃ মিসবাহ উদ্দিন
গুলশান, ঢাকা-১২১৬, বাংলাদেশ। ইমেইলঃ admin@sylhet21.com,sylhet21.com@gmail.com মোবাইলঃ +1586 665 4225