সুনামগঞ্জ পৌর শহরে রিকশা ভাড়ায় নৈরাজ্য, বিপাকে মানুষ

- আপডেট সময়ঃ ১১:৩৫:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
- / ১৪ বার পড়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরে রিকশা ভাড়া নিয়ে চরম নৈরাজ্য চলছে। এতে করে দৈনন্দিন যাতায়াতে সাধারণ পথচারীরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একইসাথে তাদের পকেট থেকে অতিরিক্ত টাকা খসছে। যাত্রীদের অভিযোগ, কোনো নির্দিষ্ট নিয়মকানুন না মেনে চালকরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন। চাহিদা মতো ভাড়া না দিলে তর্কে জড়িয়ে পড়ছেন চালকরা। সম্মানহানির ভয়ে অনেকেই প্রতিবাদ না করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে, পৌর এলাকার সাধারণ নাগরিক, স্টেকহোল্ডার, চালক, যানবাহনের মালিক, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য ভাড়া নির্ধারণ করা দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। এর আগে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদে ও কিলোমিটার অনুযায়ী যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে শহরে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন এবং পৌর প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
পথচারীদের মতে, রিকশায় উঠলেই এবং নামলেই জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ইজিবাইকে উঠলেই এবং নামলেই জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এর আগে গত ১ মে সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ইজিবাইকের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা নির্ধারণ করে দিলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। আর এই সুযোগে রিকশা চালকরা বেপরোয়া ভাড়া আদায় শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক সময় যাত্রীরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ করলে রিকশা ও ইজিবাইক চালকরা তাদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে কাজিরপয়েন্ট পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশায় জনপ্রতি ২০ টাকা এবং ইজিবাইকে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অথচ কিছুদিন আগেও এই রুটে রিকশায় ১০ টাকা এবং ইজিবাইকে ৫ টাকা ভাড়া ছিল। একইভাবে, ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত রিকশায় ২০ টাকা এবং ইজিবাইকে ১০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শহরের অন্যান্য দূরবর্তী স্থানগুলোতেও একই হারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছে, যা সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে নীরবে।
পৌর শহরের জামতলার বাসিন্দা মেহেদী হাসান সজিব বলেন, রিকশা ভাড়া নিয়ে প্রতিনিয়তই চালকদের সাথে তর্কাতর্কি করতে হয়৷ একটু জায়গা গেলেই ২০ টাকা দেওয়া লাগে, না দিলে তাঁরা খারাপ আচরণ করে। এদের লাগাম টানতে হবে।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাদিকুর রহমান বলেন, কলেজ থেকে ট্রাফিক পয়েন্ট গেলে কখনো ৩০ টাকা কখনো ৪০ টাকা ভাড়া দেওয়া লাগে। একজন গেলেও ৩০ টাকার নিচে ভাড়া দিলে তাঁরা (চালকরা) নেয় না। অনেকসময় বলি যে, আমি তো শিক্ষার্থী কিছু কম নেন। এতে তাঁরা আরও বেশি বিরক্ত হয়। আমরা চাই সকলের কথা বিবেচনা করে একটা যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হউক। এরপরও যদি কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইননুসারে ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরে যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে বেশকিছু দিন ধরে আন্দোলন করছেন দৈনিক কালবেলার জেলা প্রতিনিধি এ.কে. কুদরত পাশা। তিনি বলেন, শহরে ইজিবাইকের যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। ইতোমধ্যে আমরা মানববন্ধন করেছি, স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের দাবিগুলো হচ্ছে, পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র আলফাত উদ্দিন স্কয়ারকে অটোরিকশা ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ করে ট্রাফিক পয়েন্টে অটোরিকশা ও ইজিবাইক মুক্ত রাখতে হবে। কালিবাড়ী পয়েন্ট থেকে সদর থানা পর্যন্ত এ রাস্তা অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জ পৌর প্রশাসক আমাদের আস্বস্ত করেছেন জেলা প্রশাসক দেশে আসলেই এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা আশা করছি পৌরবাসীর কথা বিবেচনা করে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মানা হবে।
বৈশাখী টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কর্ণ বাবু দাস বলেন, পৌর শহরে অযৌক্তিক ভাবে শুধুমাত্র অটোরিকশা মালিক ও ড্রাইভারদের দাবির প্রেক্ষিতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। পৌর শহরের সকল স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে ভাড়া বাড়ানো উচিত ছিলো কিন্তু সেটা করা হয় নাই। যাত্রীদের সাথেও কোনো আলোচনা হয় নাই। এছাড়াও অটোরিকশা গুলো অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে, যেকারণে প্রায় দূর্ঘটনা হয়। প্রতিদিন ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও চালকের ঝগড়া হয়। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা উচিত।
সুনামগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমন দ্দোজা আহমদ বলেন, আমরা চাই পৌর শহরে কিলোমিটার অনুযায়ী যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ করা হউক। যদি ভাড়ার একটি সঠিক মানদণ্ড থাকে, তাহলে কেউ ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। যার ফলে সড়কের সামগ্রিক ব্যবস্থায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এতে করে শহরের রিকশা ও ইজিবাইক ভাড়ায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।