০২:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

সুরমায় আবর্জনা ফেলার দায়ে সিসিকের ৩ কর্মী বরখাস্ত

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময়ঃ ০৩:০৮:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
  • / ৬ বার পড়া হয়েছে।

সিলেটের সুরমা নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলার অভিযোগে তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে বরখাস্ত করেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। রোববার (০১ জুন) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অভিযুক্তদের নগরের কিনব্রিজ সংলগ্ন সুরমা নদীর পাড়ের ওয়াকওয়েতে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে দেখা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার। তিনি বলেন, ‘যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে সিটি করপোরেশন যেখানে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে। এ অবস্থায় খোদ আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা যদি প্রকাশ্যে এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তো মূল কাজই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’

জানা গেছে, প্রতিবছরই ভারি বৃষ্টিপাতে সিলেট নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে নাগরিক দুর্ভোগ দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে সুরমা নদী খনন না করাসহ সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের দ্বারা প্রকাশ্যে পলিথিন, ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীর দু’পার ভরাট করে ফেলেন। এ ছাড়া সেইসব ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে ফেলার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও অকার্যকর হয়ে পড়ে। এতে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। আর এ কারণে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে সুরমা নদী খননের দাবি উঠে।

সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ভ্যান থেকে সরাসরি নদীতে সিসিকের কর্মীদের ময়লা ফেলার দৃশ্য প্রকাশ্যে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত ওই ভিডিও চিত্রটি নিয়ে চারপাশে সমালোচনা শুরু হয়।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজাও রোববার দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিটের দিকে নিজের ফেসবুক পেইজে ভিডিও চিত্রটি পোস্ট করেন।

ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, সুরমা নদীর কিনব্রিজ এলাকায় গড়ে তোলা ওয়াকওয়ের রেলিংয়ের সঙ্গে লাগিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে একটি গাঢ় নীল রঙের রিকশা ভ্যান। ভ্যানের গায়ে সাদা হরফে স্পষ্ট করে লেখা ‘সিলেট সিটি করপোরেশন’। উপরে বাঁ পাশে কোণায় ছোট করে লেখা ‘অফিস-০২’।

ভ্যানের পাশে তিনজন দাঁড়িয়ে একজন ছাতা মাথায় রেইনকোট পড়া, যাতে নগর ভবনের নাম লেখা। বাকি দুইজনের একজনের কালো আরেকজনের গায়ে সাদা রেইনকোট। তার ওপরে সিটি করপোরেশনের টিয়া রঙের কটি চাপানো। এ দুইজন ভ্যান থেকে ময়লা তুলে সরাসরি নদীতে ফেলছেন আর ছাতা মাথার লোকটি ডান-বামে সতর্ক পাহারা দিচ্ছেন-কেউ দেখে ফেলছে কিনা।

এ বিষয়ে কাশমির রেজা বলেন, ‘রোববার সকাল ১১টার দিকে ভিডিওটি আরেকজন আমাকে পাঠিয়েছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, হতাশাজনক এবং ভয়ংকর। যারা দেখভাল করে রাখার কথা তারাই অপকর্মটা করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা দেওয়া গেলে বাকিদের কাছে ম্যাসেজ যাবে যে এমন কাজ ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হলো পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখা। তারা ক্লিন সিটি গ্রিন সিটি স্লোগান নিজেরা দেয়। কিন্তু আজকে তারা নিজেরা সুরমা নদী দূষণ করছে। সিলেটে এ যে বন্যা হয় তার একটা বড় কারণ সুরমা নদীর নাব্যতা সংকট। সুরমার নাব্যতা সংকট কমাতে বলা হচ্ছে খননের কথা। কিন্তু খনন করার জন্য যখন প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে তখন তা করা যায়নি কারণ এর নদীর নিচে প্লাস্টিকের বড় একটা স্তর পড়ে গেছে।’

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধর) সিলেট শাখার সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ি থেকে সুরমা নদীতে ময়লা ফেলার যে দৃশ্য দেখা গেছে, সেই হচ্ছে বাস্তবতা। সিসিকের অনেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন যারা অনেকক্ষেত্রে শুধু নদী নয়, ছড়াতেও ময়লা ফেলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের পাশাপাশি অন্যরাও ঠেলায় করে ময়লা এনে প্রায় প্রতিদিন কিনব্রিজের মধ্যবর্তী স্থান থেকে সুরমা নদীতে ফেলেন বলেও দেখা গেছে। যারা কিনব্রিজের নিচে বেড়াতে যান তারা অনেকে এটা প্রায়ই বলেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো দেখিনি, নদী বা ছড়ায় ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোথাও কোনো অভিযান বা কারো বিরুদ্ধে কোনো জরিমানা বা মামলা করা হয়নি। সিটি করপোরেশন নিজেই যেখানে এমন অপকর্ম করে সেখানে সাধারণ মানুষের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা খুবই কঠিন। আমি আশা করব এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে ভবিষ্যতে আরে কেউ এমন কাজ না করে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসার পর জড়িত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সুরমায় আবর্জনা ফেলার দায়ে সিসিকের ৩ কর্মী বরখাস্ত

আপডেট সময়ঃ ০৩:০৮:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

সিলেটের সুরমা নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলার অভিযোগে তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে বরখাস্ত করেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। রোববার (০১ জুন) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অভিযুক্তদের নগরের কিনব্রিজ সংলগ্ন সুরমা নদীর পাড়ের ওয়াকওয়েতে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে দেখা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার। তিনি বলেন, ‘যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে সিটি করপোরেশন যেখানে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে। এ অবস্থায় খোদ আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা যদি প্রকাশ্যে এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তো মূল কাজই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’

জানা গেছে, প্রতিবছরই ভারি বৃষ্টিপাতে সিলেট নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে নাগরিক দুর্ভোগ দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে সুরমা নদী খনন না করাসহ সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের দ্বারা প্রকাশ্যে পলিথিন, ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীর দু’পার ভরাট করে ফেলেন। এ ছাড়া সেইসব ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে ফেলার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও অকার্যকর হয়ে পড়ে। এতে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। আর এ কারণে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে সুরমা নদী খননের দাবি উঠে।

সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ভ্যান থেকে সরাসরি নদীতে সিসিকের কর্মীদের ময়লা ফেলার দৃশ্য প্রকাশ্যে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত ওই ভিডিও চিত্রটি নিয়ে চারপাশে সমালোচনা শুরু হয়।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজাও রোববার দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিটের দিকে নিজের ফেসবুক পেইজে ভিডিও চিত্রটি পোস্ট করেন।

ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, সুরমা নদীর কিনব্রিজ এলাকায় গড়ে তোলা ওয়াকওয়ের রেলিংয়ের সঙ্গে লাগিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে একটি গাঢ় নীল রঙের রিকশা ভ্যান। ভ্যানের গায়ে সাদা হরফে স্পষ্ট করে লেখা ‘সিলেট সিটি করপোরেশন’। উপরে বাঁ পাশে কোণায় ছোট করে লেখা ‘অফিস-০২’।

ভ্যানের পাশে তিনজন দাঁড়িয়ে একজন ছাতা মাথায় রেইনকোট পড়া, যাতে নগর ভবনের নাম লেখা। বাকি দুইজনের একজনের কালো আরেকজনের গায়ে সাদা রেইনকোট। তার ওপরে সিটি করপোরেশনের টিয়া রঙের কটি চাপানো। এ দুইজন ভ্যান থেকে ময়লা তুলে সরাসরি নদীতে ফেলছেন আর ছাতা মাথার লোকটি ডান-বামে সতর্ক পাহারা দিচ্ছেন-কেউ দেখে ফেলছে কিনা।

এ বিষয়ে কাশমির রেজা বলেন, ‘রোববার সকাল ১১টার দিকে ভিডিওটি আরেকজন আমাকে পাঠিয়েছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, হতাশাজনক এবং ভয়ংকর। যারা দেখভাল করে রাখার কথা তারাই অপকর্মটা করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা দেওয়া গেলে বাকিদের কাছে ম্যাসেজ যাবে যে এমন কাজ ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হলো পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখা। তারা ক্লিন সিটি গ্রিন সিটি স্লোগান নিজেরা দেয়। কিন্তু আজকে তারা নিজেরা সুরমা নদী দূষণ করছে। সিলেটে এ যে বন্যা হয় তার একটা বড় কারণ সুরমা নদীর নাব্যতা সংকট। সুরমার নাব্যতা সংকট কমাতে বলা হচ্ছে খননের কথা। কিন্তু খনন করার জন্য যখন প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে তখন তা করা যায়নি কারণ এর নদীর নিচে প্লাস্টিকের বড় একটা স্তর পড়ে গেছে।’

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধর) সিলেট শাখার সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ি থেকে সুরমা নদীতে ময়লা ফেলার যে দৃশ্য দেখা গেছে, সেই হচ্ছে বাস্তবতা। সিসিকের অনেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন যারা অনেকক্ষেত্রে শুধু নদী নয়, ছড়াতেও ময়লা ফেলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের পাশাপাশি অন্যরাও ঠেলায় করে ময়লা এনে প্রায় প্রতিদিন কিনব্রিজের মধ্যবর্তী স্থান থেকে সুরমা নদীতে ফেলেন বলেও দেখা গেছে। যারা কিনব্রিজের নিচে বেড়াতে যান তারা অনেকে এটা প্রায়ই বলেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো দেখিনি, নদী বা ছড়ায় ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোথাও কোনো অভিযান বা কারো বিরুদ্ধে কোনো জরিমানা বা মামলা করা হয়নি। সিটি করপোরেশন নিজেই যেখানে এমন অপকর্ম করে সেখানে সাধারণ মানুষের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা খুবই কঠিন। আমি আশা করব এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে ভবিষ্যতে আরে কেউ এমন কাজ না করে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসার পর জড়িত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন