০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৯ জেলে ভারতে আটক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পরিবার

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০৭:৪১:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৩৮ বার পড়া হয়েছে।

সুন্দরবনের ভারতের অংশে অনুপ্রেবেশের দায়ে একটি ফিশিংবোট, জাল ও মাছসহ ভোলার ১৯ জন জেলেকে ধরে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাদের খোঁজ না পাওয়ায় চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে এসব জেলের পরিবারে। আটক জেলেদের মুক্ত করে দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে দরিদ্র পরিবারগুলো।

আটক ১৯ জেলে হলেন- ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো.মোখলেস বেপারির ছেলে ফিশিংবোট মালিক সফিজল মাঝি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছাদিম আলীর ছেলে মো. শাহ আলম, রতন মুন্সির ছেলে ছিডু মুন্সি, বজলুর রহমানের ছেলে মো. আক্তার হোসেন (ইঞ্জিন চালক), ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শংকর চন্দ্র দাসের ছেলে রাজিব চন্দ্র দাস, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রাব আলীর ছেলে মো. মিন্টু হাওলাদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. বাসেদ চৌকদারের ছেলে মো. ফরিদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মতলব সরদারের ছেলে মো. আলমগীর, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মগবুল আহমদের ছেলে মো. ফরিদ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউসুফ আলী মাঝির ছেলে মো. ইউনুছ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সেরাজুল হকের ছেলে বাবুল সরদার, মো. ছালেমের ছেলে মো. নিরব হোসেন, মো. ফারুক সরদারের ছেলে মো. ইসমাইল, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অছিমউদ্দিন হাওলাদারের ছেলে মো. শাহে আলম হাওলাদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মতিন্দ্র চন্দ্র দাসের ছেলে গৌতম চন্দ্র দাস, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ছাদেকের ছেলে মো. জাকির, আফসার আহমেদের ছেলে ছগির সিকদার,মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মো.টুটুল এবং হাসিম বেপারির ছেলে শহীদুল ইসলাম।

এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলা সংলগ্ন সুন্দরবনের ভারতের অংশ থেকে বিএসএফ সদস্যরা তাদের আটক করে ভারতে নিয়ে যায় বলে জানান স্বজনরা। পরবর্তীতে স্থানীয় কোস্টাল থানা পুলিশের মাধ্যমে তাদেরকে ভারতের আলীপুর আদালত তোলা হয় এবং ফিশিংবোট-জাল ও আহরিত মাছ জব্দ করা হয়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার।

সরেজমিনে ভারতে আটক জেলেদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ট্রলার মালিক সফিজল মাঝির নেতৃত্বে মোট ১৯ জন জেলেকে নিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় শান্তিরহাট বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে ফিশিংবোটটি মাছ ধরার জন্য সাগরের উদেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সাগরে আশানুরূপ মাছ পাওয়ায় ৬ দিনের মাথায় সফিজল মাঝির ট্রলারটি ভোলার দিকে যাত্রা শুরু করলে বোটটি ঝড়ের কবলে পড়ে সুন্দরবনের ভারতের সীমানায় চলে যায়। পরবর্তীতে অবৈধ অনুপ্রেবেশের দায়ে ১৯ জেলেকে আটক করে বিএসএফ।

বোট মালিক সফিজল মাঝির স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২ বছর আগে সমিতি এবং ধারদেনা করে আমার স্বামী প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে বোটটি কিনেছে এখনো দেনা শোধ হয়নি। গত ৫ সেপ্টেম্বর আমার স্বামী সফিজল মাঝি ১৮ জন জেলে নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গেছে। এর মধ্যে তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। পরে ১২ সেপ্টেম্বর তার মোবাইলে কল ঢুকলেও কথা হয়নি। আমরা অনেক দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

সফিজল মাঝির ছেলে মো. হোসেন বলেন,আমার বাবা এবং ট্রলারের অন্যান্য জেলেদের কোনো খোঁজ না পাওয়ার পর ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানতে পারি ট্রলারসহ সুন্দরবনের ভারতের অংশ থেকে বিএসএফ তাদেরকে ধরে নিয়ে গেছে এবং আলীপুর আদালতে তোলা হয়েছে। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।

বাবার ফেরার অপেক্ষায় আটক জেলেদের মধ্যে মিন্টু হাওলাদারের ছোট তিন ছেলেমেয়ে রিফাত, রিয়াদ ও রিয়া মনি। তাদের দিন কাটছে চরম কষ্টে। বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে মিন্টু হাওলাদারের ছোট মেয়ে রিয়া মনি।

রিয়া মনি বলে, আব্বু যেদিন সাগরে গেছে তার আগে বাজার থেকে চালের গুড়া কিনে এনে পিঠা বানিয়ে খাওয়াইছে। আমি আব্বুকে বলেছি- আব্বু সাগর থেকে আসার সময় আমার জন্য লইট্টা মাছ নিয়ে আইসো’। কিন্তু আব্বু এখনো আসতেছে না।

শুধু মিন্টু হাওলাদার নয়, কমবেশি একই দুর্দশার চিত্র ভারতের জেলে আটক থাকা অন্যান্য জেলেদের পরিবারেও। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ভারতে আটক ১৯ জেলেকে ফেরত আনার দাবি জানিয়েছেন সকল জেলে পরিবার ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সফিজল মাঝিসহ ১৯ জেলেকে আমরা চিনি। তারা আমাদের প্রতিবেশী। শুনেছি তারা ভারতের জেলে বন্দি আছেন। তাদের অবর্তমানে পরিবারগুলো অনেক কষ্টে দিন পার করছে।

এবিষয়ে জানতে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, জেলেদের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানালে পরবর্তীতে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে জানাবো এবং তাদেরকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা অনুরোধ করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন