সাবেক দূতাবাস কর্মকর্তা লেদার অস্বচ্ছ দৌরাত্ম্যে উত্তাল রাজশাহী।

- আপডেট সময়ঃ ১২:৩১:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
- / ২ বার পড়া হয়েছে।

ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে এক সময় ক্ষমতাসীনদের ‘বিশেষ আনুকূল্যে’ নিযুক্ত কর্মকর্তা ছিলেন আমির হোসেন শুভ, এলাকার পরিচিত নাম লেদা। প্রবাস থেকে ফিরে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার শিরোইল মোল্লামিল পাড়া ঘিরে এখন যত গুঞ্জন, তার শিকড় লেদার অদৃশ্য অর্থ আর প্রভাবেই গাঁথা এমনটাই বলছে স্থানীয়রা।
ব্রুনাইয়ের পদে থাকাকালীন সময় তাঁকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল ভিসা বাণিজ্য ও ঘুষের বাজার। প্রবাসী শাহিনুরসহ একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, রাজনৈতিক ছাতার নিচে লেদা সেসময় অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন। ৫ আগস্টের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান, সরকারের পতন আর দূতাবাস–সংস্রবের ইতি টেনেই তিনি দেশে ফেরেন। তারপর শুরু হয় আরেক দৃশ্যপট।
নিজ এলাকায় ফিরেই পৈত্রিক জমিতে পাঁচতলা ভবন তুলতে হাত দেয় লেদা পরিবার। বড় ও ছোট দুই বোন ভাগবাটোয়ারা চেয়ে আদালতের আশ্রয় নিলে প্রথমে শান্তি-শৃঙ্খলার নির্দেশ, পরে স্থিতি নিষেধ দুটি আদেশই মানেননি লেদা। থানা প্রতিবেদনেও নালিশি জমিতে কাজ বন্ধের সুপারিশ ছিল, কিন্তু নির্মাণকাজ চলে অবাধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জমিতে গেলে লেদা ও তাঁর সহযোগীরা মামলা আর দখল হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন। একই বাড়িতে থাকা তাঁর বোন নাসরিন পারভীন পুচি স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি; আরেক ভাই হাবিবুল্লাহ খান নাটকা জমি দখলে সক্রিয়, বলছেন প্রতিবেশীরা।
সম্পত্তি বিতর্কের সূত্র ধরেই গত বছরের ২৭ আগস্টের পুরোনো একটি রাজনৈতিক মামলায় ডিবি পুলিশ ভুক্তভোগী মেরাজুল ইসলাম বাবুকে ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’ বানিয়ে গ্রেপ্তার করে, এমন অভিযোগ করেছেন বাবুর স্ত্রী সাথী। তাঁর কথায়, “জাতীয় তরুণ সংঘের বহু আগের একটি ছবি আর লেদার প্রভাব-এই দুটো দিয়েই আমার স্বামীকে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে।”
এদিকে লেদার প্রভাব খাটানোর বিস্তর অভিযোগের তালিকায় আছে আওয়ামী লীগের সাবেক রাজশাহী মহানগর যুবলীগ সভাপতি রমজান আলীর ব্যবহৃত জিপ নামমাত্র দামে কেনা, প্রয়াত জামায়াত নেতার ছেলের সঙ্গে ব্যবসায়িক মেলবন্ধন, এমনকি রমজান আলীর বড় ছেলে সোহেলের সঙ্গেও সম্পদ হিসাব দেখভাল করা। দলের ভেতরেই এখন প্রশ্ন, অস্পষ্ট ‘অরফ ডোনেশন’ ফান্ডের টাকা কোথায় গেল? আন্দোলন বিরোধী সেই গোপন তহবিল থেকে কয়েক কোটি টাকা নাকি লেদার হাতেই গায়েব, দাবি করছেন ক্ষুব্ধ ও পলাতক নেতাকর্মীরা।
ভুক্তভোগীরা বণ্টনবিহীন খারিজ বাতিলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দপ্তরে আবেদন করেছেন এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে অনিয়ম জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। আদালতের স্থিতি–নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে থাকলে সংশ্লিষ্ট থানা কি আইনি ব্যবস্থা নেবে এই প্রশ্নও উঠছে জনমনে।
এতসব অভিযোগের মুখেও লেদা দিন দিন যেন আরও আড়াল অভয়ারণ্য তৈরি করছেন। তাঁর বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, দুর্নীতি দমন কমিশন অবিলম্বে সম্পদের উৎস, বৈধতা ও আদালত অমান্যের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে।
আমির হোসেন শুভ ওরফে লেদার বিরুদ্ধে আরও অপ্রকাশিত তথ্য থাকছে আগামী পর্বে।