বিয়ানীবাজারে গায়ে গা লাগানো মসজিদ-মন্দিরে সম্প্রীতির মহামন্ত্র

- আপডেট সময়ঃ ০৬:৩৩:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
- / ৬৮ বার পড়া হয়েছে।

বিয়ানীবাজার পৌরশহর থেকে পশ্চিমের নদী তীরবর্তী তিলপাড়া ইউনিয়নের শানেস্বর বাজার। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক আশ্চর্য দৃশ্য-গায়ে গা লাগানো মসজিদ আর মন্দির। মাত্র কয়েক গজের ব্যবধানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে মুসলিম আর সনাতনী ধর্মের প্রার্থণার পবিত্র স্থান। ৭২ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে পাশাপাশি চলছে নামাজ ও পূজা। অথচ একবারও ঘটেনি কোনো দ্বন্দ্ব, কোনো বিভেদ। বরং জায়গাটি হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত প্রতীক।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৬ যুগ আগে নদী দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যবসায়ীরা নামাজ পড়ার জন্য মন্দিরের পাশেই একটি ছোট ঘর তোলেন। আর সেটির নামকরণও করা হয় শানেস্বর বাজার জামে মসজিদ হিসেবে। পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেন। এখন পর্যন্ত মন্দির-মসজিদ নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোরবেলা ফজরের আজানে সমবেত হয় মুসল্লিরা। নামাজ শেষে তারা ঘরে ফেরেন। আর তার কিছুক্ষণ পরেই মন্দিরে ভেসে ওঠে শঙ্খ আর উলুধ্বনি। দুই ভিন্ন ধর্মীয় আহ্বান, অথচ পাশাপাশি প্রতিধ্বনিত হয়ে যেন গড়ে তোলে সম্প্রীতির সংগীত।
জানা গেছে, আজানের সময় থেকে নামাজের প্রথম জামাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরে ঢাক ও ঢোলসহ যাবতীয় শব্দ বন্ধ থাকে। নামাজের প্রথম জামাত শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলাও হয় না। শালীনতা বজায় রেখে একই উঠানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের লোকরা। মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি সেলিম উদ্দিন বলেন, মসজিদের পাশেই রয়েছে মন্দির। মসজিদ-মন্দির প্রায় কাছাকাছি সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা মন্দির কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করি। তারাও আমাদের সহযোগিতা করেন। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাক-ঢোল বন্ধ রাখা হয়। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে চলছে এ সম্প্রীতির বন্ধন। স্থানীয় সনাতন ধর্মীয় নেতা বিবেকানন্দ দাস বিবেক জানান, মসজিদ-মন্দিরকে ঘিরে সামান্য বিশৃঙ্খলাও হয় না এখানে। জন্মের পর থেকে এভাবে চলতে দেখছেন তিনি।
বিয়ানীবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি সজীব ভট্টাচার্য বলেন, একই উঠানে মসজিদ-মন্দির হলেও উভয় ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে স্ব-স্ব ধর্ম পালন করে আসছেন। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে চলছে এ সম্প্রীতির বন্ধন। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফ উজ্জামান বলেন, আমরা প্রশাসনের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। মসজিদ-মন্দিরকে ঘিরে কোনোদিন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপরও প্রশাসন সতর্ক থাকে। এখানে সব ধর্মের মানুষ একে-অপরকে সহায়তা করে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তাফা মুন্না বলেন, শানেস্বরের এই বাজারে মেলে এক বিরল দৃশ্য। মিনারে আজানের ধ্বনি আর মন্দিরে শঙ্খধ্বনি, পাশাপাশি মিলেমিশে যেন এক মহামন্ত্র উচ্চারণ করে। ভিন্নতায় ভরা এই সহাবস্থানই প্রমাণ করে সম্প্রীতির আসল রূপ হলো একে অপরকে গ্রহণ করা, পাশে দাঁড়ানো এবং ভিন্নতার মাঝেও মিল খুঁজে পাওয়া।