৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন, শীর্ষ তিন পদেই লড়ছেন ৭ নারী

- আপডেট সময়ঃ ০১:৪৪:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৪২ বার পড়া হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন এবারে নারী অংশগ্রহণে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)—শীর্ষ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত নারী শিক্ষার্থী। পাশাপাশি রাকসু ও সিনেটের মোট ১৯টি পদে লড়ছেন ৩২ জন ছাত্রী। ছাত্রী হলগুলোতে ছয় হলে ১৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরও ২১৭ জন নারী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচন প্রার্থীর সংখ্যার দিক থেকে রেকর্ড তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও সিনেট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩২০ জন প্রার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ২৮৮ জন এবং ছাত্রী ৩২ জন। অন্যদিকে হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ৭৫৪ জন প্রার্থী।
শীর্ষ ৩ পদে লড়ছেন যে নারী প্রার্থীরা
রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাসিন খান। তিনি ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের প্রার্থী। ‘অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’ প্যানেলে জিএস প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন পরমা পারমিতা, ‘স্বতন্ত্র’ থেকে জিএস পদে লড়ছেন আছিয়া খাতুন, ‘রাকসু ফর র্যাডিকেল চেঞ্জ’ প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আফরিন জাহান, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়বেন নুসরাত জাহান নূপুর। এদিকে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে এজিএস পদে লড়ছেন জাহিন বিশ্বাস এষা ও ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে এজিএস পদে জান্নাত আরা নওশীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
রাকসুর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোন নারী ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হননি। এ ছাড়া জিএস, এজিএস পদেও নারীদের খুব বেশি প্রর্থীতা বা জয়ের নজির নেই। তবে এবারের নির্বাচনে ভিপি, জিএস, এজিএস-শীর্ষ এই তিন পদে অন্তত একজন নারী প্রার্থী জয়ী হবেন বলে আশা করছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে রাবির সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ত্বাসীন সিদ্দিকা রূপা বলেন, ‘সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিল ৩৫ বছর আগে। দীর্ঘ এই সময়ে রাবিতে ছাত্রসংসদের কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে ছিল। এ সময়ের ভেতর অনেক কিছুই বদলে গেছে বিশেষ করে নারীরা এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বের আসনে উঠে আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাকসুতে এবার নারী শিক্ষার্থীদের নির্বাচনে পূর্বের তুলনায় অংশগ্রহণে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। শীর্ষ পদগুলোতেও বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নারী প্রার্থী লড়ছেন। আমরা আশা করি, রাকসুর ইতিহাসে এবার প্রথমবারের মতো কোনো নারী প্রার্থী শীর্ষ কোনে পদে নির্বাচিত হবেন।’
রাকসুর একমাত্র ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো রাবিতেও সম্মুখসারীতে ভূমিকা পালন করেছেন ক্যাম্পাসের নারী শিক্ষার্থীরা। গত কয়েক বছরে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। নারী ভোটাররা জুলাইয়ে যেমনভাবে গণতান্ত্রিক ও অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে শামিল ছিলেন, তেমনি নেতৃত্বও দিবেন। আশা করি এবারের রাকসুতে সর্বোচ্চ নারী প্রতিনিধিত্ব আমরা দেখতে পাব।’
কোন প্যানেলে কতজন নারী
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল এবং ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ উভয়টিতেই রয়েছেন সর্বাধিক চারজন নারী প্রার্থী। ছাত্রশিবিরের ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থীজোটে’ তিনজন, তাওহীদ – নুসরাতের নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোটে’ তিনজন, সাবেক সমন্বয়ক সজীব-আম্মারের নেতৃত্বে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ তিনজন প্রর্থী, অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪-এ দুটি পদে, এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ দুইজন, বাম সমর্থিত ছয়টি সংগঠনের ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষর্থী পর্ষদ’ প্যানেলে আছেন একজন নারী প্রার্থী। এদিকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ‘সচেতন শিক্ষার্থী জোটে’ কোনো নারী প্রার্থী রাখেনি।
নারী প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক তাসিন খান। তিনি রাকসুর ৬৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম এবং এবারের নির্বাচনের একমাত্র নারী ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী। এছাড়া ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে এজিএস পদে জাহিন বিশ্বাস এষাসহ রয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়ার মোছা. নার্গিস খাতুন। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’- এর প্যানেলে জিএস ও এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নুসরাত জাহান নুপুর ও জান্নাত আরা নওশীন। ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘রাকসু ফর র্যাডিকেল চেঞ্জ’ প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রার্থী আফরিন জাহান। এ ছাড়া অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪ থেকে জিএস ( সাধারণ সম্পাদক) ও সিনেট সদস্য পদে পরমা পারমিতাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোটের এজিএস প্রার্থী জান্নাত আরা নওশীন বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন ও এর পরবর্তী সময়ে যেই নারীরা আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন, তাদের রাজনীতির পরিসর অনেক ছোট হয়ে গেছে। আমরা ভেবেছিলাম এত বড় একটা পুনর্জাগরণ, এর পরে নারীরা রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। কিন্তু সাইবার বুলিং, হ্যারেসম্যান্ট ও পারিবারিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন কারণে এই জায়গাটা অনেক সংকুচিত হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এতকিছুর পরও রাকসু নির্বাচনে ঘিরে নারী প্রার্থীদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তাদের এই অংশগ্রহণ আমাদের আশা জাগাচ্ছে। জিতে আসা না আসার থেকেও বড় বিষয় হচ্ছে, নারীরা অংশগ্রহণ করছেন। নারীদের নিয়ে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামে বুলিং করা হচ্ছে সেটি ঠিক নয়, এখানে সবারই আলাদা মতাদর্শ থাকতে পারে। এজন্য একজন নারী বলে তাকে নিয়ে কটাক্ষ বা প্রোপাগাণ্ডা ছাড়ানো উচিত নয়, এখানে আমরা সবাই যোগ্য। আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে সর্বপ্রথম নারীদের এই সংকট নিয়ে কাজ করতে চাই। রাকসু নিয়ে আমার প্রত্যাশা, প্রত্যেকে যোগ্য প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে আসবেন।’