অস্থির অনিশ্চয়তার প্রভাব রাজনীতির সমীকরণে

- আপডেট সময়ঃ ০৭:৪২:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
- / ৩ বার পড়া হয়েছে।

সময় যত গড়াচ্ছে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে ততই অনিশ্চয়তা বাড়ছে। জটিল হচ্ছে রাজনৈতিক সমীকরণ। দেশের অর্থনীতিতেও অস্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক চলমান।
গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়ছে। রাজধানী ঢাকা আবারও যেন দাবির শহরে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিতে, সরকারে, জনপরিসরে সর্বত্র অস্থিরতা—এ ধারণা অনেকের। কত দিন থাকবে এই সরকার, কবে নির্বাচন হবে? কোন দিকে যাচ্ছে দেশের রাজনীতি—এসব নিয়ে প্রশ্ন-আলোচনা এখন সর্বত্র।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ—ঐক্যের বদলে রাজনীতির মাঠে অনৈক্যের সুর ক্রমে তীব্র হচ্ছে। দীর্ঘদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে যেসব দল শামিল থেকে নিপীড়নের শিকার হয়েছে, সেসব দলই এখন পরস্পরের ত্রুটি অন্বেষণে ব্যস্ত। এই ত্রুটি অন্বেষণ অনেক ক্ষেত্রে শিষ্টাচারের গণ্ডি মানছে না। রাজনৈতিক সমীকরণ দ্রুত পাল্টাচ্ছে।
কিছুদিন আগেও যে দলগুলোর মধ্যে নৈকট্য ছিল, আজ তা আর বহাল নেই। এক সপ্তাহ আগের সম্ভাবনা পাল্টে যাচ্ছে ‘সম্ভব না’তে। দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্লা ভারীরও চেষ্টা হচ্ছে। ছোট ছোট অনেক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক মেরুকরণে এদের অবস্থান কী হবে তা অনিশ্চিত।
তবে কারো মতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বিভিন্ন দলের বিভিন্ন মত এবং কার্যকলাপ থাকে। এখনো সে রকমই হচ্ছে।
পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্লেষকরা যা বলছেন : দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার খুব সাংঘাতিকভাবে আমাদের হতাশ করেছে। আমরা মনে করেছিলাম, এই সরকার খুব দ্রুত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে যাত্রা করবে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তাদের যদি প্রধান লক্ষ্য থাকত সংস্কার ও নির্বাচন, তাহলে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পথরেখা ধরে তারা এগোতে পারত। প্রথমদিকে মনে হয়েছিল তারা গুড ইনটেনশন নিয়ে সংস্কার চায় এবং সংস্কারের ধারাবাহিকতায় দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে চায়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, অন্য কোনো উদ্দেশ্য ঢুকে গেছে। তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড থেকে আমরা অনুমান করছি, তারা তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়। দ্বিতীয় কোনো এজেন্ডা যদি মাঝখানে ঢুকে থাকে, তাহলে সামনে আমাদের জন্য অনেক সমস্যা অপেক্ষা করছে। আর তা যদি না হয়, এই সরকার যদি সত্যিই মনে করে কিছু সংস্কার করেই নির্বাচন দেবে, তাহলে তাতেও অনেক কালক্ষেপণ হচ্ছে। কালক্ষেপণটা যদি এমন হয়, শেষ মুহূর্তে যদি বলে, সংস্কারের জন্য আরো সময় দরকার, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম অনাস্থা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। যেভাবে সংস্কার প্রক্রিয়ার কাজগুলো চলছে, এটা এত দিন তো লাগার কথা না। এতে মনে হচ্ছে, তারা কালক্ষেপণ করতে চাচ্ছে। দেরি করে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার মধ্যেও কেউ হয়তো কিছু গেইন করতে চাচ্ছে। কোনো পক্ষ হয়তো চাচ্ছে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার লক্ষ্যে দেশে কিছু ক্রাইসিস সৃষ্টি করতে।’
মানবিক করিডর নিয়ে সরকারের অবস্থানের সমালোচনা, পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থতা, অর্থনীতিতে অস্বস্তি—এসব উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ আরো বলেন, দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা না গেলে দেশ স্থিতিশীলতার দিকে এগোবে না। প্রধান উপদেষ্টা আজও (সোমবার) বলেছেন, তিনি আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচন করতে চান। কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় অভ্যুত্থানের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর একটিই লক্ষ্য ছিল—ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন। অন্য কিছু বিষয়ে কোনো সমঝোতা ছিল না। গত বছর অক্টোবরের প্রথমদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের অপপ্রচার, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের আহবান জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর এ ধরনের উদ্যোগ আর দেখা যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরেকজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন এ ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘চব্বিশের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। এ ধরনের পরিবর্তনের পর স্থিতিশীলতা আসতে সময় লাগবে। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে, সময় দিতে হবে। এখন যদি নির্বাচন দেওয়া হয়, আমার মনে হয় না তাতে সুফল পাওয়া যাবে। ফ্যাসিস্টদের লোকজন এখনো সব জায়গায় বসে আছে। নির্বাচনের আগে এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে তারপর নির্বাচন দিতে হবে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা হতেই পারে। সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কম-বেশির কারণে দলগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে হয়তো। সবার প্রাপ্তি সমান হলে এটা হয়তো হতো না। আবার ছোট-বড় দল বিবেচনায় সবার প্রাপ্তি সমান হওয়াও সম্ভব না। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে পারে এবং তখন সমতা আসতে পারে।
সরকারের কিছু কর্মকাণ্ডের সমালোচনা এবং ম্যান্ডেট প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘এই সরকার এক ধরনের বৈপ্লবিক সরকার। বৈপ্লবিক সরকার যেকোনো কাজ করতে পারে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো মানবিক করিডর দেওয়ার বিপক্ষে। এ বিষয়ে আরো স্টাডি এবং সবার সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত বা কথা বলা ঠিক না।’
তবে লেখক, গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের মতে এই সরকারের ক্ষমতা সীমিত। সম্প্রতি একটি সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘মৌলিক সংস্কার করতে গেলে সরকারের কিছু ক্ষমতা প্রয়োজন হয়। কিন্তু সে ধরনের ক্ষমতা এই সরকারের নেই। যেমন—সংবিধান সংস্কার একটি অনির্বাচিত সরকার করতে পারে না। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে তা করতে হবে। আর তা নির্বাচন ছাড়া সম্ভব না। এই সরকারের অন্যতম কাজ হলো—নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া।’
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঐক্য কেন হতে হবে? বরং এখন দরকার একটি নির্বাচন দিয়ে দেওয়া। নিয়ন্ত্রণের অভাবে দেশে অনেক রকম সমস্যা হচ্ছে। এটা বন্ধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। যত দিন যাচ্ছে ততই শাসনব্যবস্থার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আলগা হয়ে যাচ্ছে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না দিলে সামনের দিনে নৈরাজ্য বেড়ে পরিস্থিত আরো খারাপ হবে। কিন্তু এই সরকারের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তারা যত দূর সম্ভব টেনে শাসনকাল বাড়াতে চাচ্ছে, এটি ক্ষতিকর।’
রাজনীতিকদের মূল্যায়ন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকের মধ্যে নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতা ভোগের পালা দীর্ঘ করার দুরভিসন্ধি আছে। তারাই পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে। মানবিক করিডর দেওয়াসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব দেখে ফ্যাসিস্ট হাসিনার অনুসারীরা রাস্তায় মিছিল বের করার সাহস দেখাচ্ছে। কিন্তু তা সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারছে না সরকার।’
ইকবাল হাসান টুকু আরো বলেন, সরকার কিংস পার্টি করেছে। কিংস পার্টির অপকর্মে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সার্বিক বিবেচনায় দেশে একটি ক্রান্তিকাল চলছে। জাতি ভীষণ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। তবে এখনো বলতে হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এখনো সময় আছে। তাদের যে কাজ, অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনের রোডম্যাপ পেলে মানুষ গণতন্ত্র উত্তরণের পথ দেখতে পারবে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়। তাই তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এই সরকার নির্বাচনের আয়োজন করার মাধ্যমে তাদের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি ঘটাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো কোনো উপদেষ্টার বক্তব্য, রাজনৈতিক ভূমিকা, অন্যকে আক্রমণ করে উসকানিমূলক বক্তব্য নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। উপদেষ্টাদের এসব ভূমিকা জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার উপাদান হিসেবে কাজ করবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ গত ১৮ মে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তাঁর এক নিবন্ধে এই পরিস্থিতির কথা লিখেছেন।
তিনি আরো লিখেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অবাধ সুযোগ লাভ করে। আক্রমণাত্মক, উসকানিমূলক ও পরস্পরকে দোষারোপ করে প্রদত্ত বক্তব্য বিবৃতি ক্রমাগতভাবে রাজনীতিতে বিভেদ ও বিতর্ক সৃষ্টি করছে। সবার প্রত্যাশা ছিল—ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে ফ্যাসিবাদের করালগ্রাস থেকে উদ্ধার করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যাওয়া। সাম্প্রতিককালের ঘটনাপ্রবাহ ভবিষ্যৎ রাজনীতি সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করেছে। নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে তৎপরতা চালানোর কারণে জনগণও সন্দেহ-সংশয়ের মধ্যে নিপতিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছিল, সেই ঐক্য যেন ক্রমেই অনৈক্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা কোনো অবস্থাতেই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
এ বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত দলগুলোর মধ্যে বিভাজন বা মতানৈক্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফ্যাসিবাদ উত্খাতে আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন ছিল। তাই এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবার মধ্যে ঐক্য থাকা আবশ্যক।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা শুরুতেই অন্তর্বর্তী সরকারকে বলেছিলাম, আপনাদের অন্যতম প্রধান কাজ হবে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। শুরুতে সরকার এই কাজটি করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে আজ এ ধরনের সংকটের উদ্ভব হতো বলে আমি মনে করি না।’
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দল ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের। সবাই চাইবে এই সংস্কারের মাধ্যমে যার যার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে। সেটি তো সম্ভব না। নানা মতে আমি কোনো সংকট দেখি না। বরং আমি বলতে চাই, এরই মধ্যে সংস্কার নিয়ে সব দল যেসব কথা বলেছে, তার মধ্যে যতটুকু ঐকমত্য পাওয়া গেছে, সরকার ওই বিষয়টি নিয়েই কাজ করুক। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজে যদি হাত দেয় তাহলে অনেক সংকট দূর হয়ে যাবে। কিন্তু সেই পথে অগ্রসর না হয়ে মানবিক করিডর ও বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশিদের যুক্ত করার সিদ্ধান্তের কারণে রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, আমরা যদি জনগণের ওপর নির্ভর না করে অন্য কোনো শক্তির ওপর নির্ভর করতে চাই, তার ফলাফল শুভ হবে না।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক সাইফুল হক বলেন, সরকার সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য নেই। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমার কথা বলা হলেও কোনো রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছে এবং বলেছে, সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ডিসেম্বরের পর নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছেন, যা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।