হবিগঞ্জের খোয়াই নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ মহল

- আপডেট সময়ঃ ০৭:২৮:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
- / ৭ বার পড়া হয়েছে।

ক্রমাগত দখল আর দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে হবিগঞ্জ শহরের বুক চিরে বয়ে চলা খোয়াই নদী। নদীটি যে যার মতো করে দখল করে গড়ে তুলছে অবৈধ স্থাপনা। এছাড়াও নদীর বিভিন্ন অংশ ভরাট হচ্ছে ময়লা-আবর্জনায়।
পুরাতন খোয়াই নদী সংকীর্ণ হয়ে আসায় কমে গেছে তার পানি ধারণ ক্ষমতা। এতে করে অল্প বৃষ্টি হলেই হবিগঞ্জ শহরে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। খোয়াই নদীকে দখলমুক্ত করার জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবি উঠেছে। একই দাবি জানিয়ে আসছে হবিগঞ্জের সচেতন মহল। এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ ও তা কার্যকরে বিশেষ পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।
সম্প্রতি পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করার দাবিতে এক নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবারের সেই সভাতেও নদী সংস্কার ও দূষণ প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও নদীপারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী ওই সভা আয়োজন করে। পরে নদীর একাংশ পরিদর্শনে যান সংশ্লিষ্টরা।
ধরার কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, অপরাপর সরকারের মতো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও খোয়াই নদী সংরক্ষণে নানা প্রকল্প গ্রহণ করছে। হবিগঞ্জের মানুষ পুরাতন খোয়াই রক্ষায় যে কোনো সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। দীর্ঘদিন ধরে সারাদেশে চলমান নদীরক্ষার নামে গৃহীত প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দখলদারদের বৈধতা দেওয়ার যে বাস্তবতা রয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি হবিগঞ্জের মানুষ হতে দেবে না। তাই পুরাতন খোয়াই পুনরুদ্ধারের আগে চলমান দখল বন্ধ করে শ্যামলী, মুসলিম কোয়ার্টার, পুরোনো মুন্সেফ, শায়েস্তানগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে চলমান মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলা করা উচিত।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, পুরাতন খোয়াই সংরক্ষণে নদীর সীমানা নির্ধারণ যে কোনো সমন্বিত পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ। যেহেতু হবিগঞ্জের সিএস জরিপ নেই, কাজেই স্থানীয় পরিবেশবাদী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সমীক্ষার মাধ্যমে নদীর সীমানা চিহ্নিত করতে হবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর আজীবন সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, পুরাতন খোয়াই নদী হচ্ছে হবিগঞ্জের ফুসফুস। দখল দূষণের মাধ্যমে কেবল এ নদীর সর্বনাশ ডেকে আনা হয়নি; পুরো শহরের পরিবেশ ও প্রতিবেশকে হুমকিতে ফেলা হয়েছে। নদীর অবস্থান, আয়তন, গতি-প্রকৃতি সব দিক বিবেচনায় নিয়ে যতটা সম্ভব, একে সংস্কার করতে হবে। এই নদীর মাধ্যমে হবিগঞ্জ একটি পরিকল্পিত, সুস্থ ও সুন্দর শহর হতে পারে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পানি নিষ্কাশনসহ নগরায়ণের যাবতীয় অবকাঠামোগত সমস্যারও সমাধান সম্ভব।
খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, দীর্ঘদিন দখল-দূষণের বিষয়টি স্বাভাবিক ছিল। শহরের নদী, যার কোনো তদারকি নেই; সেটি নষ্ট হওয়ারই কথা। এর সবচেয়ে বড় দায় অসচেতন জনগোষ্ঠীর। এ সত্য মেনে নিয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। জলাবদ্ধতায় হবিগঞ্জে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে প্রতি বছর। মাছুলিয়া থেকে বগলাবাজার এবং মাছ বাজার পর্যন্ত কোথাও দখল থেমে নাই। দখল কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে হয়নি। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাও গড়ে তোলা হয়েছে পুরাতন খোয়াই নদীর বুকে। এখনও দখল অব্যাহত রয়েছে। পুরাতন খোয়াই পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপের দাবিতে হবিগঞ্জের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এর পাশাপাশি নিজেদেরও সচেতন হতে হবে। যে কারণে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। একটা পানির উৎস শহরের এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা জরুরি।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, নদী খনন ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক।