৫ আগস্ট ২০২৪, শ্রাবণের শেষ বিকেল। বিয়ানীবাজার পৌরশহরে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার উল্লাস। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর শুনে উদ্বেলিত তারা। কারো হাতে ছিল লাল-সবুজের পতাকা, কারো চোখে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন।
সময় গড়ানোর সাথে সাথে পৌরশহর এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। বিকাল ৫ টার হঠাৎ গুলির শব্দে গর্জে ওঠে পুরো শহর। মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন হয় রাজপথের বিজয় উল্লাস। গুলিতে লুটিয়ে পড়েন তারেক আহমদ, ময়নুল ইসলাম ও রায়হান হোসেন। গুলিবিদ্ধ হন দুবাগের নাজমুল ইসলাম তাজিম চৌধুরীসহ অনেকে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বারুদের গন্ধ, রাস্তায় রক্ত আর পড়ে থাকা জুতা-স্যান্ডেল হয়ে ওঠে নৃশংসতার নীরব সাক্ষী।
শহীদ তারেক আহমদের মা ইনারুন নেসা বলেন, ‘এক বছরের মাথায়ও আমরা তার মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছি না। পিতার শোকে তার সন্তানরা কাঁদছে। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল আমার সন্তান।’’
শহীদ ময়নুল ইসলামের স্ত্রী শিরিন বেগম বলেন, ‘বিজয় উল্লাসে গিয়ে ও আর ফেরেনি। আর ফিরবেনা। সরকার আসবে-যাবে কিন্তু সে আর আসবেনা।’ তার অভিযোগ, ‘মামলায় কোনো অগ্রগতি নেই। যারা জামিনে বের হয়ে আসে, তাদের অনেকে প্রভাবশালীদের সহায়তায় বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে।’
নিহতদের মধ্যে কলেজ শিক্ষার্থী রায়হান উদ্দিনকে (১৮) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। তিনি পরিবারের সঙ্গে বিয়ানীবাজার পৌরসভার পূর্ব নয়া গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকতেন। অপর নিহত বিয়ানীবাজার পৌরসভার পূর্ব নয়াগ্রামের ময়নুল ইসলামকে (৩২) নয়াগ্রাম কবরস্থানে দাফন করা হয় এবং মোল্লাপুর ইউনিয়নের কটুখালিপাড় এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে নিহত তারেক আহমদের (২৪) মরদেহ দাফন করা হয়েছে। নিহত সবারই ময়নাতদন্ত ছাড়াও দাফনকার্য সম্পাদন করা হয়।
অপর মামলার বাদী ও আহত নাজমুল ইসলাম চৌধুরী এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন।
৫ আগস্টের ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানায় ৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি হত্যা ও একটি বিস্ফোরক দ্রব্যের মামলা। এসব মামলায় প্রায় দেড় শতাধিক আসামীর নাম এজাহারে। আসামীর তালিকায় আছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন খান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লবসহ আওয়ামীলীগের স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সাংবাদিকরাও হয়েছেন আসামী।
পুলিশ বলছে, অনেকে এখনো পলাতক। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সিলেট জেলা সহ-সমন্বয়ক শাহরিয়ার আলম সানি বলেন, ‘শহীদদের রক্তের ওপর এ সরকার গঠিত। অথচ হত্যার বিচার হয়নি। আমরা দাবি করছি, বিচার দ্রুত সম্পন্ন হোক।’
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফ উজ্জামান বলেন, জুলাই-আগস্টের ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। তদন্তে যাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাঁরাই চার্জশিটে আসামী হবেন। অনেক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তাফা মুন্না বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। প্রশাসন তাদের পাশে আছে।’
প্রধান সম্পাদকঃ আবুবকর সিদ্দিক সুমন। নির্বাহী সম্পাদকঃ রুবেল হাসনাইন। বার্তা সম্পাদকঃ রুমি বরুয়া।
গুলশান, ঢাকা-১২১৬, বাংলাদেশ। ইমেইলঃ admin@sylhet21.com,sylhet21.com@gmail.com মোবাইলঃ +1586 665 4225
©২০২৫ সিলেট ২১ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Developed Success Life IT