০৫:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

ফ্রান্সে ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ, আশ্রয়প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ কী?

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট সময়ঃ ০১:১০:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে ঘোষণা করায় ফ্রান্সে অবস্থানরত বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই ঘোষণার পর বাংলাদেশিদের আশ্রয় প্রক্রিয়া আরো কঠোর ও দ্রুততর হয়ে পড়বে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের।

সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশসহ সাতটি দেশকে ‘নিরাপদ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। কমিশনের ভাষ্য, এ পদক্ষেপ আশ্রয়প্রার্থীদের যাচাই প্রক্রিয়াকে আরো দ্রুত ও দক্ষ করতে নেওয়া হয়েছে।

নতুন তালিকাটি ইইউর ‘প্যাক্ট অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাসাইলাম’ আইনের একটি অংশ, যা ২০২৬ সালের জুলাই থেকে পুরোপুরি কার্যকর হবে।

এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশিদের আইনি পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে কথা বলেছে ফ্রান্সের প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত শীর্ষস্থানীয় এনজিও ‘ফ্রন্স তেখ দাজিল’-এর প্যারিস-১৮ অঞ্চলের সার্ভিস বিভাগের প্রধান রোমেন ফ্লাবিয়ান-এর সঙ্গে।

ইইউ তালিকা মানা ফ্রান্সের জন্য কী বাধ্যতামূলক?

রোমেন ফ্লাবিয়ান : ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই তালিকা ফ্রান্সের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। ফ্রান্সে আশ্রয় সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে অফপ্রা (ফ্রান্সের শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি সুরক্ষা দপ্তর)।

ফরাসি আইনের কোড L.121-13 অনুযায়ী অফপ্রা তার পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে স্বতন্ত্রভাবে কোন দেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করবে । বর্তমানে অফপ্রা-এর তালিকায় বাংলাদেশ নেই যদিও ইউরোপীয় কমিশনের তালিকায় এবার বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে।

‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার মানদণ্ডগুলো কী?

রোমেন ফ্লাবিয়ান : ফরাসি আইন ও ইউরোপীয় নির্দেশনায় বলা হয়েছে—একটি দেশকে তখনই ‘নিরাপদ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যখন সেখানে আইনত সুরক্ষা কার্যকর; রাজনৈতিক নিপীড়নের ঝুঁকি সামগ্রিকভাবে অনুপস্থিত; সামগ্রিকভাবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এবং যৌন অভিমুখ যাই হোক না কেন সেখানে কখনোই নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণ বা অপমানজনক শাস্তি করা হয় না এবং সশস্ত্র সংঘাতের সময়ও সেখানে সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতার সাধারণ কোনো হুমকি থাকে না।

বাংলাদেশ যদি ফ্রান্সে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় তাহলে কী ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন আশ্রয়প্রার্থীরা ?

রোমেন ফ্লাবিয়ান: বাংলাদেশ যদি ভবিষ্যতে ফ্রান্সের নিজস্ব ‘নিরাপদ দেশের’ তালিকায় যুক্ত হয়, তাহলে আশ্রয় প্রক্রিয়ার ওপর বেশ কিছু বাস্তবিক পরিবর্তন আসবে।

তা হলো—
(ক)আশ্রয় আবেদন দ্রুততর ও সরলীকৃত পদ্ধতিতে (দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া) অফপ্রা মূল্যায়ন করবে;

(খ) অফপ্রা তখন মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন খতিয়ে দেখতে বাধ্য থাকবে;

(গ) আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে আবেদনকারী সিএনডিএ-তে (শরণার্থী আপিল আদালত) আপিল করতে পারবেন ঠিকই তবে সেই আপিল স্থগিতাদেশমূলক হবে না (স্থগিত-অযোগ্য আশ্রয় প্রক্রিয়া);
ফলে আপিল চলাকালীনও তাকে ফ্রান্স ত্যাগের নির্দেশ (ওকিউটিফ) দেওয়া হতে পারে।

ফ্রান্স কি বিগত এক দশকের ভিতরে কখনও বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল?

রোমেন ফ্লাবিয়ান : ফ্রান্সের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত(কনসাই দ্যু এ্যাতা) ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছিল। আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে—বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর সহিংসতা, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার মতো বিষয়গুলো।

রোমেন ফ্লাবিয়ান আরো বলেন “এই পর্যবেক্ষণ আজও পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি। তাই ফ্রান্সের আইন প্রণেতারা যদি এসব বিষয় বিবেচনায় নেন তাহলে বাংলাদেশকে নিজেদের নিরাপদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এখনো সতর্ক থাকতে পারেন।

নিরাপদ দেশ হিসেবে ঘোষণা হলে বাংলাদেশের আশ্রয় প্রার্থীদের সব আবেদন কি প্রত্যাখ্যান হবে?

রোমেন ফ্লাবিয়ান : না; একেবারেই নয়। বাংলাদেশ নিরাপদ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও অফপ্রা (ফ্রান্সের শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি সুরক্ষা দফতর) প্রতিটি আবেদনকারীর ব্যক্তিগত পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেয়। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তিনি দেশে ফেরত গেলে নিপীড়নের শিকার হবেন তাহলে সেই ব্যক্তির সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগ ভবিষ্যতে খোলা থাকবে ।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

ফ্রান্সে ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ, আশ্রয়প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ কী?

আপডেট সময়ঃ ০১:১০:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে ঘোষণা করায় ফ্রান্সে অবস্থানরত বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই ঘোষণার পর বাংলাদেশিদের আশ্রয় প্রক্রিয়া আরো কঠোর ও দ্রুততর হয়ে পড়বে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের।

সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশসহ সাতটি দেশকে ‘নিরাপদ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। কমিশনের ভাষ্য, এ পদক্ষেপ আশ্রয়প্রার্থীদের যাচাই প্রক্রিয়াকে আরো দ্রুত ও দক্ষ করতে নেওয়া হয়েছে।

নতুন তালিকাটি ইইউর ‘প্যাক্ট অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাসাইলাম’ আইনের একটি অংশ, যা ২০২৬ সালের জুলাই থেকে পুরোপুরি কার্যকর হবে।

এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশিদের আইনি পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে কথা বলেছে ফ্রান্সের প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত শীর্ষস্থানীয় এনজিও ‘ফ্রন্স তেখ দাজিল’-এর প্যারিস-১৮ অঞ্চলের সার্ভিস বিভাগের প্রধান রোমেন ফ্লাবিয়ান-এর সঙ্গে।

ইইউ তালিকা মানা ফ্রান্সের জন্য কী বাধ্যতামূলক?

রোমেন ফ্লাবিয়ান : ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই তালিকা ফ্রান্সের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। ফ্রান্সে আশ্রয় সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে অফপ্রা (ফ্রান্সের শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি সুরক্ষা দপ্তর)।

ফরাসি আইনের কোড L.121-13 অনুযায়ী অফপ্রা তার পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে স্বতন্ত্রভাবে কোন দেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করবে । বর্তমানে অফপ্রা-এর তালিকায় বাংলাদেশ নেই যদিও ইউরোপীয় কমিশনের তালিকায় এবার বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে।

‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার মানদণ্ডগুলো কী?

রোমেন ফ্লাবিয়ান : ফরাসি আইন ও ইউরোপীয় নির্দেশনায় বলা হয়েছে—একটি দেশকে তখনই ‘নিরাপদ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যখন সেখানে আইনত সুরক্ষা কার্যকর; রাজনৈতিক নিপীড়নের ঝুঁকি সামগ্রিকভাবে অনুপস্থিত; সামগ্রিকভাবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এবং যৌন অভিমুখ যাই হোক না কেন সেখানে কখনোই নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণ বা অপমানজনক শাস্তি করা হয় না এবং সশস্ত্র সংঘাতের সময়ও সেখানে সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতার সাধারণ কোনো হুমকি থাকে না।

বাংলাদেশ যদি ফ্রান্সে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় তাহলে কী ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন আশ্রয়প্রার্থীরা ?

রোমেন ফ্লাবিয়ান: বাংলাদেশ যদি ভবিষ্যতে ফ্রান্সের নিজস্ব ‘নিরাপদ দেশের’ তালিকায় যুক্ত হয়, তাহলে আশ্রয় প্রক্রিয়ার ওপর বেশ কিছু বাস্তবিক পরিবর্তন আসবে।

তা হলো—
(ক)আশ্রয় আবেদন দ্রুততর ও সরলীকৃত পদ্ধতিতে (দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া) অফপ্রা মূল্যায়ন করবে;

(খ) অফপ্রা তখন মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন খতিয়ে দেখতে বাধ্য থাকবে;

(গ) আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে আবেদনকারী সিএনডিএ-তে (শরণার্থী আপিল আদালত) আপিল করতে পারবেন ঠিকই তবে সেই আপিল স্থগিতাদেশমূলক হবে না (স্থগিত-অযোগ্য আশ্রয় প্রক্রিয়া);
ফলে আপিল চলাকালীনও তাকে ফ্রান্স ত্যাগের নির্দেশ (ওকিউটিফ) দেওয়া হতে পারে।

ফ্রান্স কি বিগত এক দশকের ভিতরে কখনও বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল?

রোমেন ফ্লাবিয়ান : ফ্রান্সের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত(কনসাই দ্যু এ্যাতা) ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছিল। আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে—বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর সহিংসতা, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার মতো বিষয়গুলো।

রোমেন ফ্লাবিয়ান আরো বলেন “এই পর্যবেক্ষণ আজও পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি। তাই ফ্রান্সের আইন প্রণেতারা যদি এসব বিষয় বিবেচনায় নেন তাহলে বাংলাদেশকে নিজেদের নিরাপদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এখনো সতর্ক থাকতে পারেন।

নিরাপদ দেশ হিসেবে ঘোষণা হলে বাংলাদেশের আশ্রয় প্রার্থীদের সব আবেদন কি প্রত্যাখ্যান হবে?

রোমেন ফ্লাবিয়ান : না; একেবারেই নয়। বাংলাদেশ নিরাপদ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও অফপ্রা (ফ্রান্সের শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি সুরক্ষা দফতর) প্রতিটি আবেদনকারীর ব্যক্তিগত পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেয়। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তিনি দেশে ফেরত গেলে নিপীড়নের শিকার হবেন তাহলে সেই ব্যক্তির সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগ ভবিষ্যতে খোলা থাকবে ।

নিউজটি শেয়ার করুন