০১:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

হাকালুকিতে নিষিদ্ধ বেড় জালে মাছ শিকার চলছেই

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট সময়ঃ ১২:৩০:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • / ২ বার পড়া হয়েছে।

দেশের বৃহত্তম মিঠাপানির উৎস নামে খ্যাত হাকালুকি হাওরে পানি কমতে শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ মৎস্য শিকারিরা। তারা হাওরের বিভিন্ন বিলে অবৈধভাবে বেড় জাল, কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব চালাচ্ছে। তবে সন্ধ্যার পরে হাওরে মাছ নিধনের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ভোর রাতে এসব মাছ বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। যার কারণে চরম হুমকিতে রয়েছে হাকালুকি হাওরের মৎস্য সম্পদ, জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য।

সম্প্রতি হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, প্রশাসনের অভিযান এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান থাকলেও স্থানীয় জেলেদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র নিষিদ্ধ বেড় জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে হাওরে। খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেনের নেতৃত্বে হাকালুকি হাওরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল জব্দ ও ধ্বংস করা হয়। অভিযানকালে হাওরের বিভিন্ন স্থানে পেতে রাখা প্রায় ৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল, ৩০০টি চায়না দোয়ারী জাল এবং ৬ হাজারটি চাই জাল জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা। পরে এসব জাল হাওরের তীরে নিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে মাছ ধরার দায়ে কুঞ্জ লাল বিশ্বাস নামে একজনকে আটক করে তিন হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়। অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু মাসুদ, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সোনা মোহন বিশ্বাস এবং পুলিশ সদস্যরা।

এর আগে, গত ১৮ জুন ও ২২ সেপ্টেম্বর হাওরের কুলাউড়া অংশে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু মাসুদ। এ সময় প্রায় ১ হাজার মিটারের দুটি জাল জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়।

জানা গেছে, হাকালুকি হাওরে ‘চকিয়া বিল গ্রুপ (বদ্ধ)’ জলমহালের ১৪৩২-১৪৩৪ বাংলা সনে ইজারা নেন রাজনগর উপজেলার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. মাসুক মিয়া। সংঘবদ্ধ জেলেরা ওই জলমহাল থেকে বেড় জাল দিয়ে অবৈধভাবে পোনা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করছে। প্রতিকার চেয়ে গত ২৯ জুন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন ইজারাদার মো. মাসুক মিয়া।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে হাওরের বিভিন্ন জলমহালে মৎস্য প্রজননকালীন সময়। মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া ছোট মাছের বংশবিস্তাররত অবস্থায় নিষিদ্ধ বেড় জাল দিয়ে জোরপূর্বক মৎস্য চুরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলার সাদিপুর গ্রামের বারিক মিয়া, ফয়ছল মিয়া, শিমুল মিয়া, দুলাল মিয়া, পারুল মিয়া ও তাদের জালিয়া সংঘবদ্ধ গ্রুপ।

জানা গেছে, হাকালুকি হাওরে দুই যুগ আগেও ১১০ প্রজাতিরও বেশি দেশি মাছ ছিল। যা এখন ৫০ প্রজাতির নিচে নেমে গেছে। হাওর থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে মাগুর, রিটা, নানিদ, বাঘাইড়, চিতল, রানী মাছ, এলংসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। হাকালুকিই দেশের অন্যতম প্রধান মাছের উৎসস্থল হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মাছ যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ হাওরের মাছ খুব সুস্বাদু। এতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালো বাউস, আইড়, বোয়াল, শোল, গজার, পাঙ্গাস, ঘনিয়া ও ছোট প্রজাতির কই, মাগুর, পাবদা, সিং, পুটি, টেংরা, ভেড়া, মলা, রানি, বাঁচা মাছসহ সব প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এক কথায় এমন কোনো প্রজাতির মাছ ছিল না, যা হাওরে পাওয়া যেত না। অনেক প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে অবাধে শিকারের ফলে।

স্থানীয় লোকজন জানান, হাকালুকি হাওর কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই অরক্ষিত হাওরে দিন দিন পোনা মাছ ধরার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের পরিমাণ কমছে। হাওরের বাস্তু তন্ত্র (ইকো সিস্টেম) রক্ষায় অবিলম্বে হাওরকে উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি হাওর তীরের মানুষের।

কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলা ইসিএ কমিটির সভায় হাকালুকি হাওরের উন্নয়ন এবং হাওর তীরের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ব্যাপক আলোচনা হয়। ১৯৯৯ সালে হাকালুকি হাওরকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা হাওর উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও প্রকৃত অর্থে হাওরের কিংবা হাওর তীরের মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। সকল অর্থই হাওরের জলে ভেসে গেছে।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী মো. মছব্বির আলী, খোরশেদ আলম জানান, হাকালুকি হাওরে বেড়জাল দিয়ে অবাধে মাছ ধরছেন জেলেরা। যার জন্য বর্তমানে হাওরের প্রতিবেশ অতিসংকটাপন্ন। নিষিদ্ধ জালে মা মাছ ও পোনা মাছ ধরা পড়ায় মৎস্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে ব্যাপকভাবে। হাওরের প্রতিবেশ রক্ষায় মাছের স্থায়ী অভয়াশ্রম করে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

কুলাউড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদ বলেন, হাওরে পোনা মাছ রক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কয়েক দফার অভিযানে প্রায় ১২ হাজার মিটারেরও বেশি জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে। শুধু আইনি পদক্ষেপ দিয়ে হবে না, হাকালুকি হাওর পাড়ের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়লেই কেবল অবৈধ জাল এবং পোনা মাছ ধরা বন্ধ হবে।

কুলাউড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হক বলেন, হাকালুকি হাওরে অবৈধভাবে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মৎস্য আহরণের খবর পেয়ে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়। স্থানীয়রা সচেতন না হলে এভাবে হাওর ও তার জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা কঠিন। হাওরের মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তদারকি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, হাকালুকির জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। বর্তমানে হাওরে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইবিএ প্রকল্প কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় চলমান আছে। হাওর তীরের লোকজনের দাবির বিষয়টি আগামী ইসিএ কমিটির সভায় আলোচনা করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তিনি আরো বলেন, হাকালুকি হাওরের পরিবেশ যাতে বিনষ্ট না হয় সে বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। হাওরের কুলাউড়া অংশে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

হাকালুকিতে নিষিদ্ধ বেড় জালে মাছ শিকার চলছেই

আপডেট সময়ঃ ১২:৩০:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

দেশের বৃহত্তম মিঠাপানির উৎস নামে খ্যাত হাকালুকি হাওরে পানি কমতে শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ মৎস্য শিকারিরা। তারা হাওরের বিভিন্ন বিলে অবৈধভাবে বেড় জাল, কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব চালাচ্ছে। তবে সন্ধ্যার পরে হাওরে মাছ নিধনের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ভোর রাতে এসব মাছ বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। যার কারণে চরম হুমকিতে রয়েছে হাকালুকি হাওরের মৎস্য সম্পদ, জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য।

সম্প্রতি হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, প্রশাসনের অভিযান এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান থাকলেও স্থানীয় জেলেদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র নিষিদ্ধ বেড় জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে হাওরে। খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেনের নেতৃত্বে হাকালুকি হাওরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল জব্দ ও ধ্বংস করা হয়। অভিযানকালে হাওরের বিভিন্ন স্থানে পেতে রাখা প্রায় ৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল, ৩০০টি চায়না দোয়ারী জাল এবং ৬ হাজারটি চাই জাল জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা। পরে এসব জাল হাওরের তীরে নিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে মাছ ধরার দায়ে কুঞ্জ লাল বিশ্বাস নামে একজনকে আটক করে তিন হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়। অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু মাসুদ, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সোনা মোহন বিশ্বাস এবং পুলিশ সদস্যরা।

এর আগে, গত ১৮ জুন ও ২২ সেপ্টেম্বর হাওরের কুলাউড়া অংশে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু মাসুদ। এ সময় প্রায় ১ হাজার মিটারের দুটি জাল জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়।

জানা গেছে, হাকালুকি হাওরে ‘চকিয়া বিল গ্রুপ (বদ্ধ)’ জলমহালের ১৪৩২-১৪৩৪ বাংলা সনে ইজারা নেন রাজনগর উপজেলার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. মাসুক মিয়া। সংঘবদ্ধ জেলেরা ওই জলমহাল থেকে বেড় জাল দিয়ে অবৈধভাবে পোনা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করছে। প্রতিকার চেয়ে গত ২৯ জুন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন ইজারাদার মো. মাসুক মিয়া।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে হাওরের বিভিন্ন জলমহালে মৎস্য প্রজননকালীন সময়। মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া ছোট মাছের বংশবিস্তাররত অবস্থায় নিষিদ্ধ বেড় জাল দিয়ে জোরপূর্বক মৎস্য চুরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলার সাদিপুর গ্রামের বারিক মিয়া, ফয়ছল মিয়া, শিমুল মিয়া, দুলাল মিয়া, পারুল মিয়া ও তাদের জালিয়া সংঘবদ্ধ গ্রুপ।

জানা গেছে, হাকালুকি হাওরে দুই যুগ আগেও ১১০ প্রজাতিরও বেশি দেশি মাছ ছিল। যা এখন ৫০ প্রজাতির নিচে নেমে গেছে। হাওর থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে মাগুর, রিটা, নানিদ, বাঘাইড়, চিতল, রানী মাছ, এলংসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। হাকালুকিই দেশের অন্যতম প্রধান মাছের উৎসস্থল হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মাছ যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ হাওরের মাছ খুব সুস্বাদু। এতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালো বাউস, আইড়, বোয়াল, শোল, গজার, পাঙ্গাস, ঘনিয়া ও ছোট প্রজাতির কই, মাগুর, পাবদা, সিং, পুটি, টেংরা, ভেড়া, মলা, রানি, বাঁচা মাছসহ সব প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এক কথায় এমন কোনো প্রজাতির মাছ ছিল না, যা হাওরে পাওয়া যেত না। অনেক প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে অবাধে শিকারের ফলে।

স্থানীয় লোকজন জানান, হাকালুকি হাওর কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই অরক্ষিত হাওরে দিন দিন পোনা মাছ ধরার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের পরিমাণ কমছে। হাওরের বাস্তু তন্ত্র (ইকো সিস্টেম) রক্ষায় অবিলম্বে হাওরকে উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি হাওর তীরের মানুষের।

কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলা ইসিএ কমিটির সভায় হাকালুকি হাওরের উন্নয়ন এবং হাওর তীরের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ব্যাপক আলোচনা হয়। ১৯৯৯ সালে হাকালুকি হাওরকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা হাওর উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও প্রকৃত অর্থে হাওরের কিংবা হাওর তীরের মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। সকল অর্থই হাওরের জলে ভেসে গেছে।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী মো. মছব্বির আলী, খোরশেদ আলম জানান, হাকালুকি হাওরে বেড়জাল দিয়ে অবাধে মাছ ধরছেন জেলেরা। যার জন্য বর্তমানে হাওরের প্রতিবেশ অতিসংকটাপন্ন। নিষিদ্ধ জালে মা মাছ ও পোনা মাছ ধরা পড়ায় মৎস্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে ব্যাপকভাবে। হাওরের প্রতিবেশ রক্ষায় মাছের স্থায়ী অভয়াশ্রম করে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

কুলাউড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদ বলেন, হাওরে পোনা মাছ রক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কয়েক দফার অভিযানে প্রায় ১২ হাজার মিটারেরও বেশি জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে। শুধু আইনি পদক্ষেপ দিয়ে হবে না, হাকালুকি হাওর পাড়ের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়লেই কেবল অবৈধ জাল এবং পোনা মাছ ধরা বন্ধ হবে।

কুলাউড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হক বলেন, হাকালুকি হাওরে অবৈধভাবে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মৎস্য আহরণের খবর পেয়ে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়। স্থানীয়রা সচেতন না হলে এভাবে হাওর ও তার জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা কঠিন। হাওরের মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তদারকি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, হাকালুকির জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। বর্তমানে হাওরে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইবিএ প্রকল্প কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় চলমান আছে। হাওর তীরের লোকজনের দাবির বিষয়টি আগামী ইসিএ কমিটির সভায় আলোচনা করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তিনি আরো বলেন, হাকালুকি হাওরের পরিবেশ যাতে বিনষ্ট না হয় সে বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। হাওরের কুলাউড়া অংশে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন