১২:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

গাড়ির অভাবে কমে গেছে পুলিশের টহল কার্যক্রম।

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০১:৩৬:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে।

গাড়ির অভাবে কমে গেছে পুলিশের টহল কার্যক্রম। এক বছর আগে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকালে বেশ কিছু থানা ও পুলিশের বিপুলসংখ্যক যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়। তারপর থেকেই দেশজুড়েই পুলিশ বিভাগ তীব্র গাড়ি সঙ্কটে ভুগছে। ফলে যানবাহনের অভাবে সম্ভব হচ্ছে না যথাযথ নাগরিক সেবা দেয়া। থানা পুলিশের টহলসহ নিয়মিত কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি অপরাধের খবরে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি নিয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলেও পৌঁছতে পারছে না। পুলিশের প্রায় সকল ইউনিটের কাজই প্রয়োজনীয় বাহন না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার যানবাহন সংকট নিয়েই পুলিশ বাহিনীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। তাতে রেসপন্স টাইম বেশি লাগার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমও ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুলিশ বাহিনীতে বর্তমানে ৪ হাজার ৪৪৭টি যানবাহনের ঘাটতি রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেলের ঘাটতি ৩ হাজার ৪৯৭টি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুলিশের প্যাট্রোল ডিউটিতে এ বাহনটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। তাছাড়া ডাবল কেবিন পিকআপেরও ঘাটতি রয়েছে। যা দিয়ে টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জরুরি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ ধরনের মোট ৫০৭টি গাড়ির সংকট রয়েছে। তাছাড়াও সর্বমোট ৪৪৩টি এসইউভি (স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকল) বা জিপ গাড়িরও পুলিশ বাহিনীতে ঘাটতি রয়েছে। এসইউভি বা জিপ শ্রেণীর গাড়িগুলো সাধারণত এএসপি থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবহার করে থাকে। যারা মূলত জেলা বা উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা এবং অভিযানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকেন।বর্তমানে বিদ্যমান যানবাহন দিয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে থানাগুলোর রুটিন ডিউটি চালানো। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মোটরসাইকেল ও ডাবল কেবিন পিকআপ সংকটের কারণে। প্যাট্রোল ডিউটি পরিচালনায় মফস্বল এলাকায় কোথাও অপরাধ সংঘটিত হওয়ার খবর পেলে প্রথমে মোটরসাইকেল নিয়ে সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) এবং কনস্টেবল পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) বা পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা কনস্টেবল সঙ্গে নিয়ে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাবল কেবিন পিকআপ গাড়ি সংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজন হলেও অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকালে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে সব মিলিয়ে ১ হাজার ১৪৬টি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাতে ২৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

সূত্র আরো জানায়, থানার কার্যক্রম ক্ষমতার পালাবদলের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও গাড়ির অভাবে কমে গেছে পুলিশি টহল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ রোধে সবসময়ই সংশি­ষ্ট থানা এলাকায একাধিক পুলিশ টিমকে টহলে থাকতে হয়। যেকোনো অপরাধ বা দুর্ঘটনার খবরে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ থানায় যানবাহন সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে এ কার্যক্রম। ইতিপূর্বে রাজধানীর যেসব থানায় সাত-আটটি গাড়ি ছিল, সেখানে এখন দুই-তিনটি আছে। ফলে এখন সম্ভব হচ্ছে না গাড়ির প্যাট্রোল ডিউটি। তবে ওই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে রাজধানীর থানাগুলোতে মোটরসাইকেল দিয়ে টিম করে ডিউটির কাজ চলছে। এজন্য অবশ্য রেসপন্স টাইম বেশি লাগছে। আগে যেখানে খবর পাওয়ার ৭-১০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে যেত, এখন সেটা ২০ মিনিট ছাড়িয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাড়া দিতে আধা ঘণ্টাও সময় লাগছে। গাড়ি সংকট এর প্রধান কারণ।এদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জানান, যানবাহনের ঘাটতি পূরণের জন্য কাজ করা হচ্ছে। গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন ইউনিটে গাড়ি দেয়া হচ্ছে। থানা পুলিশকে যেকোনো ঘটনার খবরে প্রথম এগিয়ে যেতে হয়। তাই থানাগুলোর অগ্রাধিকার বেশি। যানবাহনের ঘাটতি নিরসনে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক রয়েছে।

অন্যদিকে এ বিষে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানান. ঈুলিশ বাহিনীতে আগে থেকেই যানবাহন সংকট ছিল। গত ৫ আগস্টের আগে-পরে অনেক যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ সংকট আরো তীব্র হয়। অফিসারদের গাড়ির অবশ্য অতটা সংকট নেই। কারণ বিগত ১৫ বছরে বহু বিলাসবহুল গাড়ি কেনা হয়েছে। আর ওসব গাড়ি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্তও হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাঠপর্যায়ের গাড়িগুলো। অভিযানের জন্য ওসব গাড়িই বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি ফোর্স পরিবহনের জন্য ট্রাক, বাস দরকার। এখন এক থানার গাড়ি দিয়ে অন্য থানায় সাপোর্ট দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু নির্বাচনের সময় সব থানারই গাড়ি প্রয়োজন হবে। যানবাহন সংকট তাই পুলিশের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরির কারণ হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

গাড়ির অভাবে কমে গেছে পুলিশের টহল কার্যক্রম।

আপডেট সময়ঃ ০১:৩৬:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

গাড়ির অভাবে কমে গেছে পুলিশের টহল কার্যক্রম। এক বছর আগে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকালে বেশ কিছু থানা ও পুলিশের বিপুলসংখ্যক যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়। তারপর থেকেই দেশজুড়েই পুলিশ বিভাগ তীব্র গাড়ি সঙ্কটে ভুগছে। ফলে যানবাহনের অভাবে সম্ভব হচ্ছে না যথাযথ নাগরিক সেবা দেয়া। থানা পুলিশের টহলসহ নিয়মিত কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি অপরাধের খবরে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি নিয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলেও পৌঁছতে পারছে না। পুলিশের প্রায় সকল ইউনিটের কাজই প্রয়োজনীয় বাহন না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার যানবাহন সংকট নিয়েই পুলিশ বাহিনীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। তাতে রেসপন্স টাইম বেশি লাগার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমও ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুলিশ বাহিনীতে বর্তমানে ৪ হাজার ৪৪৭টি যানবাহনের ঘাটতি রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেলের ঘাটতি ৩ হাজার ৪৯৭টি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুলিশের প্যাট্রোল ডিউটিতে এ বাহনটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। তাছাড়া ডাবল কেবিন পিকআপেরও ঘাটতি রয়েছে। যা দিয়ে টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জরুরি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ ধরনের মোট ৫০৭টি গাড়ির সংকট রয়েছে। তাছাড়াও সর্বমোট ৪৪৩টি এসইউভি (স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকল) বা জিপ গাড়িরও পুলিশ বাহিনীতে ঘাটতি রয়েছে। এসইউভি বা জিপ শ্রেণীর গাড়িগুলো সাধারণত এএসপি থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবহার করে থাকে। যারা মূলত জেলা বা উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা এবং অভিযানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকেন।বর্তমানে বিদ্যমান যানবাহন দিয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে থানাগুলোর রুটিন ডিউটি চালানো। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মোটরসাইকেল ও ডাবল কেবিন পিকআপ সংকটের কারণে। প্যাট্রোল ডিউটি পরিচালনায় মফস্বল এলাকায় কোথাও অপরাধ সংঘটিত হওয়ার খবর পেলে প্রথমে মোটরসাইকেল নিয়ে সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) এবং কনস্টেবল পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) বা পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা কনস্টেবল সঙ্গে নিয়ে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাবল কেবিন পিকআপ গাড়ি সংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজন হলেও অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকালে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে সব মিলিয়ে ১ হাজার ১৪৬টি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাতে ২৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

সূত্র আরো জানায়, থানার কার্যক্রম ক্ষমতার পালাবদলের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও গাড়ির অভাবে কমে গেছে পুলিশি টহল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ রোধে সবসময়ই সংশি­ষ্ট থানা এলাকায একাধিক পুলিশ টিমকে টহলে থাকতে হয়। যেকোনো অপরাধ বা দুর্ঘটনার খবরে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ থানায় যানবাহন সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে এ কার্যক্রম। ইতিপূর্বে রাজধানীর যেসব থানায় সাত-আটটি গাড়ি ছিল, সেখানে এখন দুই-তিনটি আছে। ফলে এখন সম্ভব হচ্ছে না গাড়ির প্যাট্রোল ডিউটি। তবে ওই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে রাজধানীর থানাগুলোতে মোটরসাইকেল দিয়ে টিম করে ডিউটির কাজ চলছে। এজন্য অবশ্য রেসপন্স টাইম বেশি লাগছে। আগে যেখানে খবর পাওয়ার ৭-১০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে যেত, এখন সেটা ২০ মিনিট ছাড়িয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাড়া দিতে আধা ঘণ্টাও সময় লাগছে। গাড়ি সংকট এর প্রধান কারণ।এদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জানান, যানবাহনের ঘাটতি পূরণের জন্য কাজ করা হচ্ছে। গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন ইউনিটে গাড়ি দেয়া হচ্ছে। থানা পুলিশকে যেকোনো ঘটনার খবরে প্রথম এগিয়ে যেতে হয়। তাই থানাগুলোর অগ্রাধিকার বেশি। যানবাহনের ঘাটতি নিরসনে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক রয়েছে।

অন্যদিকে এ বিষে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানান. ঈুলিশ বাহিনীতে আগে থেকেই যানবাহন সংকট ছিল। গত ৫ আগস্টের আগে-পরে অনেক যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ সংকট আরো তীব্র হয়। অফিসারদের গাড়ির অবশ্য অতটা সংকট নেই। কারণ বিগত ১৫ বছরে বহু বিলাসবহুল গাড়ি কেনা হয়েছে। আর ওসব গাড়ি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্তও হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাঠপর্যায়ের গাড়িগুলো। অভিযানের জন্য ওসব গাড়িই বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি ফোর্স পরিবহনের জন্য ট্রাক, বাস দরকার। এখন এক থানার গাড়ি দিয়ে অন্য থানায় সাপোর্ট দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু নির্বাচনের সময় সব থানারই গাড়ি প্রয়োজন হবে। যানবাহন সংকট তাই পুলিশের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরির কারণ হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন