দাখিলে বিভাগের সেরা, তবু মেলেনি সরকারি অনুমোদন

- আপডেট সময়ঃ ১১:৫২:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
- / ৫৪ বার পড়া হয়েছে।

ফল আর প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে সাফল্য শুধু নয়, শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেও তার ন্যায্য মর্যাদা পাচ্ছে না হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলাধীন দক্ষিণ দৌলতপুর হযরত শাহজালাল লতিফিয়া আইডিয়াল মাদ্রাসা। এমনটাই দাবি করছেন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা। চলতি শিক্ষাবর্ষে সিলেট বিভাগের সেরা ফল এই মাদ্রাসার।
এখানকার শিক্ষকরা জানান, প্রতিবছর তারা সেরা হন। কাগজ-কলমে সেই স্বীকৃতি পান না। এক যুগ পার করে ১৩ বছরে পা রাখা দক্ষিণ দৌলতপুর হযরত শাহজালাল লতিফিয়া আইডিয়াল মাদ্রাসা শুধু নবীগঞ্জ নয়; দাখিল পরীক্ষায় বরাবরই সিলেট বিভাগের মাদ্রাসার মধ্যে অন্যতম। এ পর্যন্ত ফলের দিক দিয়ে সিলেট বিভাগে তিনবার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মাদ্রাসার সুপার মুফতি মুজিবুর রহমান জানান, এ প্রতিষ্ঠানের সরকারি নিবন্ধন না থাকায় প্রতিবছর পার্শ্ববর্তী রুস্তমপুর নয়মৌজা সুন্নিয়া সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসার নামে তাদের পরীক্ষা দিতে হয়। তাই কাগজপত্রের স্বীকৃতি আসে ওই মাদ্রাসার নামে। অথচ এ সাফল্যের নেপথ্য কারিগর দক্ষিণ দৌলতপুর হযরত শাহজালাল লতিফিয়া আইডিয়াল মাদ্রাসার শিক্ষকরা। নিজেদের ও শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমের স্বীকৃতি পেতে তাই সরকারি নিবন্ধনের দাবি জানান তারা।
সদ্য প্রকাশিত এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষার ফলে মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে অংশগ্রহণ করে বিরল রেকর্ড স্থাপন করেছে অনুমোদনহীন নবীগঞ্জ উপজেলার এই মাদ্রাসা। তারা এবারও সিলেটের মধ্যে সেরা হয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলায় ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে আউশকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ দৌলতপুর হযরত শাহজালাল লতিফিয়া আইডিয়াল মাদ্রাসা। বর্তমানে এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৫০। আলিয়া মাদ্রাসার পাশাপাশি হিফজ শাখাও চালু রয়েছে এখানে। ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি হিফজ শাখায় অধ্যয়নরত রয়েছে ৭০ জন।
মাদ্রাসার সুবিশাল ক্যাম্পাসে রয়েছে চার তলাবিশিষ্ট ভবন। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা আবাসিক ব্যবস্থাপনায় থেকেই পাঠ গ্রহণ করেন। তাদের পাঠদানে সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ২৮ জন শিক্ষক। অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা মুফতি মুজিবুর রহমান নিজেই।
এই মাদ্রাসা থেকে এবার দাখিল ষষ্ঠ ব্যাচে ২৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১১ জন এ প্লাসসহ শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা। নিজেদের নামে অনুমোদন না থাকায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন পাশের রুস্তমপুর সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার নামে। যে কারণে প্রতিষ্ঠানের নিজের অর্জিত রেকর্ড হয় অন্যের নামে। ৬ কেদার (১৮০ শতাংশ) জমির ওপর স্থাপিত ক্যাম্পাসে মাদ্রাসাটির অবস্থান। কাগজপত্রে সামান্য জটিলতায় এখনও অনুমোদন সম্ভব হয়নি।
অধ্যক্ষ মাওলানা মুফতি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা সেরা হই কিন্তু কাগজ-কলমে স্বীকৃতি পাই না। আগামীতে আমাদের মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণি পর্যন্ত (এইচএসসি) পাঠদানের প্রস্তুতি রয়েছে। অচিরেই কাগজপত্র মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অনুকূলে জমা দেওয়া হবে। ফলের নিরিখে দ্রুতই অনুমোদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উপজেলার ১৭টি অনুমোদিত মাদ্রাসার ফল গতবারের চেয়ে নিম্নমুখী। নতুন আঙ্গিকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরীক্ষার ফল মূল্যায়নে গভীর পর্যবেক্ষণকে দায়ী করছেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তবে নিজেদের সাফল্যের ধারা ঠিকই অব্যাহত রেখেছে আউশকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ দৌলতপুর হযরত শাহজালাল লতিফিয়া আইডিয়াল মাদ্রাসা।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা, ভূমিদাতা সদস্য মো. কুদ্দুছ মিয়া বলেন, প্রথমে এলাকার মানুষের সহযোগিতায় নিজস্ব ৪০ শতক জায়গায় মাদ্রাসাটি গড়ে তোলেন। পরে ধীরে ধীরে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসায় এখন অনেক বড় হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি নিবন্ধন হয়ে গেলে আরও উন্নত হবে। মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য কাজল মিয়া জানান, তারা স্বেচ্ছায় সব কাজ করেন। সবাই মিলে একটি পরিবার। এভাবেই প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাচ্ছে। পরিচালনা কমিটির সদস্য বাছিত মিয়া বলেন, মাদ্রাসাটি প্রতিবছর উপজেলার সেরা হয়। এবার সিলেটের সেরা হয়েছে। সব শিক্ষক আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদান করেন। তাদের ও শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমের প্রতি সম্মান জানিয়ে হলেও প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরণের দাবি জানান তিনি।
শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ১৭টি মাদ্রাসা থেকে ৮৮০ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। ৬৬১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পরিসংখ্যান ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ফলে দেখা যায়, সৈয়দপুর বাজার ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ৬৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয় ৫১ জন। একটি এ প্লাসসহ পাসের হার ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। তাহিরপুর আলীম মাদ্রাসায় ৩১ শিক্ষার্থীর মাধ্যে ২৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। একটি এ প্লাসসহ পাসের হার ৯০ দশমিক ৩২ শতাংশ। হযরত জালাল (রহ.) আলীম মাদ্রাসা থেকে ৩৯ জন অংশগ্রহণ করে ২৯ জন উত্তীর্ণ হয়। একটি এ প্লাসসহ তাদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দিনারপুর ফুলতলী গাউছিয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৫৫ জনের মধ্যে ৪৬ জন উত্তীর্ণ হয়। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং রুস্তমপুর সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৭৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ প্লাস ১২টি এবং পাসের হার ৭৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।
রুস্তমপুরের এই ১২টি এ প্লাসের মধ্যে ১১টি এসেছে হযরত শাহজালাল লতিফিয়া আইডিয়াল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের হাত ধরে। এই মাদ্রাসা থেকে এবার দাখিল ষষ্ঠ ব্যাচে ২৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১১ জন এ প্লাসসহ শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা।