০৭:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

স্ত্রীর দেওয়া কিডনিতে প্রাণে বেঁচে পরকীয়ায় জড়ালেন স্বামী

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট সময়ঃ ১১:৪৩:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
  • / ১০২ বার পড়া হয়েছে।

কিডনি দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচিয়েছিলেন স্ত্রী। সেই স্বামী সুস্থ হয়েই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন।

এ ঘটনায় স্বামী মোহাম্মদ তারেকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন স্ত্রী উম্মে সাহেদীনা টুনি।

ঘটনাটি ঘটে সাভার সদর ইউনিয়নের ১নং কলমা এলাকায়। অভিযুক্ত তারেককে গ্রেফতার করা হলেও বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।

২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে তারেক ও টুনির বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তাদের একটি পুত্রসন্তান হয়, নাম আজমাইন দিব্য। ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তারেক অসুস্থ হয়ে পড়লে জানা যায় তার দুটি কিডনিই অচল। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ডায়ালাইসিস শুরু করার পরামর্শ দেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য টুনি স্বামীকে ভারতে নিয়ে যান। কয়েক বছর পর চিকিৎসকরা জানান, তারেকের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। তখন টুনি নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দান করেন।

তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তারেকের আচরণ বদলাতে থাকে দিন দিন। একপর্যায় তারেক অন্য কোনো নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং একপর্যায়ে স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

তারেকের চিকিৎসার খরচ জোগাতে টুনি নিজের বাড়িতে একটি বিউটি পার্লার খোলেন এবং বুটিকসের কাজ শুরু করেন। তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। আয়ের সিংহ ভাগ অসুস্থ স্বামী তারেকের চিকিৎসায় ব্যয় হতো। নিজের জমানো টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে তিনি স্বামীর চিকিৎসা চালিয়ে যান। চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রতি বছর তিনবার তারেককে ভারতে নিয়ে যেতে হতো, যাতে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হতো।

এদিকে অসুস্থ থাকাকালীন তারেক কোনো কাজ করতে পারতেন না। একটা সময় তার পরিবারও তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসক কৈলাস নাথ সিংয়ের তত্ত্বাবধানে টুনি ও তারেকের কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়।

টুনি জানান, কিডনি দেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা খারাপ অনুভব হচ্ছে।

অভিযোগ করে টুনি বলেন, আইসিইউ থেকে কেবিনে আসার পরই তিনি তারেকের ভিন্নরূপ দেখতে পান। টুনির এক খালা অপারেশনের আগে টাকা পাঠাতে দেরি করেছিলেন, এই অজুহাতে তারেক তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। ঢাকায় ফেরার পর তারেক টুনিকে তার উপার্জনের সব টাকা দিতে এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসতে চাপ দেন।

টুনি আরও জানান, তারেক এক তালাকপ্রাপ্তা নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারেক নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন এবং টুনিকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য চাপ দেন।

নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে টুনি গত ২ ফেব্রুয়ারি সাভার মডেল থানায় অভিযোগ করেন। পরে তারেক মুচলেকা দিয়ে সেই অভিযোগ তুলে নেন। এরপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ায় টুনি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং গত ২২ এপ্রিল তিনি বাদী হয়ে তারেকের নামে আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন।

টুনির মা জানান, আমরা আদালতের কাছে তারেকের কঠিন শাস্তি দাবি জানাই। যাতে আর কোনো মেয়ের জীবন এভাবে ধ্বংস না হয়।

জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে তারেক পলাতক রয়েছেন। তাই তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তারেকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন