০১:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

৪ মাসের ছেলে শিশু কে নিয়ে কষ্টে আছেন জুলাই আন্দোলনে নিহত তারেকের স্ত্রী

ডেস্ক নিউজ:
  • আপডেট সময়ঃ ০৩:১৯:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • / ২০৪ বার পড়া হয়েছে।

★ বিজয় মিছিল শেষে থানার ভিতরে লাশ পাওয়া যায় তারেকের

★ মামলার সঙ্গে নিজেকে জড়াতে চান না শহীদ তারেকের স্ত্রী

★আমার স্বামীকে যারা গুলি করেছে, তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মামলা-মোকদ্দমা করে কী লাভ?
★ শ্বশুরবাড়ির কারও সঙ্গেই আমার যোগাযোগ নেই।

বিয়ানীবাজারে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়োৎসব করতে গিয়ে পৌরশহরে বিকেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শহীদ হয়েছেন। বিয়ানীবাজার মোল্লাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিদনপুর গ্রামের তারেক আহমদ (২৯)। টকবগে যুবক তারেক আহমফ বিয়ে করেছিলেন ২ বছর আগে কিন্তু সন্তানের মুখে বাবা ডাক শুনা হলো না তার এমন বর্ননা দিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন নিহত শহীদ তারেক আহমদ এর স্ত্রী সামিয়া আক্তার তিনি বলেন

ফুটফুটে এই শিশুটির বাবা ছেলের মুখে বাবা ডাক শোনা হলো না ৪ মাসের শিশু সন্তান ও আমাকে রেখে পাড়ি দিলেন ওপারে আমার ছেলে, আরিয়ান আহমদ রাফির বয়স এখন দেড় বছর। মুখে কেবল কথা ফুটতে শুরু করেছে। আধো আধো বোলে এরই মধ্যে ‘বাবা, বাবা’ ডাক শুরু করেছে। কিন্তু অবুঝ এই শিশু জানে না, বাবা বলার আগেই সে তার বাবাকে হারিয়ে ফেলেছে। ২২ বছর বয়সে স্বামী হারিয়ে দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন ছামিয়া আক্তার। তিনি বলেন, আমার স্বামী অনেক ভালো মানুষ ছিল। দুই বছরের সংসারে সে কখনো আমার সঙ্গে একটা খারাপ কথাও বলেনি। মৃত্যুর দিন সকাল বেলা আমার ও আমার ছেলের সঙ্গে হাসিখুশি হয়ে কথা বলেছে। বিকেলে শুনি আমার স্বামীকে পাওয়া যাচ্ছে না, রাতেই শুনি তিনি আর দুনিয়াতে নাই। কথাগুলো বলতে বলতেই আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।ছামিয়া আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে নিয়ে আমি অনেক গর্ব করি। আমার স্বামী দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। আমার ছেলে বড় হলে তার বাবার সম্পর্কে গর্ব করে বলতে পারবে। আমাদের ছেলেকে ঘিরে দেখেছিলাম ছোট ছোট স্বপ্ন কিন্তু আমার ভাগ্যে তা আর নেই অনেক কষ্টে দিন পার করতেছি আমি আমার স্বামী তারেক আহমদের মৃত্যুর মাস দেড়েক পর থেকে পারিবারিক ঝামেলা তৈরি হওয়ায় আমার ছেলে আরিয়ানকে নিয়ে মায়ের কাছে চলে আসি । এরপর থেকেই শ্বশুরবাড়ির কারও সঙ্গেই নাকি তার কোনো যোগাযোগ নেই। প্রতিবেদকের সঙ্গে এসব কথা হয় তারেক আহমদের স্ত্রী ছামিয়া আক্তারের।
শহীদ তারেক আহমদের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার মোল্লাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিদনপুর গ্রামে। তার স্ত্রী ছামিয়া আক্তারের পৈতৃক নিবাস ব্রাক্ষণবাড়িয়া হলেও জন্মসূত্রে সপরিবারে বিয়ানীবাজারের মোল্লাপুর গ্রামে বসবাস করতেন তারা। পাশাপাশি এলাকায় হওয়ায় তারেক ও ছামিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক এবং এক পর্যায়ে উভয় পরিবারের সম্মতিতেই তারেক মৃত্যুর দুই বছর আগে ছামিয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের দুই বছরের মধ্যেই তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে শিশু আরিয়ানের।

সরকারি কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ছামিয়া আক্তার জানান, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকা এবং সিলেট জেলা পরিষদ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান পেয়েছি। তবে আমার খুব একটা চাওয়া নেই, একটা থাকার ব্যবস্থা, ছেলের ভরণপোষণ- ব্যস এতটুকুই। যদি আমাকে কেউ একটা থাকার ব্যবস্থা ও একটা ছোটখাটো চাকরি ম্যানেজ করে দিতে পারেন- তাহলে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে জীবনের বাকিটা পথ কাটিয়ে দেব।

এখন কীভাবে চলছেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি জানান, আমার মায়ের আশ্রয়েই আছি ছেলেকে নিয়ে। মা যতদিন বেঁচে আছেন, ভালো থাকব। কিন্তু মা না থাকলেই আমার ও আমার ছেলের কী হবে সেটা ভেবেই আমি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকি।

ছামিয়া আক্তার আরও জানান, আমার স্বামীর বাড়িতে তার দুই ভাই ও দুই বোন আছেন। তাদের মা থাকলেও বাবা মারা গেছেন। বর্তমানে শ্বশুরবাড়ির কারও সঙ্গেই আমার যোগাযোগ নেই।

যোগাযোগ না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়ির সবাই বাইরের লোকজনদের কাছ থেকে আমি ও আমার ছেলেকে আড়ালে রাখেন। কেউ কোনো সহায়তা করলে আমি ও আমার ছেলে যাতে কোনো ভাগ না পাই, সে কারণে তারা আলাদা করে রাখত।’

কোনো সরকারি সহযোগিতা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এখনো কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি। আর বিভিন্ন দল কিংবা ব্যক্তি কর্তৃক সহযোগিতা পেলেও সেটা আমার শাশুড়ি ভালো বলতে পারবেন, তবে আমি পাইনি।

তারেকের মা ইনারুন বেগম ও বড়বোন মর্জিনা বেগম বলেন, ৫ আগস্ট বিয়ানীবাজার পৌরশহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ চলে। তারেকও আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। পরিচিতজন জানান, ওইদিন দুপুরের কোনো একসময় পুলিশ তারেককে ধরে নিয়ে যায়। সারাদিন পুলিশ-জনতার সংঘর্ষ চলায় পুলিশের সঙ্গে আমরা কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। ঘটনার দিন সন্ধ্যার দিকে পুলিশ আর আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে রায়হান ও ময়নুল নামের দু’জন মারা যাওয়ার খবর সমগ্র উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই সংবাদে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে আমার পরিবার।

রাতের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারেকের খোঁজ নেন আত্মীয়-স্বজন। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর ৬ আগস্ট ভোরে বিয়ানীবাজার থানার সীমানা দেয়ালের কাছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তারেককে পাওয়া যায়। তারেকের কপালে একটি এবং দুই পায়ে গুলির চিহ্ন ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে তাকে উদ্ধার করে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তারেককে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, তারেক আহমদ নিহত হওয়ার ঘটনায় গত বছরের ২০ আগস্ট বিয়ানীবাজার থানায় মামলা করেন মা ইনারুন বেগম। পরবর্তীতে মামলা দায়েরের দু’দিন পর তিনি আদালতে মামলা প্রত্যাহারেরও আবেদন করেন।

তবে এসবের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে চান না বলে জানান শহীদ তারেকের স্ত্রী ছামিয়া আক্তার। তিনি বলেন, যারা আমার স্বামীকে গুলি করেছে, তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মামলা-মোকদ্দমা করে কী লাভ?

 

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য