০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাফলংয়ের সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান যে নারী ‘জমিদারের’ গ্রামে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ১১:৩৩:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে।

সিলেটের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ের সৌন্দর্যের আরেক রূপ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী খাসিয়াদের গ্রাম বা খাসিয়াপুঞ্জি। পান-সুপারি-ফলের বাগানই সেখানকার বাসিন্দাদের ধ্যানজ্ঞান। এক সময় পুঞ্জিতে শুধু খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোক বাস করলেও এখন অনেকটা বদলে গেছে দৃশ্যপট। এখন সেখানে দেখা পাওয়া যায় বাঙালিদেরও। এক গ্রামেই এখানে মিলেমিশে থাকেন হিন্দু, মুসলিম, খিষ্টান, বৌদ্ধসহ সব ধর্মের মানুষ। তাদের এই সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন যে মানুষটি তিনি নেরুলা থেংসন। বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ এই খাসিয়া নারীকে স্থানীয়রা জমিদার বলেই ডাকেন এবং তাঁর সব নির্দেশ মেনে চলেন।

খাসি বা খাসিয়া সম্প্রদায় একটি স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা তাদের মধ্যে প্রচলিত। প্রথাগতভাবে বাংলাদেশে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত। বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিককে এখনও খাসিয়ারা জমিদার বলেই ডাকেন। পৈতৃকসূত্রে সংগ্রামপুঞ্জি পুরো গ্রামেরই মালিক নেরুলা থেংসন। তাঁর মাধ্যমেই ওই পরিবার উপজেলা তপশিল অফিসে জমির খাজনাও দেয়। গোয়াইনঘাট ইউএনও রতন কুমার অধিকারী সমকালকে বলেন, জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হলেও খাসিয়াদের মধ্যে প্রথাগতভাবে জমিদারি পদ্ধতি বহাল রয়েছে। যিনি বিশাল সম্পদের মালিক তাঁকে জমিদার বলে প্রজারা মানেন। নতুন সংগ্রামপুঞ্জিসহ অনেক পুঞ্জি রয়েছে গোয়াইনঘাট সীমান্তে। এর মধ্যে নেরুলা থেংসনকে সংগ্রামপুঞ্জির মানুষ জমিদার মানেন।

জাফলংয়ের পাঁচটি পুঞ্জির একটি ‘নতুন সংগ্রামপুঞ্জি’। এর ভেতর আজমেরি বস্তি নামে একটি বস্তি রয়েছে। গত বছর ৫ আগস্টের পর পুঞ্জি-সংলগ্ন ডাউকি ও পিয়াইন নদীর বালু-পাথর লুটপাট নিয়ে যখন কাড়াকাড়ি শুরু হয়; তখন পুঞ্জিবাসী তা রক্ষার লড়াই করেন। সম্প্রতি সরেজমিন তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। সংগ্রামপুঞ্জির নদীর পার এলাকার বালু-পাথর এখনও সংরক্ষিত থাকলেও অপর পারের দৃশ্যপট দেখা গেছে ভিন্ন।

স্থানীয় লন্ডনি বাজারে কথা হয় সংগ্রামপুঞ্জির বাসিন্দা মধ্য জাফলং ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি সামসু মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর দাদার বাড়ি কুমিল্লা। জন্ম জাফলংয়ে। পুঞ্জিতে বসবাস করছেন অনেক বছর ধরে। জমিদার কোনো ভাড়া নেন না। উল্টো বিপদে-আপদে সহায়তা করেন, এগিয়ে আসেন।

প্রায় ৩০০ একর জায়গা নিয়ে নতুন সংগ্রামপুঞ্জি ও আজমেরি বস্তির অবস্থান পিয়াইন ও ডাউকি নদীর জিরো পয়েন্ট এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নতুন সংগ্রামপুঞ্জির মূল জমিদার ছিলেন করণপতি থেংসন। তাঁর মৃত্যুর পর মেয়ে নেরুলা থেংসন দায়িত্ব নেন। তাঁকে সহায়তা করেন ভাগনে স্টালিন তারিয়ান। বর্তমানে স্টালিনই পুঞ্জির দেখভাল করেন। নেরুল থেংসন বাইরের কারও সঙ্গে দেখা করেন না। এ ছাড়া বর্তমানে ব্যক্তিগত কাজে তিনি ভারতে আছেন।

খাসি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সেক্রেটারি স্টালিন তারিয়ান এক সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। স্টালিন বলেন, আমরা নিজেদের সম্পদ ধরে রাখার পাশাপাশি পুঞ্জির বাসিন্দাদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি গুরুত্ব দিই। পুঞ্জির আয় প্রসঙ্গে তিনি জানান, বছরে সুপারি থেকে ২০ লাখ আয় হয় আমাদের। একইভাবে পানসহ অন্যান্য ফসল থেকে আয় হয়। যারা কাজ করেন তারা আলাদা মজুরি পান।

জানা গেছে, সংগ্রামপুঞ্জিতে বর্তমানে ৪৫টি খ্রিষ্টান, ৯৩টি মুসলিম ও ৭৫টি হিন্দু পরিবার বাস করছে। বিভিন্ন ধর্মের লোক হলেও তাদের অবস্থান অন্য পুঞ্জি বা এলাকা থেকে আলাদা। এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে ইউপি সদস্য ও ‘জমিদার’ পক্ষের ব্যবস্থাপক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘জমিদার সবাইকে এক নজরে দেখেন। ঈদে কোরবানির জন্য পশু দান করেন। একইভাবে হিন্দুদের উৎসবেও অর্থ দেন। অনেক সময় ঘরও নির্মাণ করে দেন দরিদ্রদের।’

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন