১১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

সিলেটে গণঅভ্যুত্থানের মামলা থেকে যে ২৮ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করল পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:৫৯:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে।

২০২২ সাল থেকে লন্ডনে আছেন প্রবাসী সাংবাদিক মনোয়ার জাহান চৌধুরী (৪৪)। ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। কিন্তু ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মামলায় তাকে ৪৪ নাম্বার আসামি করা হয়।

মামলার বাদী শেখ শফিউর রহমান কায়েছ এজাহারে উল্লেখ করেন ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ছাত্র আন্দোলনে তিনি দেশিয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ছাত্র জনতার উপর আক্রমণ করেন। কিন্তু বাস্তবে মনোয়ার জাহান চৌধুরী তখন ছিলেন লন্ডনে। উপরে উল্লেখিত ঘটনার সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।

মনোয়ার জাহান চৌধুরীর মত সিলেটের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নিবার্হী প্রকৌশলী, প্রধান প্রকৌশলী, ব্যাংক ম্যানেজার, পেশকার, সিটি করপোরেশনের সুপারভাইজার এমনকি হযরত শাহজালাল (রা.) মাজারের প্রধান খাদেমকেও করা হয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলার আসামি।

নির্দোষ কেউ যেন মামলায় হয়রানির শিকার না হন সেজন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ছাত্র আন্দোলন সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর তদন্ত করছে। এবং তদন্তে ঘটনার সাথে কারও সম্পৃক্তা না পেলে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩এ ধারা মোতাবেক তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করছে আদালতের কাছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শেখ শফিউর রহমান কায়েছের করা এই মামলায় মনোয়ার জাহান চৌধুরীসহ ২৮ আছেন। যাদের এই ঘটনার সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের সবাইকে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩এ ধারা মোতাবেক এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।

অব্যাহতি প্রাপ্ত এই ২৮ জনের মধ্যে আছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন (৪৩), সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ (৪৪), সিলেট স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান (৫৬), সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান (৫৬), নর্থইষ্ট ইউনিভার্সিটি সিলেটের সহকারী অধ্যাপক, মো. সাহাদাৎ হোসেন পারভেজ (৩৪), সিলেট এলজিআরডির নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম ফারুক হোসেন (৫৭), সিলেট এলজিআরডির সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুর হাসান শোভন (৩৮) এলজিআরডি গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান (৪৯), জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের ভারপ্রাপ্ত পেশকার সাধন কুমার চাকমা (৫৮), জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের সহকারী প্রেস অফিসার গোলাম মোস্তফা লিটন (৫৪), ডাচ বাংলা ব্যাংকের শাহজালাল উপশহর ব্যাঞ্চ ম্যানেজার ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যোতি লাল গোস্বামী (৪৭), ডাচ বাংলা ব্যাংকের সুনামগঞ্জ ব্যাঞ্চ ম্যানেজার ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. গোলাম আজাদ (৪৯), সিলেট সিটি করপোরেশনের সুপারভাইজার কাওছার আহমদ (২৭), সেবুল অধিকারী (৪৮) ও চয়ন দাশ (৩৫), সিলেট সিটি করপোরেশনের অফিস সহায়ক মোফাচ্ছর হোসেন (৪১), ফাহিম আহমদ (৩০), জুনায়েদ আহমদ জান্নাতুল ইসলাম (৪৩), সিলেট সিটি করপোরেশনের বাজার আদায়কারী আনোয়ারুল হক (৫৪), সিলেট সিটি করপোরেশনের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জিকরুল ইসলাম (৩০), অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা আব্দুল হাই আজাদ (৬৪), হযরত শাহজালাল (রা.) মাজারের প্রধান খাদেম ও মাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি সামুন মাহমুদ খাঁন (৬৯), লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক মনোয়ার জাহান চৌধুরী, ব্যবসায়ী সৈয়দ ইফতেকার আহমদ এলিছ (৫০), ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. খালেদুজ্জামান খালেদ (৫০), সিম্ফনি মোবাইল ফোন কোম্পানীর ম্যানেজার মো. এমরান হোসেন তানিম (৩৫), দোকানদার হেদায়েত হোসেন খোকন (৬৩) ও ইউসুফ হোসেন (৬২)।

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে হামলার ঘটনার অনেক মামলা হয়েছে। এবং এসব মামলা অসংখ্য আসামীও আছে। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন নিয়ে মামলা বাণিজ্য করতে শুরু করে একটি চক্র। এই চক্রটি যেন কোনো নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করতে না পারে সেজন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। এসব মামলার তদন্ত করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩এ ধারা মোতাবেক মামলায় সংশ্লিষ্ট নয় এমন মানুষকে অব্যাহতি দেবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট কোতোয়ালি থানাধীন ১নং মামলার ২৮ জন নিরীহ আসামিকে অব্যাহতি দিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ওই মামলার বাদী শেখ শফিউর রহমান কায়েছের সাথে কথা বলেও আমরা মামলার ঘটনার সাথে ২৮ জনের কোনো সম্পৃক্ততা পাইনি। এই ২৮ জনের মধ্যে বেশিরভাগই হলে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অফিসার। তাই আমরা আদালতে সুপারিশ করেছি তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য। বাকি যা আছে আদালত যাচাই বাচাই করে দেখবেন। এরকম আরও কয়েকটি মামলার নিরীহ আসামিদের অব্যাহতি প্রদানের আবেদন আদালতে দাখিলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

সিলেটে গণঅভ্যুত্থানের মামলা থেকে যে ২৮ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করল পুলিশ

আপডেট সময়ঃ ০৮:৫৯:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

২০২২ সাল থেকে লন্ডনে আছেন প্রবাসী সাংবাদিক মনোয়ার জাহান চৌধুরী (৪৪)। ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। কিন্তু ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মামলায় তাকে ৪৪ নাম্বার আসামি করা হয়।

মামলার বাদী শেখ শফিউর রহমান কায়েছ এজাহারে উল্লেখ করেন ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ছাত্র আন্দোলনে তিনি দেশিয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ছাত্র জনতার উপর আক্রমণ করেন। কিন্তু বাস্তবে মনোয়ার জাহান চৌধুরী তখন ছিলেন লন্ডনে। উপরে উল্লেখিত ঘটনার সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।

মনোয়ার জাহান চৌধুরীর মত সিলেটের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নিবার্হী প্রকৌশলী, প্রধান প্রকৌশলী, ব্যাংক ম্যানেজার, পেশকার, সিটি করপোরেশনের সুপারভাইজার এমনকি হযরত শাহজালাল (রা.) মাজারের প্রধান খাদেমকেও করা হয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলার আসামি।

নির্দোষ কেউ যেন মামলায় হয়রানির শিকার না হন সেজন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ছাত্র আন্দোলন সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর তদন্ত করছে। এবং তদন্তে ঘটনার সাথে কারও সম্পৃক্তা না পেলে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩এ ধারা মোতাবেক তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করছে আদালতের কাছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শেখ শফিউর রহমান কায়েছের করা এই মামলায় মনোয়ার জাহান চৌধুরীসহ ২৮ আছেন। যাদের এই ঘটনার সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের সবাইকে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩এ ধারা মোতাবেক এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।

অব্যাহতি প্রাপ্ত এই ২৮ জনের মধ্যে আছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন (৪৩), সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ (৪৪), সিলেট স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান (৫৬), সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান (৫৬), নর্থইষ্ট ইউনিভার্সিটি সিলেটের সহকারী অধ্যাপক, মো. সাহাদাৎ হোসেন পারভেজ (৩৪), সিলেট এলজিআরডির নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম ফারুক হোসেন (৫৭), সিলেট এলজিআরডির সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুর হাসান শোভন (৩৮) এলজিআরডি গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান (৪৯), জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের ভারপ্রাপ্ত পেশকার সাধন কুমার চাকমা (৫৮), জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের সহকারী প্রেস অফিসার গোলাম মোস্তফা লিটন (৫৪), ডাচ বাংলা ব্যাংকের শাহজালাল উপশহর ব্যাঞ্চ ম্যানেজার ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যোতি লাল গোস্বামী (৪৭), ডাচ বাংলা ব্যাংকের সুনামগঞ্জ ব্যাঞ্চ ম্যানেজার ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. গোলাম আজাদ (৪৯), সিলেট সিটি করপোরেশনের সুপারভাইজার কাওছার আহমদ (২৭), সেবুল অধিকারী (৪৮) ও চয়ন দাশ (৩৫), সিলেট সিটি করপোরেশনের অফিস সহায়ক মোফাচ্ছর হোসেন (৪১), ফাহিম আহমদ (৩০), জুনায়েদ আহমদ জান্নাতুল ইসলাম (৪৩), সিলেট সিটি করপোরেশনের বাজার আদায়কারী আনোয়ারুল হক (৫৪), সিলেট সিটি করপোরেশনের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জিকরুল ইসলাম (৩০), অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা আব্দুল হাই আজাদ (৬৪), হযরত শাহজালাল (রা.) মাজারের প্রধান খাদেম ও মাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি সামুন মাহমুদ খাঁন (৬৯), লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক মনোয়ার জাহান চৌধুরী, ব্যবসায়ী সৈয়দ ইফতেকার আহমদ এলিছ (৫০), ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. খালেদুজ্জামান খালেদ (৫০), সিম্ফনি মোবাইল ফোন কোম্পানীর ম্যানেজার মো. এমরান হোসেন তানিম (৩৫), দোকানদার হেদায়েত হোসেন খোকন (৬৩) ও ইউসুফ হোসেন (৬২)।

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে হামলার ঘটনার অনেক মামলা হয়েছে। এবং এসব মামলা অসংখ্য আসামীও আছে। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন নিয়ে মামলা বাণিজ্য করতে শুরু করে একটি চক্র। এই চক্রটি যেন কোনো নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করতে না পারে সেজন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। এসব মামলার তদন্ত করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩এ ধারা মোতাবেক মামলায় সংশ্লিষ্ট নয় এমন মানুষকে অব্যাহতি দেবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট কোতোয়ালি থানাধীন ১নং মামলার ২৮ জন নিরীহ আসামিকে অব্যাহতি দিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ওই মামলার বাদী শেখ শফিউর রহমান কায়েছের সাথে কথা বলেও আমরা মামলার ঘটনার সাথে ২৮ জনের কোনো সম্পৃক্ততা পাইনি। এই ২৮ জনের মধ্যে বেশিরভাগই হলে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অফিসার। তাই আমরা আদালতে সুপারিশ করেছি তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য। বাকি যা আছে আদালত যাচাই বাচাই করে দেখবেন। এরকম আরও কয়েকটি মামলার নিরীহ আসামিদের অব্যাহতি প্রদানের আবেদন আদালতে দাখিলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন