০৫:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

সিলেটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিলে নেতৃত্ব দেন তাহমিদ

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময়ঃ ০৫:৪১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৯ বার পড়া হয়েছে।

সিলেটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিলের নেতৃত্বে দানকারীর পরিচয় মিলেছে। তার নাম জাহিদুল হক তাহমিদ (৩৪)। বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চিনি ছিনতাই মামলার পলাতক প্রধান আসামি এবং হত্যাসহ ৫ মামলার এজহারভুক্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী তাহমিদ।

বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি তাহমিদ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের পলাতক সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের বলয়ের অনুসারী। কিন্তু তিনি নগরীতে আত্মগোপন থেকেই লন্ডনে পলাতক বরখাস্তকৃত মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের নির্দেশে মাঝে মধ্যেই জঙ্গি মিছিল বের করে। বিয়ানীবাজারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পল্লবের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি তাহমিদ।

সূত্র জানায়, পলাতক অবস্থায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ক্যাডার তাহমিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়াতে বেশ সক্রিয়। গত ২৩ মার্চ রোববার ভোরে সিলেট নগরীতে তার নেতৃত্বে ২-৩ মিনিটের এক ঝটিকা জঙ্গি মিছিল হয়। এসময় তার সাথে ছিলেন মুখোশ পড়া ১৫/২০ জন। একাধিক হাইয়েস করে নগরীর মিরাবাজার এসে নেমেই জঙ্গি মিছিল বের ২-৩ মিনিট পর তারা হাইয়েস করে পালিয়ে যায়। মিছিল পরবর্তী ছাত্রদল-যুবদল নেতাকর্মীরা সোচ্চার হলে তাহমিদ এবং তার সহযোগীরা ফোন করে তাদের হুমকি দেয়। প্রবাসী ছাত্রদল নেতা জাহেদ হাসান সুমনকে ম্যাসেঞ্জারে ফোন করে খুন করার কথা বলে। তার এমন হুমকির ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে।

জানা যায়, আন্ত:জেলা ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য জাহিদুল হক তাহমিদকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিয়ানীবাজার পৌর শহরের নিদনপুর গ্রামের এ ক্যাডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার আগেও অপরাধ কর্মকাণ্ডে বেপরোয়া ছিল। তিনি সর্বশেষ আলোচনায় আসে চিনি ছিনতাইকানণ্ডে। গত বছরের জুন মাসে প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে চিনি ভর্তি ট্রাক ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেয়। এরপর চিনি ভাগ-বাটোয়ারা থেকে শুরু করে ছিনতাই ঘটনার সব তথ্য ভাইরাল হলে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে তাহমিদ। এ ঘটনায় তৎকালীন সময়ে উপজেলা ও পৌর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তবে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা হওয়ায় তাকে রিমান্ডে নেয়া সম্ভব হয়নি। ছিনতাইকাণ্ডে ব্যবহৃত তার সাথে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত উপজেলা নির্বাচনে মুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মারধর করে। ওই নির্বাচনের ২-৩দিন পর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নানকে মারধর করে চিরতরে পঙ্গু করার নেতৃত্ব দেয় সে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার আগে সে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন জানান, মাত্র ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা তাহমিদ ছিল নিষিদ্ধ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের সেবায়েত। পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে জমিজমা বিক্রি করে তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেন অভিভাবকরা। তবে তাহমিদ ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে সব টাকা নিয়ে দেয় রাহেলকে। মূলত রাহেলই তাকে একক ইচ্ছায় উপজেলা ছাত্রলীগের পদে নিয়ে আসে।

থানা পুলিশ সূত্র জানায়, চিনি ছিনতাই এবং আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে। তাছাড়া ৫ আগস্ট পরবর্তী তার বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরকসহ মোট ৫টি মামলা তদন্তাধীন।ছিনতাই হওয়া চিনির মালিক বদরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পুর্ব পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হুমকি অব্যাহত রাখে ছিনতাইকাণ্ডে প্রধান হোতা তাহমিদ। রাহেল সিরাজও তাকে ফোন করে মামলা প্রত্যাহারের চাপ দেন।বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফ উজ্জামান জানান, জাহিদুল হক তাহমিদসহ পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

সিলেটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিলে নেতৃত্ব দেন তাহমিদ

আপডেট সময়ঃ ০৫:৪১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

সিলেটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিলের নেতৃত্বে দানকারীর পরিচয় মিলেছে। তার নাম জাহিদুল হক তাহমিদ (৩৪)। বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চিনি ছিনতাই মামলার পলাতক প্রধান আসামি এবং হত্যাসহ ৫ মামলার এজহারভুক্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী তাহমিদ।

বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি তাহমিদ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের পলাতক সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের বলয়ের অনুসারী। কিন্তু তিনি নগরীতে আত্মগোপন থেকেই লন্ডনে পলাতক বরখাস্তকৃত মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের নির্দেশে মাঝে মধ্যেই জঙ্গি মিছিল বের করে। বিয়ানীবাজারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পল্লবের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি তাহমিদ।

সূত্র জানায়, পলাতক অবস্থায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ক্যাডার তাহমিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়াতে বেশ সক্রিয়। গত ২৩ মার্চ রোববার ভোরে সিলেট নগরীতে তার নেতৃত্বে ২-৩ মিনিটের এক ঝটিকা জঙ্গি মিছিল হয়। এসময় তার সাথে ছিলেন মুখোশ পড়া ১৫/২০ জন। একাধিক হাইয়েস করে নগরীর মিরাবাজার এসে নেমেই জঙ্গি মিছিল বের ২-৩ মিনিট পর তারা হাইয়েস করে পালিয়ে যায়। মিছিল পরবর্তী ছাত্রদল-যুবদল নেতাকর্মীরা সোচ্চার হলে তাহমিদ এবং তার সহযোগীরা ফোন করে তাদের হুমকি দেয়। প্রবাসী ছাত্রদল নেতা জাহেদ হাসান সুমনকে ম্যাসেঞ্জারে ফোন করে খুন করার কথা বলে। তার এমন হুমকির ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে।

জানা যায়, আন্ত:জেলা ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য জাহিদুল হক তাহমিদকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিয়ানীবাজার পৌর শহরের নিদনপুর গ্রামের এ ক্যাডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার আগেও অপরাধ কর্মকাণ্ডে বেপরোয়া ছিল। তিনি সর্বশেষ আলোচনায় আসে চিনি ছিনতাইকানণ্ডে। গত বছরের জুন মাসে প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে চিনি ভর্তি ট্রাক ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেয়। এরপর চিনি ভাগ-বাটোয়ারা থেকে শুরু করে ছিনতাই ঘটনার সব তথ্য ভাইরাল হলে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে তাহমিদ। এ ঘটনায় তৎকালীন সময়ে উপজেলা ও পৌর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তবে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা হওয়ায় তাকে রিমান্ডে নেয়া সম্ভব হয়নি। ছিনতাইকাণ্ডে ব্যবহৃত তার সাথে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত উপজেলা নির্বাচনে মুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মারধর করে। ওই নির্বাচনের ২-৩দিন পর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নানকে মারধর করে চিরতরে পঙ্গু করার নেতৃত্ব দেয় সে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার আগে সে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন জানান, মাত্র ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা তাহমিদ ছিল নিষিদ্ধ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের সেবায়েত। পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে জমিজমা বিক্রি করে তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেন অভিভাবকরা। তবে তাহমিদ ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে সব টাকা নিয়ে দেয় রাহেলকে। মূলত রাহেলই তাকে একক ইচ্ছায় উপজেলা ছাত্রলীগের পদে নিয়ে আসে।

থানা পুলিশ সূত্র জানায়, চিনি ছিনতাই এবং আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে। তাছাড়া ৫ আগস্ট পরবর্তী তার বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরকসহ মোট ৫টি মামলা তদন্তাধীন।ছিনতাই হওয়া চিনির মালিক বদরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পুর্ব পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হুমকি অব্যাহত রাখে ছিনতাইকাণ্ডে প্রধান হোতা তাহমিদ। রাহেল সিরাজও তাকে ফোন করে মামলা প্রত্যাহারের চাপ দেন।বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফ উজ্জামান জানান, জাহিদুল হক তাহমিদসহ পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন