রাজশাহীতে ‘মাদ্রাসায় ছাত্র নেই, তবু চলছে আয়–ব্যয়ের খেলা’

- আপডেট সময়ঃ ০৯:০৮:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫১ বার পড়া হয়েছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার দিঘীপাড়া, পশ্চিমপাড়া, কলেজপাড়া ও দারুশা বাজিতপুর এলাকার সাধারণ মানুষ কেন্দ্রীয় দাখিল মাদ্রাসায় ব্যাপক দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও জবরদখলের অভিযোগ তুলেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় ১৩ বছর ধরে ওই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শওকত আলী মুক্তার দলীয় প্রভাব ও পেশীশক্তি ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি জবরদখল করে রেখেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি মাদ্রাসার যাবতীয় অর্থ, সম্পদ ও সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করে আসছেন।
স্থানীয়দের দাবি, বর্তমানে মাদ্রাসায় কোনো ছাত্র নেই। কিন্তু শওকত আলী মুক্তারের বড় ভাই আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন, যার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ আত্মসাত করা হয়েছে। প্রশাসনিক অনিয়ম ও জবরদখলের মাধ্যমে বছরের পর বছর মাদ্রাসার সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মাদ্রাসার ভবন ও মাঠের পাশাপাশি প্রায় ২ বিঘা ১৬ কাঠা পুকুর এবং ৩ বিঘা ১৬ কাঠা আবাদি জমি রয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসার নিজস্ব আমবাগান থেকেও প্রতিবছর নিলামের (ডাক) মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় হয়। কিন্তু এসব আয়ের কোনো সঠিক হিসাব কখনো প্রকাশ করা হয়নি।
এলাকাবাসী বলেন, একাধিকবার আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলেও শওকত আলী মুক্তার তা দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে ২৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখে গ্রামের সাধারণ মানুষদের নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সর্বসম্মতিক্রমে একটি অস্থায়ী পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়।ওই কমিটি শওকত আলী মুক্তারের কাছে মাদ্রাসার হিসাব ও বর্তমান অবস্থা জানতে লিখিতভাবে চিঠি পাঠায়। তবে একাধিকবার তারিখ নির্ধারণ করেও তিনি কোনো আলোচনায় বসতে রাজি হননি।
তদন্তে দেখা গেছে, ২০১২ ও ২০১৩ সালে মাদ্রাসার প্রকৃত আয় ছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭০১ টাকা, ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ১২২ টাকা। ফলে স্থিতি থাকার কথা ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৯ টাকা। কিন্তু শওকত আলী মুক্তার তার খসড়া বিবরণীতে একই দুই বছরে ব্যয় দেখান ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬২২ টাকা, যা প্রকৃত হিসাবের তুলনায় ৭৮ হাজার ৯২১ টাকা বেশি। এলাকাবাসীর দাবি, এখানেই অর্থ আত্মসাতের সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মুহাম্মদ হাসিবুর রহমান, মো. জামিউল ইসলাম ও মো. জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র গত ৩০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পবা উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং একই দিনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছেও দাখিল করা হয়।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক শওকত আলী মুক্তারের বিরুদ্ধে কর্ণহার থানায় একটি মামলাও রয়েছে, যেখানে তিনি ২৪ নম্বর আসামি হিসেবে চার্জশিটভুক্ত।
এলাকাবাসী অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও মাদ্রাসাটি অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, “সহকারী শিক্ষক শওকত আলীর বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তিনি দাবি করেন, এটি বিএনপির কিছু চাঁদাবাজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তৈরি করা হয়েছে। ক্লাস না হওয়ার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সত্য নয় — পরবর্তীতে ক্লাস যথারীতি হয়েছে এবং বিষয়টি ইউএনও অবগত আছেন। মাদ্রাসার পুকুর ও অন্যান্য আয়ের হিসাব ইউএনওর কাছে রয়েছে। আমরা নিয়মিত আয়-ব্যয়ের তদারকি করেছি। কিছু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে হিসাবকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। আমি আলোচনায় ও তদন্তে সবসময় অংশগ্রহণ করেছি। বর্তমানে মাদ্রাসার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ইউএনওর হাতে রয়েছে।”
এ বিষয়ে পবা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, “অভিযোগটি পাওয়ার পর আমরা তদন্ত করেছি এবং তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দিয়েছি। তদন্তে অভিযোগে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। যেহেতু এটি একটি নন-এনজিও প্রতিষ্ঠান, তাই আমাদের অফিস থেকে এ বিষয়ে আর কোনো করণীয় নেই।”
পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত রহমান আজিজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক শওকত আলী মুক্তার বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে হেনস্তা করার জন্য কিছু ব্যক্তি ষড়যন্ত্র করছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসার উন্নয়নে কাজ করছি, কিন্তু তারা রাজনৈতিক কারণে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”