সদকায় মিলে সম্মান ও নিরাপত্তার জীবন

- আপডেট সময়ঃ ১১:৫৯:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
- / ৭ বার পড়া হয়েছে।

মহান আল্লাহকে খুশি করার আশায় সম্পদ, সময়, শ্রম বা সদাচরণ উৎসর্গ করাকে সদকা বলা হয়। মানুষের জীবনে সদকার বহু ইতিবাচক প্রভাব আছে। দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে শান্তি, নিরাপত্তা ও মুক্তিতে সদকার বিশেষ অবদান রয়েছে। যেমন মানুষের জীবন সংকীর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো গুনাহ।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তোমাদের প্রতি যে মুসিবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৩০)
বোঝা যাচ্ছে গুনাহের সঙ্গে মানুষের জীবনে প্রতিবন্ধকতা, ব্যর্থতা ও হতাশার যোগসূত্র রয়েছে। গুনাহ কমে গেলে সমস্যাগুলোও অনেকাংশে কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
সদকা হলো, সেই পানির মতো, যা গুনাহের আগ্রাসী আগুনকে নিভিয়ে দেয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা নেক আমলসমূহ খেয়ে ফেলে, যেমন আগুন জ্বালানি কাঠ খেয়ে ফেলে। দান-খয়রাত গুনাহসমূহকে বিলীন করে দেয়, যেমন পানি আগুনকে বিলীন করে (নিভিয়ে) দেয়। নামাজ মুমিনের নুর (আলো) এবং রোজা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষার ঢাল। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২১০)
মানুষের কল্যাণে কাজ করা এবং মানুষের অভাব নিবারণে চেষ্টা করাও এক ধরনের ইবাদত। এ ধরনের ইবাদত মানুষকে বড় বড় বিপদ থেকে সহজে উত্তরণের রাস্তা করে দেয়। ঢাল হয়ে অকল্যাণের দমকা হাওয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করে। নবীজি (সা.)-এর কাছে প্রথম দিকে জিবরাইল (আ.) এলে তিনি আতঙ্কে পড়ে যান এবং তাঁর সহধর্মিণী খাদিজা (রা.)-এর কাছে গিয়ে বলেন, ‘খাদিজা আমার কী হলো, আমি নিজের ব্যাপারে আশঙ্কাবোধ করছি।’ তখন খাদিজা (রা.) নবীজি (সা.)-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ, আল্লাহ কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না।
আপনি আত্মীয়দের খোঁজখবর নেন, সত্য কথা বলেন, সহায়হীন লোকদের বোঝা লাঘব করে দেন, নিঃস্ব লোকদের উপার্জন করে দেন, মেহমানদের আপ্যায়ন করেন এবং হকের পথে আসা বিপদ-আপদে পতিত লোকদের সাহায্য করে থাকেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯৫৩)
অর্থাৎ এই গুণগুলো মানুষের জীবনকে নিরাপদ করে তোলে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সাহায্য করে। আল্লাহর ক্রোধ থেকে মুক্তি ও অপমৃত্যু থেকে বাঁচার ক্ষেত্রেও সদকা উপকারী আমল। হাদিস শরিফে এসেছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দান-খয়রাত আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি কমিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৬৪)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু উমামা (রা.) বলেন : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সৎকর্ম মানুষের অপমৃত্যুর আশঙ্কা দূর করে, গোপনে সদকা করা আল্লাহর গজব নিবারণ করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা আয়ু বৃদ্ধি করে।’ (তাবরানি)
শুধু আয়ুই বৃদ্ধি করে না, বরং সম্পদ বৃদ্ধি করে, পরিবার-পরিজনের মনে তার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে, যা সুখময় জীবনে সহায়ক। ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি নিজ প্রভুকে ভয় করে এবং আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে, তার আয়ু বৃদ্ধি করা হয়, তার সম্পদ বৃদ্ধি করা হয় এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে ভালোবাসে। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৮)
তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি সুখী ও নিরাপদ জীবন গঠনে সদকা একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে।