০৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

রম্যগল্প: মামার সান্ডা প্রেম

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময়ঃ ১২:২৬:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
  • / ১৩০ বার পড়া হয়েছে।

অনেক বছর পর মামা দেশে ফিরলেন। সৌদি আরবে কাটিয়েছেন প্রায় এক যুগ। ফেরার সময় সঙ্গে করে এনেছেন কিছু রহস্যময় অভ্যাস, আংশিক খলনায়ক টাইপ দাঁড়ি, আর এক অভূতপূর্ব খাদ্যতালিকা।

এয়ারপোর্ট থেকেই শুরু। মামার লাগেজ খুলে দেখি সৌদি খেজুর, আতর, আর এক বোতল ঝাঁঝালো গন্ধওয়ালা মসলা, যেটা খুললেই পাশের রুমের মানুষ চোখ চুলকায় আর হাঁ করে হাঁচি দেয়।

আমরা ভেবেছিলাম, এতদিন পর দেশে ফিরে মামা গরুর মাংস দেখে বাকরুদ্ধ হবেন, পাতিলের ঢাকনা খুলে লাফ দিয়ে পড়বেন! কিন্তু না, তিনি শুধু বললেন, ‘আমারে কেউ একটা ভালো সান্ডা খাওয়াও তো!’

সান্ডা? আমাদের মধ্যে অদ্ভুত চুপচাপ ছড়িয়ে পড়ে। তন্ময় তো ফিসফিস করে বললো, ‘এইটা কোনো নতুন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ নাকি?’

আমরা গুগল সার্চ দিলাম। কিছুক্ষণ পর এক দৈত্যাকার চিত্র ভেসে উঠলো। একটা লম্বাটে, লেজওয়ালা, চ্যাপ্টা-মাথাওয়ালা প্রাণী! দেখে তন্ময় মোবাইল ছুঁড়ে বললো, ‘এটা খায়?! এটা তো মাটির নিচে থাকে!’

মামা হেসে বলে উঠলেন, ‘তুমরা কিছুই জানো না! খাইলে বুঝতা শক্তি কোথা থেকে আসে! সৌদিতে এইটা না খাইলে মনে হইত দিনটাই বিফলে গেল।’

মামার কণ্ঠে এমন আত্মবিশ্বাস, যেন তিনি সান্ডা খেয়ে সৌদির মরুভূমিতেও ৪০ কেজি খেজুর মাথায় নিয়ে দৌড়াতে পারতেন! দেশে ফিরেই মামা এক অদ্ভুত মিশনে নেমে গেলেন…‘সান্ডা সন্ধান অভিযান’। স্যান্ডো গেঞ্জি, লুঙ্গি আর হাতে একটা বাঁশের লাঠি। এলাকায় হাঁটছেন, লোকজন ভাবছে উনি বুঝি গরুর খোঁজে!

একদিন দেখি মামা বলছেন, ‘এই বাঁশঝাড়ে গুইসাপ আছে, মানে এখানেই সান্ডা লুকিয়ে!’
আমরা বলি, ‘মামা, ওটা গুইসাপ! সান্ডা তো অন্য কিছু!’
তিনি চোখ বন্ধ করে বললেন, ‘আছে, আছে! গুইসাপ হলো তার কনিষ্ঠ আত্মীয়! আমি তো রং দেখেই বুঝি!’

এরপর যা হলো, তা আরেক পর্যায়ের কাণ্ড! একদিন দেখি মামা হাতে ক্যামেরা টাঙানো ইউটিউবার আর পেছনে ৫-৬ জন বাচ্চা নিয়ে জঙ্গলে ঢুকছেন। ভিডিওর শিরোনাম: ‘সৌদি ফেরত মামা বনাম বুনো সান্ডা…লাইভ একশন!’

এরপর থেকে মামার নাম হয়ে গেল ‘সান্ডা মামা’। বাজারে গেলে দোকানদারও বলে, ‘ওই যে সান্ডা মামা আসছে!’
নাপিত তো একদিন মাথা খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ভাই, সান্ডার মাংস খাইলেই কি চুল উঠে?’
মামা চোখ টিপে বললেন, ‘শুধু চুল না, প্রেমিকারাও পিছু নেয়!’

এরপর হঠাৎ দেখি মামার ফ্যান ফলোয়ারও তৈরি হয়ে গেছে। এক চায়ের দোকানে দেখি দুজন আলোচনা করছে, ‘ভাই, উনি যেদিন ঝাঁড়ের দিকে তাকায়, সেদিন নাকি গুইসাপও কাঁপে!’ আরেকজন বললো, ‘আমি সান্ডা খাই না, কিন্তু মামার লাইভ মিস করি না!’

তবে গল্পে একখানা কষ্টও লুকিয়ে আছে। মামা একদিন দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘এই দেশে আসার পর একটা ভালো সান্ডার দেখা পাই না! আবার যাই সৌদিতে!’
আমরা বললাম, ‘মামা, গুইসাপ দিয়ে চচ্চড়ি করি, খেয়ে দেখেন তো!’

তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘তা তো পারি, কিন্তু জানো রে, গুইসাপ গরুর মতো… আর সান্ডা? সে তো এক্কেবারে উটের মতো বিরল, শক্তিশালী, আর মজার!’

শেষ কথা যদি বলি, আমরা যেখানে গরুর মাংস আর মুরগির মাঝেই আনন্দ খুঁজি, মামা সেখানে ‘সান্ডা’ নামক এক অদ্ভুত প্রেমে পড়েছেন। তার কাছে সান্ডা শুধু খাদ্য না, একটা আবেগ, এক্সপেরিয়েন্স, আর এক অদ্ভুত সাহসিকতার প্রতীক।

তাই যদি আপনার আশেপাশে কোনো মামা, চাচা বা খালু ‘সান্ডা খাইতে চাই’ বলেন, তো হাসবেন না, বরং বলুন ‘ভাই, আপনি আসলেই দুঃসাহসী মানুষ!’

আর আমরা? গরু খাই, গুইসাপে ভয় পাই, আর সান্ডার নাম শুনে দৌড়ে পালাই!

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য