সিলেটে নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে, সিসিকের কন্ট্রোল রুম চালু

- আপডেট সময়ঃ ০৮:৫৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
- / ১৪ বার পড়া হয়েছে।

টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে সিলেটের প্রায় সব নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। তবে এখনো কোনো নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকাতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (৩১ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেট শহরজুড়ে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের নদ-নদীতে পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা আছে বলেও জানিয়েছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে সিলেট নগরীতে গত ২৪ ঘণ্টার টানা অতি বৃষ্টির কারণে নগরীজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। শনিবার (৩১ মে) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেটে ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।
সুরমা নদীর তীরে সিলেট নগরীর অবস্থান। তাই এই নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে নগরী প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা থাকে বেশি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১.৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও ভারী বর্ষণে নগরীর ড্রেন-খাল ও ছড়া উপচে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। বিভিন্ন জায়গায় হাঁটু-পানি জমে গেছে। অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন। টানা বৃষ্টিপাত হওয়াতে পানি নামতেও দেরি হচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, নগরীর আম্বরখানা-বিমানবন্দর প্রধান সড়ক, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও নগরীর হাওয়াপাড়া, জালালাবাদ, পাঠানটুলা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, টিলাগড়, মেজরটিলা, শাহপরাণসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
নগরীর জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে খোলা হয়েছে একটি বিশেষ জরুরি কন্ট্রোল রুম। সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি (কক্ষ নং ২০৫) কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। জরুরি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা: তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর, যোগাযোগ: ০১৭১১৯০৬৬৪৭, সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন, প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, মোবাইল: ০১৭১৩৩১১৫২৬, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন, মোবাইল: ০১৭৬৯০০৫৮৫৬
সিসিকের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতি সরাসরি পরিদর্শন করবেন এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৫টার মধ্যে সকল ওয়ার্ড থেকে জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনের অগ্রগতির প্রতিবেদন সিসিকের আইসিটি শাখার ইমেইলে (1gcc1@lgd.gov.bd) পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, দুইদিন যাবৎ সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টি থামলেই দ্রুত পানি নেমে যাবে। জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি কন্ট্রোল রুম গঠন করা হয়েছে।
অপরদিকে টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও কানাইঘাট উপজেলার নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকলেও এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তবে ইতোমধ্যে এসব উপজেলার অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, সিলেটে টানা বৃষ্টি হচ্ছে এবং ভারতেও বৃষ্টিপাত চলমান আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৪১০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই ভারতের পাহাড়ি ঢলও বাড়ছে। তবে এখনো সিলেটের কোনো নদীর পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তবে কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে আসছে। তাই বন্যার শঙ্কা রয়েছে। তাই এসব নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে বিশেষভাবে সর্তক থাকতে হবে।