এইচএসসি ফলাফলে সিলেটে ভয়াবহ ধস

- আপডেট সময়ঃ ০১:১৫:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
- / ৪৯ বার পড়া হয়েছে।

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সিলেটে দেখা দিয়েছে এক নজিরবিহীন বিপর্যয়। গত ১২ বছরের মধ্যে এবারের ফলাফল সবচেয়ে খারাপ। সিলেট বোর্ডে পাসের হার নেমে এসেছে ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশে—অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক পরীক্ষার্থী এবার অকৃতকার্য।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি জানান, ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে আশানুরূপ ফল না করায় এ বছর সামগ্রিক ফলাফল নিম্নমুখী হয়েছে।
এবার সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পাসের হার ঢাকায়—৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এরপর বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭, রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪০, দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯, চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬, ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪, যশোরে ৫০ দশমিক ২০ এবং কুমিল্লায় ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সিলেট বোর্ড সবচেয়ে পিছিয়ে। এবার সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী—এর মধ্যে ছেলে ৬৮১ জন এবং মেয়ে ৯২১ জন। অন্যদিকে, ঢাকা বোর্ডে সর্বাধিক ২৬ হাজার ৬৩৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।
সিলেট বোর্ডে এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৬৯ হাজার ৯৪৪ জন। এর মধ্যে ৬৯ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। পাশ করেছেন ৩৫ হাজার ৮৭০ জন।
ছেলেদের পাসের হার ৪৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, আর মেয়েদের ৫৩ দশমিক ১৩ শতাংশ—অর্থাৎ মেয়েরা ফলাফলে ছেলেদের ছাড়িয়ে গেছে।
মানবিক বিভাগে পাসের হার সর্বনিম্ন, মাত্র ৪৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
বিজ্ঞান বিভাগে সর্বোচ্চ ৭৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
জিপিএ-৫ পাওয়া ১,৬০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১,৩৭৯ জন, মানবিকে ১৫৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৭০ জন।
সিলেট বিভাগেও পাসের হারে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা গেছে।
সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ৬০ দশমিক ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
হবিগঞ্জে ৪৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ,
সুনামগঞ্জে ৪৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ,
এবং মৌলভীবাজারে সর্বনিম্ন ৪৫ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
গত সাত বছরের পাসের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ বছর সিলেট বোর্ডে ফলাফলের ধস স্পষ্ট।
২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ
২০২৩ সালে ৭১ দশমিক ৬২
২০২২ সালে ৮১ দশমিক ৪০
২০২১ সালে ৯৪ দশমিক ৮০
২০২০ সালে ‘অটোপাস’ নীতিতে শতভাগ
২০১৯ সালে ৬৭ দশমিক ০৫
২০১৮ সালে ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ
অর্থাৎ, চলতি বছর ফলাফল কমেছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ পয়েন্ট।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন,“ইংরেজি ও গণিতসহ কয়েকটি বিষয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এতে সামগ্রিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।”
শিক্ষাবিদরা বলছেন, মহামারির পর শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি, অনলাইন শিক্ষার দুর্বলতা এবং নিয়মিত ক্লাসের অভাব—সব মিলিয়ে এই ফলাফল শিক্ষাব্যবস্থার গভীর সংকেত দিচ্ছে।
সিলেট বোর্ডের এই ফলাফল অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলছেন, সিলেটে শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি—নইলে আগামী বছর আরও বড় ধস দেখা দিতে পারে।