সাগরপথে ইউরোপ যাত্রায় শীর্ষে বাংলাদেশ

- আপডেট সময়ঃ ১১:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
- / ৮৫ বার পড়া হয়েছে।

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করা অভিবাসনপ্রত্যাশী দেশের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ৯ হাজার ৭৩৫ জন বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রন্টেক্সের হিসাবে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুট ব্যবহার করে ইউরোপে ঢোকা বাংলাদেশির সংখ্যা ৯২ হাজার ৪২৭ জন।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য বলছে, বিগত এক যুগে অন্তত ৭০ হাজার বাংলাদেশি এই বিপজ্জনক পথে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। যাত্রাপথে বহু মানুষ বন্দি হয়েছেন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমনকি প্রাণও হারিয়েছেন। তবু এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা থেমে নেই।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, এইভাবে ইতালি যাওয়ার পথে বহু মানুষ নিপীড়নের শিকার হন। লিবিয়ায় তাঁদের বন্দি করে নির্যাতনের পর পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এই যে বিদেশে কাজ বা শ্রম অভিবাসনের নামে মানবপাচার, এটি ভয়াবহ সমস্যা। পাচারকারীরা এখন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সেই তুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পিছিয়ে, আবার মামলাগুলোর বিচারও হচ্ছে না।’
একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, যারা সাগরপথে ইউরোপে যাচ্ছেন, তাঁদের বড় অংশের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। সুনামগঞ্জ, সিলেট, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ অন্তত ১০-১২টি জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ এই পথে যাত্রা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকের গ্রুপ এখন পাচারকারীদের নতুন হাতিয়ার। দেশে ফিরে অনেকেই মামলা করলেও আসামিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ব্র্যাকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, এই পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করা অধিকাংশ ব্যক্তির পরিবার স্থানীয় দালালের প্রলোভনে পা দেন। ৬০ শতাংশ পরিবারকে ভালো চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, অথচ বাস্তবে ৮৯ শতাংশ কোনো কাজ পাননি। উল্টো, ভয়াবহ নির্যাতন ও মানবেতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন তারা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা থেকে দুবাই ও মিসর হয়ে লিবিয়া গেছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। অনেকে আবার ইস্তামবুল, কাতার, সিরিয়া হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছেছেন। সেখানেই শুরু হয় বন্দিজীবন। ৬৩ শতাংশ যাত্রী বন্দি হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ রাখা হয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পে। এই বন্দিদের ৭৯ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন, ৬৮ শতাংশ চলাফেরার স্বাধীনতা হারান। প্রতি তিনজনের একজন তিন বেলা খাবার পাননি। ২২ শতাংশ দিনে মাত্র একবেলা খাবার পেয়েছেন।
২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, মানবপাচার আইনে নতুন করে ১ হাজার ৩৪টি মামলা হয়েছে। এর পাশাপাশি আগের মামলাসহ মোট ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬০টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৪৬টি এখনো তদন্তাধীন এবং ৩ হাজার ১৪টি বিচারাধীন।
মানবপাচার প্রতিরোধে ২০১২ সালে সরকার আইন প্রণয়ন করলেও মামলার বিচারে অগ্রগতি খুবই সীমিত। যেসব মামলার রায় হয়েছে, তার বেশিরভাগেই আসামিরা খালাস পেয়েছেন।
না.গঞ্জের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো খায়রুল হককেনা.গঞ্জের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো খায়রুল হককে
৩০ জুলাই (বুধবার) বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানব পাচারবিরোধী দিবস। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে দিনটিকে মানব পাচার বিরোধী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এবারের প্রতিপাদ্য—‘সংঘবদ্ধ অপরাধ মানবপাচার, বন্ধ হোক শোষণের অনাচার।’
ভবিষ্যৎ অভিবাসন ব্যবস্থাকে নিরাপদ, পরিকল্পিত ও মানবিক করতে হলে এই ভয়াবহ মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।