১২:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

সিলেটে ছড়িয়ে পড়েছে চর্মরোগ স্ক্যাবিস, শিশুরা বেশি আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার:
  • আপডেট সময়ঃ ০৪:৫৩:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
  • / ৬ বার পড়া হয়েছে।

সিলেটে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে ছোঁয়াচে জাতীয় স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া রোগ। বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া রোগে আক্রান্ত। বিশেষভাবে শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা খুব বেশি দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই-তিন মাস ধরেই স্ক্যাবিস ছড়িয়েছে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায়। বর্তমানে এর প্রকোপ আরও বাড়ায় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ডাবল ডোজ ওষুধ সেবনের পরও সুফল পাচ্ছেন না রোগীরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, গরম-আর্দ্র পরিবেশ এবং পরিচ্ছন্নতার অভাব এই রোগ ছড়ানোর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ। বাসার একজনের স্ক্যাবিস হলে কাপড়সহ সবকিছু গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধোঁয়ে নেওয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সিলেট নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই-তিন মাস ধরেই স্ক্যাবিস আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। সময় যতো গড়াচ্ছে এই রোগে আক্রান্তের হার আরও বাড়ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবনের পরও তা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অনেকে ডাবল ডোজ ওষুধ সেবনের পরও সুফল পাচ্ছেন না। বাসা-বাড়িতে একজন স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হলে ওই পরিবারের সকল সদস্য ক্রমান্বয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন।

নগরীর শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল হক বলেন, প্রথমে পরিবারের এক শিশু স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হন। এরপরে একে একে পরিবারের সবাই এই রোগে আক্রান্ত। দফায় দফায় চিকিৎসা নিয়েও কোনো সুফল হচ্ছে না।

টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, পারিবারের সবাই এই রোগে আক্রান্ত। লোশন ও ওষুধ সেবনের কোনো কাজে আসছে না।

জকিগঞ্জ উপজেলার সদর সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা ফয়েজ আহমদ বলেন, পরিবারের চারটি শিশুই খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত। সম্প্রতি বন্যার পানি আসার পর থেকে পরিবারের বাকি সদস্যরাও একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ওষুধ সেবন করেও প্রতিকার মিলছে না।

জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, গত তিন মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে গড়ে ৮০ জন স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। ডাবল ডোজ দেওয়ার পরেও রোগীদের কাজ করছে না।

তিনি বলেন, এ ধরণের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ওষুধের সংকট দেখা দেয়। পরে অবশ্য সেই সংকট কমেছে।

গোলাপঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন বলেন, প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত।

তিনি বলেন, ওষুধেরও সংকট রয়েছে। স্ক্যাবিসের সকল ধরণের ওষুধও দেয়া যাচ্ছে না। ওয়েনমেন্ট ও ট্যাবলেটের মজুত রয়েছে। লোশনের চাহিদা থাকলেও সেটা রোগীদের সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমান বলেন, স্ক্যাবিস রোগটি নতুন নয়। এটি অনেক পুরাতন এবং এটি নিরাময়যোগ্য। সঠিক চিকিৎসা না নিলে এটি ইনফেকশন হয়ে যায় তখন শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে অনেকেই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। সাধারণত গরম বেশি হলে এই ছোঁয়াছে রোগটি বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, স্ক্যাবিস রোগটি সারা বছরই থাকে, এটি মূলত ব্যাক্তির হাইজিনের উপর নির্ভর করে। এজন্য নিজেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। স্ক্যাবিস পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। তবে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সিলেটে ছড়িয়ে পড়েছে চর্মরোগ স্ক্যাবিস, শিশুরা বেশি আক্রান্ত

আপডেট সময়ঃ ০৪:৫৩:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

সিলেটে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে ছোঁয়াচে জাতীয় স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া রোগ। বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া রোগে আক্রান্ত। বিশেষভাবে শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা খুব বেশি দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই-তিন মাস ধরেই স্ক্যাবিস ছড়িয়েছে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায়। বর্তমানে এর প্রকোপ আরও বাড়ায় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ডাবল ডোজ ওষুধ সেবনের পরও সুফল পাচ্ছেন না রোগীরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, গরম-আর্দ্র পরিবেশ এবং পরিচ্ছন্নতার অভাব এই রোগ ছড়ানোর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ। বাসার একজনের স্ক্যাবিস হলে কাপড়সহ সবকিছু গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধোঁয়ে নেওয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সিলেট নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই-তিন মাস ধরেই স্ক্যাবিস আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। সময় যতো গড়াচ্ছে এই রোগে আক্রান্তের হার আরও বাড়ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবনের পরও তা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অনেকে ডাবল ডোজ ওষুধ সেবনের পরও সুফল পাচ্ছেন না। বাসা-বাড়িতে একজন স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হলে ওই পরিবারের সকল সদস্য ক্রমান্বয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন।

নগরীর শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল হক বলেন, প্রথমে পরিবারের এক শিশু স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হন। এরপরে একে একে পরিবারের সবাই এই রোগে আক্রান্ত। দফায় দফায় চিকিৎসা নিয়েও কোনো সুফল হচ্ছে না।

টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, পারিবারের সবাই এই রোগে আক্রান্ত। লোশন ও ওষুধ সেবনের কোনো কাজে আসছে না।

জকিগঞ্জ উপজেলার সদর সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা ফয়েজ আহমদ বলেন, পরিবারের চারটি শিশুই খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত। সম্প্রতি বন্যার পানি আসার পর থেকে পরিবারের বাকি সদস্যরাও একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ওষুধ সেবন করেও প্রতিকার মিলছে না।

জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, গত তিন মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে গড়ে ৮০ জন স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। ডাবল ডোজ দেওয়ার পরেও রোগীদের কাজ করছে না।

তিনি বলেন, এ ধরণের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ওষুধের সংকট দেখা দেয়। পরে অবশ্য সেই সংকট কমেছে।

গোলাপঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন বলেন, প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত।

তিনি বলেন, ওষুধেরও সংকট রয়েছে। স্ক্যাবিসের সকল ধরণের ওষুধও দেয়া যাচ্ছে না। ওয়েনমেন্ট ও ট্যাবলেটের মজুত রয়েছে। লোশনের চাহিদা থাকলেও সেটা রোগীদের সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমান বলেন, স্ক্যাবিস রোগটি নতুন নয়। এটি অনেক পুরাতন এবং এটি নিরাময়যোগ্য। সঠিক চিকিৎসা না নিলে এটি ইনফেকশন হয়ে যায় তখন শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে অনেকেই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। সাধারণত গরম বেশি হলে এই ছোঁয়াছে রোগটি বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, স্ক্যাবিস রোগটি সারা বছরই থাকে, এটি মূলত ব্যাক্তির হাইজিনের উপর নির্ভর করে। এজন্য নিজেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। স্ক্যাবিস পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। তবে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন