দীর্ঘ ২৮ বছর পর শাকসু নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্যপ্রার্থীদের তৎপরতা

- আপডেট সময়ঃ ০১:৪০:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩৬ বার পড়া হয়েছে।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। দলীয় ও স্বতন্ত্র প্যানেল গঠনে ছাত্রসংগঠনগুলো তোড়জোড় শুরু করেছে।
প্রার্থিতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও চলছে নানা বিশ্লেষণ। সেই সঙ্গে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা বেড়েছে।
সর্বশেষ শাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্মটি অচল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শাকসু নির্বাচন হতে পারে বলে ঘোষণা দেন। এর পর থেকেই ছাত্রসংগঠনের সদস্য ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও নির্বাচনী তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও শোনা যাচ্ছে।
বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, বাম ঘরনা ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের জোট এবং শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র প্যানেলসহ পাঁচটি প্যানেলের কথা ক্যাম্পাসে বেশি আলোচিত হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও আলোচনায় আছে। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই দাবিদাওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক নানা কার্যক্রম নিজস্ব উদ্যোগে শুরু করেছেন। তাঁদের অনেকে নিয়মিত প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব দাবিদাওয়া জানাচ্ছেন। দলীয়ভাবেও তাঁদের সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো প্রার্থী নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে প্যানেল গঠনে ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমঝোতার জন্য দফায় দফায় আলোচনা চলছে। নানা শর্ত ও শীর্ষপদগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে চলছে দর–কষাকষি।
ছাত্রদল থেকে শাবিপ্রবি শাখার সভাপতি রাহাত জামান, সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুস সাকিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম ও কাজী জুনেদ ওরফে জুনায়েদ হাসানের নাম বেশি আলোচনায় আছে। শীর্ষ তিন পদে তাঁরা নির্বাচন করতে পারেন বলে সংগঠনটির একাধিক নেতা-কর্মী আভাস দিয়েছেন।
শাবিপ্রবি ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান বলেন, ‘যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, একাডেমিক ফলাফলে এগিয়ে, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিও আছে, প্যানেল গঠনে শীর্ষ পদগুলোতে এমন প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা নিয়মিতই ক্যাম্পাসে তৎপরতা চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক নানা কর্মসূচিতে বিভিন্ন ব্যানারে নিয়মিতই বিভিন্ন উদ্যোগ নিতেও তাঁদের দেখা যাচ্ছে। ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভিপি পদে নির্বাচন করতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাবিপ্রবি শাখার সাবেক সমন্বয়ক দেলোয়ার হোসেন শিশির। ইতিমধ্যে ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন উদ্যোগে তাঁকে সরব থাকতে দেখা গেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনে তাঁকে সামনে রাখা হতে পারে। এ ছাড়া শীর্ষপদগুলোতে আরও আলোচনায় আছেন সংগঠনটির শাবিপ্রবির শাখার দপ্তর সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম ও সাহিত্য সম্পাদক শাকিল মাহমুদ প্রমুখ।
শাবিপ্রবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনে আমরা চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যাঁদের অবদান আছে এবং স্ব–স্ব ক্ষেত্রে দক্ষ ও যোগ্য, তাঁদের নিয়েই প্যানেল গঠনের চিন্তা আছে। শাকসুতে যাতে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়, সে চেষ্টা করছি।’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শাকসু নির্বাচন হতে পারে বলে ঘোষণা দেন।
মাঠে আছে অন্যান্য সংগঠনও
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন–সমর্থিত একটি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেবে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে ক্যাম্পাসে নির্বাচনকেন্দ্রিক এখনো তাদের তেমন কোনো তৎপরতা শুরু হয়নি। এ সংগঠন থেকে ভিপি পদে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজনীন লিজা, জিএস পদে সংগঠক জুবায়ের আহমেদ জুয়েল এবং এজিএস পদে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেনের নাম আলোচনায় আছে। নাজনীন লিজা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের পর আমরা প্যানেল গঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
এদিকে ইসলামী ছাত্র মজলিসের পক্ষ থেকেও একক প্যানেল দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। সংগঠনটির সাবেক প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কাওসার আহমেদ ভিপি পদে, বর্তমান সভাপতি জুনায়েদ আহমেদ জিএস পদে, সহযোগী সদস্য কামরুজ্জামান মিয়া এজিএস পদে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের একক প্যানেল দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে অন্য ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আলোচনা চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল গঠনের চেষ্টা চলছে। ছাত্রদলের সঙ্গেও ওই অংশের আলোচনা চলছে। স্বতন্ত্র এই প্যানেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবি শাখার সাবেক সমন্বয়ক পলাশ বখতিয়ার, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাকিম বিল্লাহ, গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শীর্ষ পদগুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আসতে পারেন। ক্যাম্পাসের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাঁদের সমর্থন দিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। পলাশ বখতিয়ার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা চায়, সবার স্বাধীন মতামত থাকবে, সবকিছু অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। যারা ক্যাম্পাসভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়, তাই তারা গুরুত্ব পাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে।’
স্বতন্ত্র প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাবিপ্রবির সাবেক সমন্বয়ক ও পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মো. মমিনুর রশীদ শুভ। নিজে ভিপি পদে থেকে বাকি পদগুলোতে প্রার্থী দিতে তিনি শিক্ষার্থীদের একত্র করছেন। মমিনুর রশীদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করুক। একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হোক। প্যানেল গঠনে আমরা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিচ্ছি।’
এ ছাড়া কোনো ধরনের প্যানেল ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে ভিপি পদে অর্থনীতি বিভাাগের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমানসহ কয়েকজনের নাম আলোচনায় আছে।