০৯:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

সিলেট ওসমানী হাসপাতালের অকেজো মর্গের ফ্রিজ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ১২:১১:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
  • / ১৩ বার পড়া হয়েছে।

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মরদেহ সংরক্ষণের একমাত্র ভরসা ছিল দুটি ফ্রিজ। দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিজ দুটি অচল হয়ে পড়ায় এখন মরদেহ রাখা হচ্ছে খোলা জায়গায়, যা শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, ফরেনসিক বিশ্লেষণেও সৃষ্টি করছে জটিলতা। শুধু তাই নয় ময়নাতদন্ত যেখানে সম্পন্ন করা হয় সেখানকার ফ্রিজটিও গত কয়েকমাস থেকে অকেজো রয়েছে।

ওসমানী হাসপাতাল সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, মর্গে থাকা একটি ফ্রিজে দুই ভাগে সর্বমোট ১২টি মরদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। অপর ফ্রিজটিতে প্রতি চেম্বারে দুইটি করে সর্বমোট চারটি মরদেহ রাখা যেত। অর্থাৎ দুটি ফ্রিজ মিলিয়ে একসঙ্গে ১৬টি মরদেহ সংরক্ষণের সক্ষমতা ছিল। তবে বর্তমানে একটি ফ্রিজ একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে এবং অন্যটিতেও কার্যকরভাবে মাত্র দুইটি মরদেহ রাখা যাচ্ছে। একই অবস্থা ময়নাতদন্তের ঘরেও। সেখানে ৩টি মরদেহ সংরক্ষণের ফ্রিজটি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট রয়েছে।

ফলে প্রতিদিন মর্গে আসা মরদেহগুলো ঠাণ্ডা ও সংরক্ষিত পরিবেশে না রেখে খোলা জায়গায় রাখতে হচ্ছে, যা থেকে দ্রুত পচন ধরে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। একইসঙ্গে ময়নাতদন্ত এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণেও দেখা দিচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের এক কর্মী জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ফ্রিজগুলোর কমপ্রেসারে গ্যাসসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। কখনও কখনও মেকানিক এনে সাময়িকভাবে সচল করা গেলেও কয়েক দিনের মধ্যেই তা আবার বিকল হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, আমাদের অনেক সময় মরদেহ ট্রলির ওপর রেখেই সংরক্ষণ করতে হয়।

এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিলেট বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। তাই এমন পরিস্থিতিকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম অবহেলা হিসেবে দেখছেন অনেকেই। দ্রুত নতুন ফ্রিজ সরবরাহ কিংবা পুরনো ফ্রিজগুলো মেরামতের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম বলেন, বছরখানিক ধরে আমাদের মেডিকেল কলেজের একমাত্র ফ্রিজটা নষ্ট হয়ে আছে। সংশ্লিষ্টদের বার বার স্মরণ করে দেওয়া হলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, ২০০৮ সালে ও ২০১৭ সালে হাসপাতাল মর্গে দুটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ফ্রিজ। ২০০৮ সালের ফ্রিজটির ১২টি চেম্বারের কার্যক্ষমতা ১০ বছর থাকলেও সেটি দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রপাতি মেরামত করে চালানো হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৭ সালের ৪টি চেম্বারের ফ্রিজটি কার্যক্ষমতা ছিল ৩ বছর। কিন্তু এখন আর সেটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন দুটি ফ্রিজের মধ্যে একটি ফ্রিজের দুইটা চেম্বার সচল রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি ফ্রিজগুলো মেরামত করে যে অর্থ ব্যয় হবে তা দিয়ে নতুন ফ্রিজ কেনা যাবে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলতি বছরের ২২ মে ১২ চেম্বারের নতুন একটি ফ্রিজ চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি আমরা ফ্রিজটি পাবো। তবে যদি সংশ্লিষ্টরা আমাদেরকে ফ্রিজটি সরবারাহ না করেন তাহলে আমরা নতুন অর্থ বছরের বাজেট থেকে এরকম একটি ফ্রি কেনার চিন্তা ভাবনা করছি। যাতে করে আমরা এই ক্রাইসিস থেকে বের হতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট থানা ও মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনকে লাশ রাখার বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য আমরা অনুরোধ করছি। খোলা জায়গায় লাশ রেখে বিকৃত হয়ে যাক এটা আমরা চাই না।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট’র লাইন ডিরেক্টর ডা. জয়নুল আবেদীন টিটো বলেন, গত ৩ বছরে আমরা হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট থেকে ৩৩টি মরচুয়ারি ফ্রিজার সরবরাহ করেছি। সম্প্রতি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আমাদের কাছে মরচুয়ারি ফ্রিজার চেয়েছে। কিন্তু আমরা এ বছর কোনো অর্থ বরাদ্দ পাইনি। যদি অর্থ বরাদ্দ পাই, তাহলে হাসপাতালগুলোর চাহিদা অনুযায়ী মরচুয়ারি ফ্রিজার সরবরাহ করতে পারবো। আর যদি অর্থ বরাদ্দ না-পাই, তাহলে সরকার যেন সরাসরি হাসপাতালগুলোকে অর্থ বরাদ্দ দেয় অথবা সিএমএসডি (সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো)’র মাধ্যমে ফ্রিজার কিনে দেয়, সেই অনুরোধ করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

সিলেট ওসমানী হাসপাতালের অকেজো মর্গের ফ্রিজ

আপডেট সময়ঃ ১২:১১:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মরদেহ সংরক্ষণের একমাত্র ভরসা ছিল দুটি ফ্রিজ। দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিজ দুটি অচল হয়ে পড়ায় এখন মরদেহ রাখা হচ্ছে খোলা জায়গায়, যা শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, ফরেনসিক বিশ্লেষণেও সৃষ্টি করছে জটিলতা। শুধু তাই নয় ময়নাতদন্ত যেখানে সম্পন্ন করা হয় সেখানকার ফ্রিজটিও গত কয়েকমাস থেকে অকেজো রয়েছে।

ওসমানী হাসপাতাল সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, মর্গে থাকা একটি ফ্রিজে দুই ভাগে সর্বমোট ১২টি মরদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। অপর ফ্রিজটিতে প্রতি চেম্বারে দুইটি করে সর্বমোট চারটি মরদেহ রাখা যেত। অর্থাৎ দুটি ফ্রিজ মিলিয়ে একসঙ্গে ১৬টি মরদেহ সংরক্ষণের সক্ষমতা ছিল। তবে বর্তমানে একটি ফ্রিজ একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে এবং অন্যটিতেও কার্যকরভাবে মাত্র দুইটি মরদেহ রাখা যাচ্ছে। একই অবস্থা ময়নাতদন্তের ঘরেও। সেখানে ৩টি মরদেহ সংরক্ষণের ফ্রিজটি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট রয়েছে।

ফলে প্রতিদিন মর্গে আসা মরদেহগুলো ঠাণ্ডা ও সংরক্ষিত পরিবেশে না রেখে খোলা জায়গায় রাখতে হচ্ছে, যা থেকে দ্রুত পচন ধরে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। একইসঙ্গে ময়নাতদন্ত এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণেও দেখা দিচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের এক কর্মী জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ফ্রিজগুলোর কমপ্রেসারে গ্যাসসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। কখনও কখনও মেকানিক এনে সাময়িকভাবে সচল করা গেলেও কয়েক দিনের মধ্যেই তা আবার বিকল হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, আমাদের অনেক সময় মরদেহ ট্রলির ওপর রেখেই সংরক্ষণ করতে হয়।

এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিলেট বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। তাই এমন পরিস্থিতিকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম অবহেলা হিসেবে দেখছেন অনেকেই। দ্রুত নতুন ফ্রিজ সরবরাহ কিংবা পুরনো ফ্রিজগুলো মেরামতের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম বলেন, বছরখানিক ধরে আমাদের মেডিকেল কলেজের একমাত্র ফ্রিজটা নষ্ট হয়ে আছে। সংশ্লিষ্টদের বার বার স্মরণ করে দেওয়া হলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, ২০০৮ সালে ও ২০১৭ সালে হাসপাতাল মর্গে দুটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ফ্রিজ। ২০০৮ সালের ফ্রিজটির ১২টি চেম্বারের কার্যক্ষমতা ১০ বছর থাকলেও সেটি দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রপাতি মেরামত করে চালানো হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৭ সালের ৪টি চেম্বারের ফ্রিজটি কার্যক্ষমতা ছিল ৩ বছর। কিন্তু এখন আর সেটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন দুটি ফ্রিজের মধ্যে একটি ফ্রিজের দুইটা চেম্বার সচল রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি ফ্রিজগুলো মেরামত করে যে অর্থ ব্যয় হবে তা দিয়ে নতুন ফ্রিজ কেনা যাবে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলতি বছরের ২২ মে ১২ চেম্বারের নতুন একটি ফ্রিজ চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি আমরা ফ্রিজটি পাবো। তবে যদি সংশ্লিষ্টরা আমাদেরকে ফ্রিজটি সরবারাহ না করেন তাহলে আমরা নতুন অর্থ বছরের বাজেট থেকে এরকম একটি ফ্রি কেনার চিন্তা ভাবনা করছি। যাতে করে আমরা এই ক্রাইসিস থেকে বের হতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট থানা ও মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনকে লাশ রাখার বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য আমরা অনুরোধ করছি। খোলা জায়গায় লাশ রেখে বিকৃত হয়ে যাক এটা আমরা চাই না।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট’র লাইন ডিরেক্টর ডা. জয়নুল আবেদীন টিটো বলেন, গত ৩ বছরে আমরা হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট থেকে ৩৩টি মরচুয়ারি ফ্রিজার সরবরাহ করেছি। সম্প্রতি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আমাদের কাছে মরচুয়ারি ফ্রিজার চেয়েছে। কিন্তু আমরা এ বছর কোনো অর্থ বরাদ্দ পাইনি। যদি অর্থ বরাদ্দ পাই, তাহলে হাসপাতালগুলোর চাহিদা অনুযায়ী মরচুয়ারি ফ্রিজার সরবরাহ করতে পারবো। আর যদি অর্থ বরাদ্দ না-পাই, তাহলে সরকার যেন সরাসরি হাসপাতালগুলোকে অর্থ বরাদ্দ দেয় অথবা সিএমএসডি (সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো)’র মাধ্যমে ফ্রিজার কিনে দেয়, সেই অনুরোধ করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন