০৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫

বিয়ানীবাজারে শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশে নেই কোন সংগঠন

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ১১:৩৪:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৩৭ বার পড়া হয়েছে।

# শিশুদের নিয়ে ভাবার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান—দুটোই কমেছে

# সরকার ও প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা কমে গেছে

# সাংস্কৃতিক কার্যক্রমবিরোধী পরিবেশও বাধা

খেলার মাঠ উধাও। কার্যত বিলুপ্ত গ্রাম-পাড়াভিত্তিক পাঠাগার সংস্কৃতি। স্কুলের সীমিত পরিসর ছাড়া সাংস্কৃতিক আয়োজনও তেমন নেই। এই পরিবেশে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখে বেড়ে উঠছে বিয়ানীবাজারের নতুন প্রজন্ম। কেবল বিয়ানীবাজার পৌরশহর নয়, উপজেলার গ্রামের পরিবেশও সে পথের দিকেই ছুটছে।

জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলায় কখনোই শিশু-কিশোরদের বিকাশ সাধনে কোন ধরনের সংগঠন গঠন করা হয়নি। যার নেতিবাচক প্রভাবও প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে নানাভাবে। শিশু-কিশোররা খিটখিটে মেজাজ নিয়ে বড় হচ্ছে। যা বায়না ধরছে, তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে সরানো যাচ্ছেনা। অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট শমসের আলম বলেন, শিশুদের নিয়ে ভাববার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান—দুই-ই কমছে। পরিবার থেকে সন্তানের মানস গঠন ও সামাজিকীকরণের কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে না। জীবনযাপনের চাপ, স্মার্টফোনসহ ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব এর জন্য অনেকটা দায়ী।

সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজারে একসময় খেলাঘর নামক শিশু সংগঠন প্রতিষ্টান করা হয়। বর্তমানে তা বিলুপ্ত। একটি জাতীয় পত্রিকার শিশুদের পাতা ‘খেলাঘর’ থেকে জন্ম হয়েছিল এই শিশু সংগঠনের। একসময়ের সাড়া জাগানো কন্ঠকলি’র কথা জানেনা এখনকার প্রজন্ম। বর্তমানে কয়েক দশক ধরে শিশু-কিশোরদের মানস গঠনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম এমন কোন সংগঠন নেই। সরকারি পৃষ্টপোষকতায় শির্পকলা একডেমি পরিচালিত হলেও চলছে ধুঁকে ধুঁকে।

ফলে সংস্কৃতির পাশাপাশি খেলাধুলার চর্চার মধ্য দিয়ে সুস্থ শরীর ও মন তৈরির কার্যক্রম বেশ পিছিয়ে আছে বিয়ানীবাজারের শিশু-কিশোররা। লেখক ফয়জুর রহমান জানান, ‘প্রযুক্তি ছিল আশীর্বাদ। কিন্তু তার অপব্যবহার সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কয়জন বাবা-মা আলাদা করে শিশুদের সময় দেন? বেশির ভাগ পেশা-সংসারের কাজের বাইরে যতটুকু সময় পান, তা মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটান। সন্তানের মানস গঠনে সংগঠন চর্চা কিংবা পাঠ্যবইয়ের বাইরের কার্যক্রমের গুরুত্ব কতটা, তা অনেক বাবা-মা জানেন না।’

বিয়ানীবাজারে শিশুদের প্রতিভা বিকাশে নেই কোন প্রাতিষ্টানিক সংগঠন। আর্ট শিক্ষা, কবিতা আবৃতি কিংবা সঙ্গিত-নৃত্য চর্চার কোন স্বীকৃত সংস্থা নেই।

বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিলাদ মো: জয়নুল ইসলাম বলেন, বদলে যাওয়া সামাজিক প্রেক্ষাপট, অর্থনৈতিক সক্ষমতার ঘাটতি এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নতুন শিশু-কিশোর সংগঠন গড়ে ওঠছেনা। এরপরও আমরা আশার আলো দেখি। এখনো অনেক অভিভাবক আছেন, যাঁরা চান, তাঁদের সন্তানেরা মনন, শিল্প-সংস্কৃতির মধ্যে থেকে বেড়ে উঠুক। তাই আশার আলো জ্বালিয়ে রাখতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানাই।’

কুড়ারবাজার কলেজের প্রভাষক বিজিত আচার্য জানান, ‘ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে শিশুসংগঠনগুলোর কার্যক্রম। শিশুদের নিয়ে ভাবার যেন কেউ নেই। এখন পড়ালেখার বাইরে শিক্ষার্থীদের যেন আর কিছুই করার নেই! এ কেমন সমাজের দিকে এগোচ্ছে বিয়ানীবাজার?’

বর্তমান সময়ের সংকট নিয়ে কন্ঠকলির কর্মকর্তা জনাব খোকন বলেন, ‘এখন অভিভাবকেরা মনে করেন, পাঠ্যপুস্তকে সেরা নম্বর পেলেই তার সন্তান সেরা। কিন্তু একজন ভালো মানুষ হতে হলে পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও সৃজনশীল বই পড়তে হয়, মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, দেশ ও জাতিকে জানতে হয়, সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে থাকতে হয়। অভিভাবকেরা বুঝতে পারছেন না, তাঁদের সন্তানেরা মানবিক হচ্ছে না, সামাজিক হচ্ছে না, দেশপ্রেমিক হচ্ছে না। এ কারণেই সমাজে এত অবক্ষয়।’

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবে নতুন নেতৃত্বে শাওন ও আলম